আইজলের কোচ হতে চেয়েছিলেন খালিদ জামিলই

গত বছর মরসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুম্বই এফসি কর্তারা খালিদ জামিল-কে নিজেদের দফতরে ডেকে বলেছিলেন, ‘‘পরের মরসুমে আপনাকে আমারা কোচ হিসেবে ভাবছি না।’’ এই মরসুমে সেই ব্রাত্য খালিদের কোচিংয়েই ভারতীয় ফুটবলে রূপকথার উত্থান আইজল এফসি-র।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

আইজল শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১১
Share:

প্রত্যাবর্তন: সাফল্যের রাস্তায় খালিদ জামিল। নিজস্ব চিত্র

গত বছর মরসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুম্বই এফসি কর্তারা খালিদ জামিল-কে নিজেদের দফতরে ডেকে বলেছিলেন, ‘‘পরের মরসুমে আপনাকে আমারা কোচ হিসেবে ভাবছি না।’’ এই মরসুমে সেই ব্রাত্য খালিদের কোচিংয়েই ভারতীয় ফুটবলে রূপকথার উত্থান আইজল এফসি-র।

Advertisement

মুম্বই এফসি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে দু’বছর। তার পরে সিনিয়র দলের টানা সাত বছর প্রধান কোচের দায়িত্বে। ন’বছরের সম্পর্ক যে এ ভাবে শেষ হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারেননি খালিদ। অপমানের জবাব দিতেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন আইজল এফসি-র। বাকিটা ইতিহাস।

তবে মুম্বই এফসি-র প্রসঙ্গ উঠলেই বদলে যায় শান্তশিষ্ট খালিদের অভিব্যক্তি। বলেন, ‘‘গত বছর মরসুম শেষ হওয়ার পর আমাকে এক দিন ডেকে পাঠালেন মুম্বই এফসি-র কর্তারা। আমি ভাবলাম, পরের মরসুমের দল গঠন নিয়ে আলোচনা করতেই হয়তো ডেকেছেন। কিন্তু আমাকে অবাক করে ওঁরা বললেন, আপনাকে আর কোচিং করাতে হবে না। এত অপমানিত জীবনে কখনও হইনি। তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, এর জবাব আমাকে মাঠে নেমেই দিতে হবে।’’

Advertisement

মুম্বই থেকে সোজা আইজল। আরব সাগরের তীর থেকে পাহাড়ে— কী ভাবে সম্ভব হল? খালিদ শোনালেন আশ্চর্য কাহিনি। বললেন, ‘‘আইজল এফসি কিন্তু আমাকে কোচিং করানোর প্রস্তাব কোনও দিন দেয়নি। আমি নিজেই ক্লাবের মালিক রবার্ট রয়তে-কে অনুরোধ করে বলেছিলাম, আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। উনি সেই সুযোগটা দিয়েছেন। রবার্ট স্যারের ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না।’’

মুম্বই এফসি থেকেই আশুতোষ মেটা, জয়েশ রানে, অ্যালবিনো গোমেজ-কে আইজলে নিয়ে এসেছেন খালিদ। এ বছর দুর্দান্ত সাফল্যে নেপথ্যে এই তিন তারকার অবদানও প্রচুর।

আরও পড়ুন...
সাফল্য না পেলে সরতে হবে: সঞ্জয় বলছেন সঞ্জয়

মোহনবাগানকে হারানোর এক দিন পরেও উৎসব চলছে আইজল শহর জুড়ে। ব্যতিক্রম খালিদ। তিনি বলছেন, ‘‘মোহনবাগানকে হারিয়েছি বলে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ও-ই ম্যাচটা অতীত হয়ে গিয়েছে। মনে রাখতে হবে, লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচটা এখনও বাকি আছে। এখন মনঃসংযোগ নষ্ট হলেই বিপদ।’’ এই কারণেই রবিবার সকালেই রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামে লাজং-বধের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছিলেন তিনি। মহম্মদ আল আমনা, আলফ্রেড জারিয়ান-দের ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করিয়ে খালিদ বলছেন, ‘‘ম্যাচের পরের দিন রিকভারি সেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

মাত্র কয়েক মাসেই আইজলবাসীদের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিশে গিয়েছেন খালিদ। শিখেছেন মিজো ভাষাও। বলেছেন, ‘‘কোচিং করাতে সুবিধে হবে বলেই মিজো ভাষা শিখেছি। খুব ভাল অবশ্য বলতে পারি না। কিন্তু কাজ চলে যায়।’’

আইজল এফসি খেতাব প্রায় নিশ্চিত করার দিনেই তলিয়ে গিয়েছে মুম্বই এফসি। প্রথম বার অবনমন বাঁচাতে ব্যর্থ মুম্বইয়ের দলটি। আপনার নিশ্চয়ই দারুণ আনন্দ হয়েছিল, দুরন্ত জয়ের পাশাপাশি মুম্বই এফসি পতনের খবর শুনে? খালিদ বলছেন, ‘‘কখনওই না। কোচ হিসেবে মুম্বই এফসি-ই আমাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। ন’বছর ক্লাবটার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। খারাপ লাগছে।’’ আর অপমানের জবাব? ‘‘আই লিগটা তো আগে জিততে দিন,’’ বলে দিলেন খালিদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন