দু’জনেই নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার!
দু’জনেই ডেম্পোর জার্সিতে খেলেছেন!
কলকাতা লিগে দু’জনেই এখনও পর্যন্ত আট গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াইয়ে!
তবু দু’জনের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলটাই বোধহয় বড় একজন ময়দানের বড় ক্লাবের কোটি টাকার বিদেশি। অন্য জন, তথাকথিত ছোট ক্লাবের লাখ টাকার ফুটবলার। এবং এই দু’জনকে ঘিরেই এই মুহূর্তে ময়দানের যাবতীয় আলোড়ন!
এক জন, ইস্টবেঙ্গলের ডুডু ওমাগবেমি। অন্য জন, টালিগঞ্জ অগ্রগামীর কোকো সাকিবো।
মঙ্গলবার খেতাব জয়ের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবেন ডুডু আর কোকো। কে কাকে ছাপিয়ে যাবেন, কে হবেন কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা, সে কথা সময় বলবে। কিন্তু ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে কোকোর সঙ্গে কথা বলে মনে হল ডুডু-ডুয়েল নয়, তার আগে ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর জন্যই রীতিমতো তেতে আছেন। বলে দিলেন, “সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া আমার দ্বিতীয় লক্ষ্য। প্রথম লক্ষ্য, কলকাতা লিগ জেতা। কোচ সুব্রত বলেছেন, কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হলে আমরা ইতিহাস গড়ব। দলের সবাই তাই তেতে। ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে আমরা মুখিয়ে আছি।”
ডুডুও পাল্টা দিলেন। বললেন, “আমি আসার পরে সব ম্যাচই জিতেছি। এই ম্যাচটাও জিতে শেষ করতে চাই। সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া নিয়ে ভাবছি না। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সেটা স্বার্থপর ভাবনা। আমার গোলের থেকে অনেক বড় দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া।”
পাঁচ ম্যাচ খেলেই আট গোল। দু’টি হ্যাটট্রিক। ডুডুর এই পরিসংখ্যান কি জানা আছে? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন কোকো। হাসি থামিয়ে বললেন, “ডুডু ভাল প্লেয়ার। আমার ভাল বন্ধুও। ম্যাচের আগে ওকে ‘অল দ্য বেস্ট’ বলব। আমি জানি ডুডু-ও একই ভাবে আমাকে শুভেচ্ছা জানাবে। তবে মাঠের মধ্যে নব্বই মিনিট আমরা কিন্তু শুধুই প্রতিপক্ষ। যেখানে ডুডু, র্যান্টিদের টপকে যেতেই হবে আমাকে।”
কোকো যখন আর-ডি জুটিকে টপকে নিজেকে প্রমাণ করতে মুখিয়ে, তখন ডুডু বলছেন, “আর একটা ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হব, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে জয় ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় নাকি? সমর্থকরা আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমার কিন্তু নিজের সেরাটা দেওয়া এখনও বাকি!” বিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েই যেন কথাগুলো বললেন লাল-হলুদের নতুন ‘বোমা’।
ময়দানে এখনও সে ভাবে প্রতিষ্ঠা পাননি কোকো। ভাস্কো, ডেম্পো, ঈগল এফসি-তে খেলে ফেলেছেন। কিন্তু র্যান্টি-ডুডুদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। বোধহয় সে জন্যই নিজেকে প্রমাণ করার বাড়তি তাগিদ তাঁর। সেটা স্বীকারও করে নিলেন। “মঙ্গলবারের ম্যাচটা আমার কাছে বাড়তি চ্যালেঞ্জ। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য এ রকম একটা মঞ্চই দরকার। র্যান্টি-ডুডুরা তো বড় ক্লাবে খেলে। এক ম্যাচ খারাপ পারফরম্যান্স করলেও পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে। গোটা বছর অনেক ম্যাচ পাবে। কিন্তু আমার সামনে সে রকম সুযোগ নেই। তাই মঙ্গলবারের ম্যাচটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
আর-ডি জুটিকে আটকে সুব্রতও চাইবেন বাজিমাত করতে। কিন্তু সে সব নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না ডুডু। তাঁর দাবি, “টালিগঞ্জ নিঃসন্দেহে ভাল দল। ওদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। তবে আমরাও লড়ার জন্য মানসিক ভাবে তৈরি। অপেক্ষা শুধু মাঠে নামার। টানা জিতছি। ছন্দটা কোনও ভাবেই নষ্ট হতে দেব না।”
এখন দেখার, মঙ্গলবার কোকোর গোলে ৫৬ বছর পর টালিগঞ্জ ইতিহাস সৃষ্টি করে, না কি ডুডু- ধামাকায় টানা পঞ্চম বার কলকাতা লিগের দখল রাখে ইস্টবেঙ্গলই!