প্রথম ম্যাচ থেকেই জিততে চান লাল-হলুদের নতুন কোচ, এলেন গার্সিয়াও

শেষ পর্যন্ত কথা রাখলেন খালিদ

বুধবার পড়ন্ত বিকেলে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া সাংবাদিক সম্মেলনে এসে খালিদ জামিল যখন লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চাপিয়ে এসে বলছিলেন, ‘‘লাল-হলুদ জার্সি আর সমর্থকদের টানেই ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করতে এসেছি।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৬:০৭
Share:

দায়িত্বে: ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে নতুন কোচ খালিদ জামিলের প্রথম সাংবাদিক বৈঠক। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ফুটবলার জীবনে অন্তত দু’বার তিনি ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের কথা দিয়েও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গিয়েছেন। লাল-হলুদ জার্সি পড়েননি।

Advertisement

বুধবার পড়ন্ত বিকেলে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া সাংবাদিক সম্মেলনে এসে খালিদ জামিল যখন লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চাপিয়ে এসে বলছিলেন, ‘‘লাল-হলুদ জার্সি আর সমর্থকদের টানেই ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করতে এসেছি।’’ তখন সে দিনের আশাহত কর্তাদের মুখগুলো আই লিগ জয়ী কোচের চেয়েও উজ্জ্বল মনে হচ্ছিল।

অবনমন থেকে উঠে আসা আইজল এফ সি-কে ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের মানচিত্রে সেরার জায়গা করে দেওয়ার পর শেষ পর্যন্ত কলকাতার চ্যালেঞ্জটা নিতে অবশ্য প্রায় দেড় মাস সময় নিয়েছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার। বলছিলেন, ‘‘ফুটবলার হিসাবে কলকাতায় খেলতে পারিনি বলে কোনও দুঃখ নেই। তবে এটা আমার কাছে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ বলতে পারেন।’’ এক বছরের চুক্তিতে ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নেওয়ার পরও বছর চল্লিশের খালিদ অবশ্য বদলাননি। উড়ে আসা কড়া প্রশ্নের জবাবেও দিয়েছেন নির্বিষ উত্তর। ইস্টবেঙ্গল চোদ্দ বছর আই লিগ পায়নি, আপনার লক্ষ্য কি? ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচের উত্তর, ‘‘প্রথম ম্যাচ জেতা।’’ দেশের কনিষ্ঠতম আই লিগ জয়ী কোচ হলেও মিডিয়ার সঙ্গে সখ্যতা কোনওদিনই নেই খালিদের। তাঁকে ফোনেও পাওয়া যায় কালেভদ্রে। সরাসরিই বলে দিলেন, ‘‘আমার কাছে কোনও চাপই চাপ নয়।’’

Advertisement

সাত বছর মুম্বই এফ সি-কে কোচিং করিয়েছেন। অনেক অঘটন ঘটিয়েছেন। আবার বাঁচিয়েছেন অবনমন থেকেও। অন্য দিকে পাহাড়ি ক্লাব হিসাবে আইজলকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করে ইতিহাস গড়েছেন—কিন্তু কোনওদিনই কোনও বিতর্কিত কথা বলেননি। কোনওদিন তাঁকে উচ্ছ্বাসেও ভাসতে দেখা যায়নি। নিজেকে সংযত রাখাই তাঁর সেরা ইউ এস পি। ইস্টবেঙ্গলের তাঁকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ এটাও।

আইএসএল এবং আই লিগ নিয়ে বিতর্ক এখনও চলছে। আপনার কাছেও তো আইএসএলের ক্লাবের প্রস্তাব ছিল তা সত্ত্বেও আই লিগের টিম ইস্টবেঙ্গলে এলেন? শুনে হেসে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আইএসএলের প্রস্তাব ছিল ঠিক। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব আমার কাছে ভাল ছিল। আর আমার কাছে দু’টো টুনার্মেন্টই সমান।’’

ক্লাবে এসেই টিম নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন টিমের দায়িত্বে থাকা তিন প্রাক্তন ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় ও তুষার রক্ষিতের সঙ্গে। সেখানে ছিলেন সহকারি কোচ রঞ্জন চৌধুরীও। রাত পর্যন্ত সেই আলোচনা চলে। বিদেশি নিয়ে আলোচনা হয়। ক্লাব সূত্রের খবর, পাঁচ বিদেশির নিয়ম আই লিগে চালু হলে একজন ডিফেন্ডার, দুই মিডিও এবং দুই স্ট্রাইকার চান তিনি। আইজলের মিডিও মামুদ আমনাকে ইতিমধ্যেই সই করিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। পুরানো দলের স্ট্রাইকার আলফ্রেডকেও নেওয়ার কথা কর্তাদের বলেছেন খালিদ। আইজলকে চ্যাম্পিয়ন করার ব্যাপারে যে দুই স্বদেশী ফুটবলারের অবদান ছিল সেই আশুতোষ মেহতা ও জয়েস রানের নাম দিয়েছেন খালিদ, তাঁর পেশ করা তালিকায়। সঙ্গে গোলকিপার অ্যালবিনো গোমসকেও চাইছেন তিনি। বলেও দিলেন, ‘‘আশুতোষ আর জয়েস আসতেও পারেন ইস্টবেঙ্গলে।’’ ক্লাব সূত্রের খবর, ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্বে থাকা অ্যালভিটো ডি’কুনহা ইতিমধ্যেই খালিদের পছন্দের ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন।

তাঁর হাতে এ দিন ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তি থাকা এবং চুক্তি হওয়া ফুটবলারের তালিকা তুলে দেওয়া হয়। খালিদ চাইছেন জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অনুশীলনে নেমে পড়তে। সব ফুটবলারকে দেখার পর আবাসিক শিবির করবেন কী না সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। সব কিছু আলোচনা করলেও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে খালিদ অবশ্য কিছু বলেননি। বলে দেন, ‘‘আলোচনা করছি। এখনও কিছু ঠিক হয়নি।’’

ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে এ দিন ঘোষণা করা হয়, টিমের ম্যানেজার হিসাবে দলের সঙ্গে বর্তমান মরসুমে পাকাপাকিভাবে থাকবেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। খালিদের সঙ্গে বাইরে টিম খেলতে গেলে তিনিও যাবেন। ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় আপাতত থাকবেন গোলকিপারদের দেখভালের দায়িত্বে। তবে খালিদের মতোই ইস্টবেঙ্গল এ দিন আরও একটি চমক দিয়েছে। মোহনবাগানের গত কয়েক বছরের সাফল্যের অনুঘটক ব্রাজিলিয়ান ফিজিও মিরান্দা গার্সিয়াকে তুলে নিল ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, ‘‘খালিদের সঙ্গে প্রাক মরসুম অনুশীলনে থাকবেন গার্সিয়া।’’ লাল-হলুদ কর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের তুলনায় অনেক অনেক কম খরচে খালিদকে সই করিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন