দু’টো টিমকে স্লেজ করতে দেখলেও অবাক হব না

আর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতার মালিকের টিম ও কলকাতার টিম মুখোমুখি আইপিএলে। সেই যুদ্ধের আগে বাংলার ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারি-র বিশ্লেষণ দুই টিম ও সেই ম্যাচ নিয়ে। শুনলেন রাজীব ঘোষকেকেআর যে টপ ফোরে যাবে, সেটা আইপিএল শুরুর আগেও বলেছিলাম, এখনও বলছি। ওরা সবচেয়ে ব্যালান্সড টিম। যেমন ভাল ব্যাটিং, তেমন বোলিং আর ফিল্ডিংও দুর্দান্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৫:১০
Share:

মোমেন্টাম কেকেআরের সঙ্গে

Advertisement

কেকেআর যে টপ ফোরে যাবে, সেটা আইপিএল শুরুর আগেও বলেছিলাম, এখনও বলছি। ওরা সবচেয়ে ব্যালান্সড টিম। যেমন ভাল ব্যাটিং, তেমন বোলিং আর ফিল্ডিংও দুর্দান্ত। এ ছাড়াও ম্যাচগুলোর মধ্যে বেশি গ্যাপ না থাকায় ওরা একটা মোমেন্টাম পেয়ে গিয়েছে। যেটা এই ফর্ম্যাটে বড় ফ্যাক্টর। ম্যাচগুলোর মধ্যে বেশি গ্যাপ থাকলে বরং মোমেন্টাম ধরে রাখা কঠিন হয়।

নতুন নারিন দুর্দান্ত

Advertisement

অ্যাকশন শুধরে এই ধরনের হাই প্রোফাইল টুর্নামেন্টে স্বমহিমায় ফিরে আসাটা বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জটা মনে হয় জিতে নিয়েছে নারিন। ও এখন লেগ কাট ধরনের বলগুলো বেশি করছে। ওর অফ স্পিনে যেহেতু নিষেধাজ্ঞা ছিল তাই সেটা করার ঝুঁকি নিচ্ছে না। বেশির ভাগই বাইরের দিকে বল করছে। প্রয়োজনে মাঝে মাঝে ভিতরে বল করছে। নাইট বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ইকোনমিক কিন্তু নারিনই।

তা ছাড়া, গম্ভীর যে ভাবে ওকে প্রোটেক্ট করে ব্যবহার করছে, তাও প্রশংসা করার মতো। কেকেআর ক্যাপ্টেন কিন্তু নারিনকে স্লগ ওভারে বল করাচ্ছে না। কারণ, স্লগে ব্যাটসম্যানরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। বড় স্ট্রোক নেওয়ার প্রবণতা থাকে। তখন বোলারের উপর খুব চাপ পড়ে যায়। আর এই চাপের মধ্যে বোলারদের জোরে বল করার প্রবণতা বাড়ে। নারিনের ক্ষেত্রে তা হলে ওর অ্যাকশনে ফের সমস্যা দেখা যেতে পারে। সে জন্যই ওকে বুদ্ধি দিয়ে আগলে রাখছে গম্ভীর।

তবে ও এখনও বেশি উইকেট পাচ্ছে না। কারণ, ইডেনের উইকেটে যতটা স্পিন হয় আর টার্ন পাওয়া যায়, অন্য মাঠে ততটা নয়। নারিন তো ইডেনে একটাও ম্যাচ খেলেনি। দলটা কলকাতায় ফিরুক। দেখবেন নারিন উইকেট পেতে শুরু করবে।

ব্যাটে গতি বাড়াক গম্ভীর

কেকেআরের ওপেনিং জুটি যে দলকে শুরু থেকেই একটা স্টেবিলিটি এনে দিচ্ছে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ফলে ওদের মিডল অর্ডার চাপে পড়ছে না। কিন্তু একটা জিনিস বলতেই হচ্ছে, গম্ভীরের স্ট্রাইক রেট (১২০.৮৫) কিন্তু আহামরি নয়। বরং রবিন উথাপ্পা বড় ইনিংস খেলতে বেশি বল নেয় না। এই ফর্ম্যাটে কিন্তু ভাল স্ট্রাইক রেটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখন নাইটরা বড় রান তাড়া করবে, তখন এই স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং শুরু করলে সমস্যা হতে পারে। ১৭৫-১৮০ চেজ করতে গেলে গতি বাড়াতে হবে গম্ভীরকে।

পুণের নিউক্লিয়াস ধোনি

শুক্রবারের হারে ওর কিছুটা দায় থাকা সত্ত্বেও বলব এমএস ধোনিই এই টিমের নিউক্লিয়াস। মাত্র চারটে ম্যাচ দেখে দলটা সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা করার ভুল করবেন না। কিন্তু দলে অনেক স্টার থাকলেও ম্যাচের দিন পারফরম্যান্সই এই ফর্ম্যাটে শেষ কথা। পুণের ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে না।

শুক্রবারের ম্যাচে যা হল, তাকে কিছুটা ভাগ্যের ফের বলতে পারেন। কেভিন পিটারসেনের ইনিংসের শুরুতেই চোট পেয়ে যাওয়া। রাহানের সঙ্গে সঠিক বোঝাপড়ার অভাবে স্টিভ স্মিথের রান আউট হওয়া। আর ধোনির আউট। বিরাট যে অসাধারণ থ্রো-এ রান আউটটা করল আর এবি ডেভিলিয়ার্স ধোনির যে অসাধারণ ক্যাচটা নিল, এতেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। এই ঘটনাগুলোই পুণেকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়।

আরসিবি বোলাররা এমএসের বিরদ্ধে এত ভাল লাইন আর লেংথ রেখে বল করল যে, ধোনিকে শট খেলতেই দেয়নি। তা ছাড়া উইকেটটাও ক্রমশ বড় শট খেলার পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে নেয় বোলাররা। এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলোই এই ফর্ম্যাটে বড় হয়ে দেখা দেয়। এ দিন যা হল। যে সময় বড় শট খেলা শুরু করছিল ধোনি, ঠিক সেই সময়ই ও আউট হয়ে গেল।

এমএস একটা সঠিক কম্বিনেশন সেট করার চেষ্টা করছে। সে জন্য দলের সবাইকে দেখে নিতে হচ্ছে ওকে। এ বার কেপি-র চোটের জন্য মিচেল মার্শকে নিশ্চয়ই ও দলে রাখবে। তাতে আর একটা বাড়তি বোলারের অপশনও পেয়ে যাবে। এ ভাবে যখন একটা ঠিকঠাক কম্বিনেশন পেয়ে যাবে ও, তখন আশা করি দলটা সাফল্যের রাস্তা পেয়ে যাবে। কে বলতে পারে রবিবারই সেই কম্বিনেশনটা পাওয়ার দিন কি না?

শুক্রবারের ম্যাচে পুণের যে ব্যাটিং অর্ডারটা ছিল, আমার মনে হয় সেটাই ঠিক আছে। এই অর্ডারে ১৭০-১৮০ তোলাটা কোনও ব্যাপারই নয়। কিন্তু সে জন্য তো ওদের ভাল ব্যাট করতে হবে। শেষের দিকে থিসারা পেরেরা এক ওভারে যে ভাবে ২৫ তুলল, তার পর মনে হতেই পারে যে, ওকে আগে ব্যাট করতে পাঠালেই ভাল হত। কিন্তু যেখানে স্কোরবোর্ড বলছে ১৮-৩ (কেপি সহ), আমি ক্যাপ্টেন হলেও ওই জায়গায় নিজেই নামতাম। সিএসকে-র মতো ভাল বোলিং ধোনি এই টিমে পায়নি। তবু আমার বিশ্বাস, এই বোলিংকেও কী করে আরও কার্যকর করে তোলা যায়, তা ও ভাল করে জানে।

রবিবার হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ

রবিবার একটা হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ দেখার আশা নিয়ে টিভির সামনে বসব। নাইটদের ধারাবাহিকতা বনাম ধোনির ক্যাপ্টেন্সির লড়াই হবে সে দিন। গম্ভীরেরও ধোনির কাছে অনেক কিছু প্রমাণ করার আছে বোধহয়। সেই জেদটাই নাইট ক্যাপ্টেনের মোটিভেশন হয়ে উঠতে পারে। আর ক্যাপ্টেন যদি মোটেভেটেড থাকে, তা হলে তার প্রভাব দলের অন্যদের মধ্যেও পড়ে। হাই ইন্টেনসিটির ম্যাচ হবে। তাই কড়া স্লেজিং হলেও অবাক হবেন না। কেকেআর একে আর পুণে সাতে থাকলেও এখন লিগ টেবলে অবস্থানটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবে তো লিগ শুরু হয়েছে। কাগজে কলমে কিছুটা হলেও কিন্তু এগিয়ে থাকবে ধোনির টিমই। এবং সেটা ওর ক্যাপ্টেন্সির জন্যই। এমএস যে ভাবে হ্যান্ডল করে প্লেয়ারদের, সেটাই এই টিমের সবচেয়ে বড় শক্তি। ও জানে কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হয়। শুক্রবারের ম্যাচের পরও আমি সেটাই বলব। অপেক্ষা করুন, এম এস ধোনির সেরাটা আসছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন