হাসতে হাসতে জিতল রে

গত রবিবার এই ইডেনেই তো কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দেওয়া রোলারকোস্টার চলেছিল। আর এই রবিবার ইডেনে যেটা হয়ে গেল? রোলারকোস্টার নয়। এটা তো নরম বিছানায় আমেজের ভাতঘুম!

Advertisement

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

সহজ কাজ শেষ করে। -উৎপল সরকার

দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ৯৮ (১৭.৪ ওভারে)

Advertisement

কলকাতা নাইট রাইডার্স ৯৯-১ (১৪.১ ওভারে)

Advertisement

টি-টোয়েন্টি তা হলে এমনও হয়!

গত রবিবার এই ইডেনেই তো কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দেওয়া রোলারকোস্টার চলেছিল। আর এই রবিবার ইডেনে যেটা হয়ে গেল? রোলারকোস্টার নয়। এটা তো নরম বিছানায় আমেজের ভাতঘুম!

লড়াই-ফড়াই কিচ্ছু নয়। বিপক্ষকে দুমড়ে দেওয়া, সেটাও বা হল কোথায়? পাড়ার দাদাদের ক্রিকেট খেলার শখ, কিন্তু টিম করার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় পাড়ার খুদেদের দিয়ে টিম করিয়ে তাদের বলে বলে হারানো— রবিবারের দিল্লি বনাম কলকাতা ম্যাচটা অনেকটা সে রকম। যে ম্যাচের একমাত্র উত্তেজক মুহূর্ত বি ব্লকের আশেপাশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আবির্ভাব, সেই ম্যাচ কেমন হয়ে থাকতে পারে, বোঝাই যাচ্ছে।

আইপিএল নাইনের নিলাম-উত্তর দিল্লি ডেয়ারডেভিলস মালিকদের নিয়ে একটা জোক হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে গিয়েছিল। দিল্লির মালিক অটো-ভাড়া নিয়ে কী ভাবে দরদাম করেন? অটো চালক বলেন, দশ টাকা ভাড়া। দিল্লি মালিকের হুঙ্কার, চল্লিশ টাকার চেয়ে এক পয়সা কম দেব না।

ভারতের হয়ে সাকুল্যে একটা ম্যাচ খেলা আনকোরা পবন নেগিকে তিরিশ লক্ষ বেস প্রাইসের কয়েকশো গুণ বেশি দামে, মাত্র সাড়ে আট কোটিতে কিনেছিল দিল্লি। আর এক তরুণ ভারতীয়, করুণ নায়ারের দাম তাঁরা দেন চার কোটি! সব মিলিয়ে ক্রিকেট চুটকুলার জন্য আদর্শ টিম। আইপিএল শুরুর আগেও যেমন, আইপিএল নাইনে তাদের প্রথম আবির্ভাবের পরেও তাই। রবিবার তাদের পারফরম্যান্স এতটাই জঘন্য যে, সেই নিরিখে কেকেআরের বিচার করতে বসলে ঘরের ছেলেদের অসম্মান করা হবে।

তবু বলা দরকার, এই যে বারবার বলেও পছন্দমতো পিচ পাওয়া যায়নি, বারবার বলেও উইকেটের ঘাস পুরো ছাঁটা যায়নি, এই যে সুনীল নারিনকে ছাড়া প্রথম ম্যাচে নামতে হয়েছে, এ সবের পরেও ন’উইকেটে ম্যাচ জয় দেখিয়ে দিল, কেকেআর টিমটা সর্বংসহা। তাদের যে পরিস্থিতিতে ফেলবেন, সেখান থেকেই লেটার মার্কস নিয়ে বেরিয়ে আসবে। স্পিন-ভারী টিমকে পেসারের স্বপ্নের পিচ দিন, তারা অনভিজ্ঞ অস্ট্রেলীয় পেসার খেলিয়ে ম্যাচ বের করে নেবে। প্রধান স্পিন অস্ত্রকে হাত থেকে কেড়ে নিন, তারা চল্লিশোর্ধ্ব স্পিনারকে বিপক্ষের দিকে লেলিয়ে দেবে।

আইপিএল ইতিহাসে দুর্ভাগ্যের দিক থেকে যদি সবচেয়ে ধারাবাহিক হয়ে থাকে দিল্লি, তা হলে সফল স্ট্র্যাটেজির বিচারে ধারাবাহিকতার নাম কলকাতা নাইট রাইডার্স। নাইট-প্রথা মেনে এ বারের নিলামেও কোনও শিরোনামযোগ্য প্লেয়ার তোলেনি কেকেআর ম্যানেজমেন্ট। তুলেছে কলিন মানরো, জন হেস্টিংসের মতো অনামীদের। এবং আরও এক বার দেখিয়ে দিয়েছে, কেন এই টিমটাকে আইপিএল স্পেশ্যালিস্ট বলে ধরা হয়।

না হলে ব্যাটিং-বন্ধু পিচেও কী ভাবে বিপক্ষকে একশোর কমে আটকে রাখা সম্ভব? কী ভাবে এক ওভারে বিপক্ষের একজোড়া ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন আন্দ্রে রাসেল? জন হেস্টিংস, তিনিও নাইট জার্সিতে প্রথম আবির্ভাবে যথেষ্ট উজ্জ্বল। ২.৪ ওভারের মধ্যে একটা মেডেন, মাত্র ৬ রান দিয়ে দুটো উইকেট— যে কোনও পেসারের স্বপ্নের বোলিং গড়। পীযূষ চাওলা-ব্র্যাড হগরা তো ছিলেন, আছেন, থাকবেন। টিম যখনই বিপদে পড়বে, এঁদের স্মরণ করবেন গম্ভীর, আর এঁরা ঠিক রক্ষা করে দেবেন।

রবিবার যদিও রক্ষা করার মতো অবস্থায় পড়তেই হয়নি নাইটদের। বিপক্ষ টিমের ক্রিকেট দেখে এক বারের জন্যেও মনে হয়নি যে, এদের মেন্টরের নাম রাহুল শরদ দ্রাবিড়। আনকোরা প্লেয়ার ভর্তি টিমে নিশ্চিত ভরসা হিসেবে ধরা যেতে পারে, এমন নাম প্রায় নেই বললেই চলে। বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ফাইনালের নায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েট টাটকা তারকা হয়ে গিয়েছেন বটে, কিন্তু টানা ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা কি তাঁর আছে? এ দিন পীযূষ চাওলার গুগলিতে যে শটটা খেলতে যাচ্ছিলেন, দ্রাবিড়ের মার্কশিটে তাঁর গোল্লা পাওয়ার কথা।

শুধু ব্রেথওয়েট কেন। ব্যাটিং ট্র্যাকে গোটা দিল্লি ব্যাটিং লাইন আপ যা খেল দেখাল, দেখে দ্রাবিড়ের কোচিং করানো ভারতের যুব দলও লজ্জা পাবে। কুইন্টন ডে কক শুরুটা খারাপ করেননি, কিন্তু কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ব্যাটিং বিস্ফোরণের মেয়াদ যদি মাত্র দু’ওভার হয়, তা হলে ব্যাটিং স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসা উচিত। শ্রেয়স আইয়ার গত বছর ভাল খেলেছিলেন। এ দিনের পর তাঁর আইপিএল স্ট্যাটসে একটা ম্যাচ বাড়ল, রান বাড়ল না। সাড়ে আট কোটির পবন নেগি মেরেকেটে সাড়ে আট মিনিটও টিকলেন কি না, দেখা হল না।

ম্যাচটা আসলে অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। দিল্লি যখন দশ ওভারে ৫৫-৫, প্রায় তখনই। তার পর যা যা হয়েছে, স্রেফ নিয়মরক্ষা। রবিন উথাপ্পা আর গৌতম গম্ভীর যে ওপেনিং জুটি হিসেবে আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করলেন, দুই ওপেনারই যে স্বচ্ছন্দে তিরিশের গণ্ডি (টি-টোয়েন্টিতে হাফসেঞ্চুরি সম) পেরোলেন, দিনের শেষে এগুলোকে ম্যাচ প্র্যাকটিস ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না। দুটো টিমের ক্রিকেটে এত বেশি পার্থক্য যে, বিপক্ষকে সত্যি সত্যিই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী একটা টিম হিসেবে মেনে নিতেই কষ্ট হচ্ছে।

রবিবারের পর বরং মনে হচ্ছে, কেকেআরের আইপিএল এখনও শুরুই হয়নি। ওটা হবে আগামী বুধবার। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-রোহিত শর্মা-ইডেন... ওই দিন অন্তত সমানে-সমানে একটা লড়াই হোক!

স‌ংক্ষিপ্ত স্কোর: দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ১৭.৪ ওভারে ৯৮ (হগ ৩-১৯, রাসেল ৩-২৪, হেস্টিংস ২-৬), কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৪.১ ওভারে ৯৯-১ (গম্ভীর ৩৮ ন.আ, উথাপ্পা ৩৫)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন