আইপিএলে এ বার বেশ কতগুলো ম্যাচের ফয়সালা হল শেষ ওভারে, এমনকি শেষ বলেও। এক দিকে এটা যেমন আমায় অবাক করছে, অন্য দিকে এমনও মনে হচ্ছে এটাই তো হওয়ার ছিল। টুর্নামেন্টের আটটা দলই কিন্তু বাড়তি এক শতাংশ পারফরম্যান্স দেখাতে পারা ক্রিকেটারের খোঁজে থাকে। যে এক শতাংশ দলের হার আর জয়ের ফারাক গড়ে দেয়।
এর আগে অনেক বারই আমি বলেছি, আইপিএলে শীর্ষে থাকা দলের সঙ্গে পয়েন্ট টেবলে সবচেয়ে শেষে থাকা দলের পার্থক্য এতটাই কম, যা বিশ্বের অন্য কোনও ক্রিকেট লিগে দেখা যায় না। শুধু ক্রিকেট কেন, হয়তো অন্য খেলাধুলোতেও দেখা যায় না। আর এখন তো এই পার্থক্যটা আরও
কমে গিয়েছে।
আইপিএলে কিন্তু কমে গিয়েছে চমকে দেওয়ার মতো উপাদানও। এমনকী প্রথম বার এই টুর্নামেন্টে নামছে এমন কোনও ক্রিকেটার সম্পর্কেও এখন সহজেই তথ্য পাওয়া যায়। এর আগে কোথায় কোথায় সে খেলেছে, কী রকম পারফর্ম করেছে, সব বিশ্লেষণ করা যায়। ড্রেসিংরুমে তাই এখন একটা কথা আপনি শুনবেন না, ‘এই ক্রিকেটারকে নিয়ে আমরা বিশেষ কিছু জানি না....’। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচের মধ্যে দল যখন খুব চাপে রয়েছে, এই ব্যাপারটাই আবার কয়েক জন সিনিয়র খেলোয়াড়ের জন্য চ্যালেঞ্জে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়। কারণ, বিপক্ষ দল তখন জানে কোন জায়গাটা বা কোন শটটা ওই খেলোয়াড় মারতে ওস্তাদ। এই পরিস্থিতিতে ওই খেলোয়াড় যেটা সব চেয়ে প্রিয় সেই শটই মারার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাতে সেই খেলোয়াড়ের পরিকল্পনা আগেই ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
শুভমান গিল এবং শিভম মাভি ভীষণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ওদের দীর্ঘ এবং সফল ক্রিকেট কেরিয়ার না দেখলে আমি খুব আশ্চর্য হব। গিল এখনও পর্যন্ত যে দলের হয়েই খেলেছে সেখানে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। তবে ছয় বা সাত নম্বরেও যদি নামতে হয় ওকে, আমি নিশ্চিত সেখানেও সফল হওয়ার মতো ক্ষমতা ওর রয়েছে।
মাভির বোলিংয়ে প্রচুর গতি রয়েছে। যেটা দারুণ ব্যাপার। তবে সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচটায় খুব বেশি নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ ছিল না ওর সামনে। তবে আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে ওকে আরও অনেক ওভার বল করতে দেখব। প্রথম ম্যাচে জিতে যে ছন্দে এসেছিল আমাদের দল, সেটা টানা দুটো হারে হারিয়েছি আমরা। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধেও তো হারতে হল। এ রকম পারফরম্যান্স থেকে ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে এত কম রান নিয়েও যে ভাবে আমরা লড়াই করেছি, তার প্রশংসা করতেই হবে। প্রথমের দিকে কয়েকটা ম্যাচে হেরে গিয়ে টুর্নামেন্টের পরের দিকে আমরা চাপে পড়ে গিয়েিছ এমন কিন্তু আগেও হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে আমি আর পড়তে চাই না। তাই দ্রুত আমাদের জয়ের পথে ফিরতে হবে। এবং সেটা সোমবারের দিল্লি ম্যাচ থেকেই।
কোচিং কিন্তু রকেট-বিজ্ঞানের মতো গুরুগম্ভীর কোনও বিষয় নয়। আমাদের দেখতে হবে ক্রিকেটের প্রাথমিক বিষয়গুলো যেন ঠিক রাখা যায়। টুর্নামেন্টে এর পরে টানা সফরের ধকল কিন্তু সামলাতে হবে। পরপর ম্যাচের খেলার পরিশ্রমও রয়েছে। তবে এটার ইতিবাচক দিক হল, যদি আমরা জয়ের পথে ফিরে আসতে পারি, জয়ের ছন্দটা ধরে রাখতে পারি, তা হলে কঠিন সফরসূচিও দলের উপকারে আসে।