দুরন্ত: ওয়াংখেড়েতে ক্রুণাল পাণ্ড্য অনেকটা দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরলেন আন্দ্রে রাসেলের ক্যাচ। যা কার্যত হারিয়ে দিল কেকেআরকে।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের ইনিংসের বয়স যখন ৫.২ ওভার, তখন হার্দিক পাণ্ডের বলে ক্যাচটা ছেড়েছিলেন মায়াঙ্ক মার্কণ্ডে। ওই সময় মনে হচ্ছিল, আতঙ্কের মুম্বইয়ে হয়তো এ বার অন্তত জিতে ফিরবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু ওই মার্কণ্ডের একটা ওভারে ম্যাচটা ঘুরতে শুরু করল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দিকে। আর আন্দ্রে রাসেলের আউটের পরে ম্যাচটা পুরো বেরিয়ে গেল। মুম্বইয়ের চার উইকেটে ১৮১ স্কোর তাড়া করতে নেমে কেকেআর শেষ পর্যন্ত করল ৬ উইকেটে ১৬৮।
আইপিএল অনেক ক্রিকেটারকে জিরো থেকে হিরো বানিয়েছে। আবার অচেনা কোনও মুখকে এক মুহূর্তে নায়কও বানিয়ে দিয়েছে। অজানা, অচেনা মার্কণ্ডেকে নিয়ে যেটা ঘটল। দুনিয়া জুড়ে যারা আইপিএল দেখছেন, তাঁদের সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে পরিচয় ঘটে গেল ২১ বছর বয়সি এই লেগস্পিনারের। একবার ক্যাচ ফেলে, একবার উইকেট তুলে।
আইপিএলের ইতিহাসে কেকেআরের কাছে ওয়াংখেড়ের চেয়ে দুঃস্বপ্নের মাঠ বোধহয় আর নেই। সেই ২০১২ সালে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচ জেতার পরে বাকিটা হারের কাহিনি। রবিবারের ম্যাচেও ছবিটা বদলাল না। রান তাড়া করে উথাপ্পা-নীতীশ রানা যখন খেলছিলেন, ম্যাচটা নাইটদের হাতে ছিল। কিন্তু দু’টো বলে খেলাটা ঘুরে গেল।
প্রথমটা ওই মার্কণ্ডের করা। ১৩ নম্বর ওভারের তৃতীয় বল। যখন ছোট্ট একটা লেগব্রেক বলকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅফে ধরা পড়লেন উথাপ্পা। দ্বিতীয়টা ১৭ নম্বর ওভারের চতুর্থ বল। যশপ্রীত বুমরার শর্ট ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে অনসাইডে ক্যাচ তুলেছিলেন রাসেল। শর্ট ফাইন লেগ থেকে পিছনে দৌড়ে অসাধারণ ক্যাচটা নিলেন ক্রুণাল পাণ্ড্য। আইপিএলের অন্যতম সেরা ক্যাচ। পিছনে দৌড়ে ক্যাচ ধরা সব সময় কঠিন। ক্রুণালের কৃতিত্ব হল, কখনও বল থেকে চোখ সরাননি।
উথাপ্পা আউট হওয়ার পরেও নাইটরা ম্যাচে ছিলেন। কারণ রাসেল তখনও ডাগআউটে। কিন্তু ক্রুণালের ওই ক্যাচই কলকাতাকে পুরোপুরি ম্যাচ থেকে ছিটকে দিল। মুম্বইয়ের ফিল্ডাররা দু’টো ক্যাচ (১৯ নম্বর ওভারে কার্তিকের ক্যাচও ফেলেন জে পি ডুমিনি) ছাড়লেন ঠিকই, কিন্তু এমন একটা ক্যাচ ধরলেন, যেটা ম্যাচই পুরোপুরি ঘুরিয়ে দিল।
ম্যাচ জিতিয়ে মুম্বইকে প্লে-অফের দৌড়ে রেখে দিলেন পাণ্ড্য ভাইয়েরা। ক্রুণাল দুরন্ত ক্যাচ নিলেন। আর শেষ ওভারে আটকে দিলেন দীনেশ কার্তিককে। আর হার্দিক তো ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার। তবে ব্যাটিংয়ের চেয়েও হার্দিকের বোলিংটা আমার বেশি ভাল লেগেছে। নাকল বল করলেন, স্লোয়ারটা ভাল দিলেন, বাউন্সারটাও কাজে লাগালেন। আগের ম্যাচে কেকেআরের নায়ক শুভমান গিল ওই রকম একটা স্লোয়ার বুঝতে না পেরেই আউট হয়ে গেলেন।
অনেকে হয়তো বলবেন, ফিনিশার কার্তিক কী করলেন? যদি ফিনিশার হিসেবে পরিণতই হয়ে ওঠেন, তা হলে এ সব পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বার করবেন না কেন? একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই। ক্রিস লিন, আন্দ্রে রাসেল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের মতো বিশাল শট নেওয়ার ক্ষমতা কার্তিকের নেই। ফিল্ডারদের মধ্যে ফাঁক খুঁজে বা নিখুঁত টাইমিংয়ে চার মারতে পারেন। কিন্তু এক ওভারে দু’তিনটে ছয় মেরে ম্যাচ বার করছেন, এ রকম ঘটনা খুব একটা ঘটবে না। শ্রীলঙ্কার ওই ইনিংসটা ব্যতিক্রম হিসেবেই দেখতে হবে। কিন্তু তাও বলব, কেকেআর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কার্তিকই সব চেয়ে ছন্দে আছেন। রবিবার না পারলেও ম্যাচ শেষ করে আসার ক্ষমতা আছে নাইট অধিনায়কের।
তবে কার্তিক যে ভাবে পাওয়ার প্লে-তে বোলারদের ব্যবহার করলেন, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। প্রথম সাত ওভারের মধ্যে ছ’জন বোলার! কেউ থিতু হতেই পারলেন না। অন্য দিকে রোহিত খুব সুন্দর ভাবে বোলারদের কাজে লাগালেন। বুমরাকে ১৭ এবং ১৯ নম্বর ওভারে আনার কৌশল কিন্তু পুরোপুরি খেটে গেল।