আগমন: ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বুধবার চার্লস ও কাতসুমি। নিজস্ব চিত্র
জার্সি হাতে নেওয়ার পর কেমন যেন আনমনা মনে হল তাঁকে। কয়েক সেকেন্ডের অপেক্ষা। সম্বিত ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই লাল-হলুদ জার্সিটা পরে নিলেন মুহূর্তে। তারপর সোনালি ঝাঁকড়া চুলের ইউসা কাতসুমির মুখ থেকে বেরোলো, ‘‘মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বিতে খেলতে নামার আগে হৃদয়টা তো একটু কাঁদবেই।’’ কথা বলার সময় দেখা গেল তাঁর ডান হাতটা তখন সত্যি সত্যিই হৃদপিন্ডের উপর রাখা।
কাতসুমি মানেই সবুজ-মেরুন জার্সি। তেরো বছর পর গঙ্গাপাড়ের ক্লাবকে আই লিগ দেওয়ার অন্যতম নায়ক তিনি। অধিনায়কত্ব করেছেন একশো আঠাশ বছরের পুরানো ক্লাবে। এই সে দিনও কলকাতা লিগ চলার সময় মোহনবাগান গ্যালারিতে দেখা গিয়েছে বহু ‘কাতসুমি’ লেখা জার্সি পরে হাজির সমর্থককে।
গত চার বছর যে দলকে হারানোর জন্য তাঁর কাছে আবদার করতেন সমর্থকরা, এ বার সেই দলেই নাম লিখিয়েছেন জাপানি মিডিও। টোলগে ওজবে, বেলো রাজ্জাকের পর আবার দুই প্রধানের ময়দানী দলবদলে হাজির বদলা বদলির সেই ছবি। কেমন লাগছে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে নাম লিখিয়ে? ম্লান একটা হাসি খেলে যায় তাঁর মুখ। ‘‘আমার সঙ্গে কথা বলেছিল আই লিগ বা আই এস এলের কিছু ক্লাব। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ভাল প্রস্তাব দিয়েছিল। অন্য জায়গায় খেললে যে চ্যালেঞ্জটা নিতে পারতাম না, সেটা নেব বলেই এই জার্সি পরলাম। অন্য কোনও জায়গায় খেললে এই উত্তেজনাটা থাকত না। এত সমর্থক পিছনে থাকত না। তবে এটা ঠিক লিগে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নামার সময় একটু অস্বস্তি তো শুরুতে লাগবেই,’’ বলার পাশাপাশি নিজেই টেনে আনেন ডার্বি প্রসঙ্গ। বলে দেন, ‘‘শিলিগুড়িতে ডার্বি হলে ইস্টবেঙ্গল সমর্থক বেশি থাকে। সল্টলেকে ফিফটি ফিফটি। এটা পাব কোথায়?’’ কথা শুনলেই বোঝা যায় কাতসুমি পুরানো আবেগ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন আপ্রান। পাশাপাশি মনসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন ইস্টবেঙ্গলে কিছু করে দেখানোর।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয় এ বার তো পাশে পাবেন না সনি নর্দেকে। তাঁকে আটকাবেনই বা কী করে? কাতসুমি বলে দেন, ‘‘সনি খুব বড় ফুটবলার। ওকে আটকানো কঠিন। তবে আমরা সবাই মিলে ওদের আটকাবো। হারাবো। আই লিগ জিততেই তো এখানে আসা।’’
আরও পড়ুন: আতঙ্কের কিছু নেই, মত জিজুর
পাশে বসে রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার চার্লস ডি’সুজা। চেন্নাইয়ান সিটি এফ সি-র হয়ে আই এস এলে খেলছেন গত মরসুমে। এ বারের আই লিগে উইলিস প্লাজার এবং চার্লস জুটির উপর বাজি রাখতে চলেছেন লাল-হলুদ কোচ খালিদ জামিল। ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া সাংবাদিক সম্মেলনে সেই চার্লসের জন্য যত প্রশ্ন হল তাঁর তিন গুণ হল কাতসুমির জন্য। বাগানের প্রাক্তনী স্বীকার করলেন, দুই প্রধানের এ বারের টিম নিয়ে কোনও ধারণা নেই তাঁদের।
‘‘মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের কোনও খেলা দেখিনি। তবে মোহনবাগানের কোচ ও সহকারী কোচ তো পুরানো। আর খালিদ জামিলের কোচিংয়ে তো আমি কখনও খেলিনি। সবে দু’দিন হল এসেছি।’’ কাতসুমির পাশে বসে চার্লস অবশ্য বললেন, ‘‘ইউ টিউবে ইস্টবেঙ্গলের কলকাতা লিগের কিছু খেলা দেখেছি। ডার্বি সম্পর্কেও শুনেছি। সবাই তো বলছে বিশ্বের সেরা ডার্বি না কি এখানে হয়!’’ ক্লাব সচিবের হাত থেকে নতুন জার্সি নেওয়ার পর উত্তেজিত হয়ে বলে দেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার।
কাতসুমি এবং চার্লস দু’জনেই অবশ্য জানিয়ে দিলেন, দীর্ঘ দিন না পাওয়া আই লিগ খেতাব জেতার জন্যই নাম লিখিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলে। চার্লস কখনও কলকাতায় খেলেননি। তাই তিনি বেশি কিছু না বললেও কাতসুমি কিন্তু জানিয়ে দিলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল চোদ্দো বছর যেমন আই লিগ পায়নি। মোহনবাগানও তো দু’বছর তা জেতেনি।’’ জাপানি বোমার কথাতেই স্পষ্ট নিজেকে ফের প্রমান করার জন্য তিনি কতটা মরিয়া।