টেনিস বলে খেলে গতি বেড়েছে, মত খলিলের

তিনি রাজস্থানের বাঁ-হাতি পেসার খলিল আহমেদ। জ়াহির খান, আশিস নেহরা, ইরফান পাঠানের পরে ভারতীয় দলে নিজের স্থান পাকা করতে পারেননি, বারিন্দর স্রান, জয়দেব উনাদকাটরা।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৭
Share:

নজরে: সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া পেসার খলিল। —ফাইল চিত্র

এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়ার পরে একটা কথা শোনা যাচ্ছে তাঁর মুখে— ‘‘ছোট জায়গায় যারা জন্মায়, তাদের স্বপ্ন অনেক বড় হয়।’’ তিনি রাজস্থানের বাঁ-হাতি পেসার খলিল আহমেদ। জ়াহির খান, আশিস নেহরা, ইরফান পাঠানের পরে ভারতীয় দলে নিজের স্থান পাকা করতে পারেননি, বারিন্দর স্রান, জয়দেব উনাদকাটরা। এ বার আরও এক বাঁ-হাতি পেসারের কাছে খুলে গিয়েছে ভারতীয় দলের রাস্তা।

Advertisement

রাজস্থানের টঙ্ক শহর থেকে উঠে এসেছেন তিনি। যা জয়পুর থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দূরে। বাবা খুরশিদ আহমেদ, একটি স্থানীয় হাসপাতালের কম্পাউন্ডার। মা শিনা আহমেদ গৃহবধূ। টেনিস বলে ছেলের বোলিং দেখে তাঁর বাবাই খলিলকে স্থানীয় কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করেন। হয়তো এই দিনটার স্বপ্ন দেখেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খুরশিদ।

এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়ার পরে আনন্দবাজারকে ফোনে খলিল বলেন, ‘‘বাবার জন্যেই এই দিনটা দেখতে পাচ্ছি। কখনও খেলতে বারণ করেননি আমাকে। বাবাই আমার জন্মদিনে টেনিস বল উপহার দিয়েছিলেন। আর সেই টেনিস বলে খেলেই নিজের মধ্যে একজন পেসারকে খুঁজে পেয়েছিলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজস্থানের মাটি শুষ্ক। তাই টেনিস বল অনেকটাই জোরের ওপর ছাড়তে হয়। না হলে ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলা যায় না। এখনও সেই অভ্যেস যায়নি। ডিউস বলেও তাই অনায়াসে ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বল করতে পারি।’’

Advertisement

২০ বছর বয়সি এই পেসারের উত্থানের নেপথ্যে রয়েছেন ভারতের আরও এক বাঁ-হাতি পেসার। তিনি জ়াহির খান। খলিলের কাছে জ়াহিরই অনুপ্রেরণা। তাঁর কাছ থেকেই ইনসুইং বলটি রপ্ত করেছেন এই তরুণ পেসার।

‘গুরু’কে নিয়ে খলিল বলেন, ‘‘জ়াহির ভাইয়ের প্রশিক্ষণ না পেলে আমি হয়তো লাল বলেও টেনিস বলের বোলারই হয়ে থাকতাম। শুরুর দিকে আমার বল সুইং করত না। শুধু পেস ছিল। তবে ব্যাটসম্যানেরা আমাকে সমীহ করত। কিন্তু ২০১৬ আইপিএল মরসুমে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে সুযোগ পেতেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। সেখানেই জ়াহির ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। ওঁর কাছে দু’বছর প্রশিক্ষণ পেয়ে আমি এখন অন্য বোলার হয়ে উঠেছি।’’

ছেলের ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার কথা শুনে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন খলিলের মা শিনাদেবী। তিন মেয়ে ও এক ছেলের সংসার আরও উজ্জ্বল করে তুলেছেন তাঁর ছোট ছেলেটি। মায়ের কান্না দেখে নিজের চোখের জলও আর ধরে রাখতে পারেননি খলিল। বলেন, ‘‘আসলে অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় পৌঁছেছি। মা, বাবা ও আমার দিদিদের সমর্থন না পেলে কোনও ভাবেই নীল জার্সিটা পরে খেলার স্বপনপূরণ হত না। আজ শুধু আমি একাই ভারতীয় দলে সুযোগ পাইনি। আমার মা, বাবাও পেয়েছেন।’’

রঞ্জি ট্রফির অভিজ্ঞতা সে ভাবে নেই খলিলের। মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১৭ ম্যাচে ২৮টি উইকেট রয়েছে তাঁর। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ১২ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৭টি উইকেট। সেখান থেকেই সুযোগ হয়েছে দেওধর ট্রফিতে। সেখানেও দুরন্ত পারফরম্যান্স তাঁর। সম্প্রতি চার দলীয় সিরিজের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে উসমান খোয়াজাকে আউট করেছিলেন খলিল। সামনে এ বার এশিয়া কাপ। যদিও খলিল বলছেন, ‘‘এশিয়া কাপ আমার শেষ লক্ষ্য নয়। আমার লক্ষ্য ২০১৯ বিশ্বকাপ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন