SIR in West Bengal

জীবিত হয়েও খসড়া তালিকায় ‘মৃত’! কেউ ছুটলেন নিজের ‘মৃত্যুর শংসাপত্র’ নিতে, কোথাও শো কজ় বিএলও-কে

কালনা পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কালীনগর পাড়া এলাকার বাসিন্দা পূর্ণ সাহাও খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’। নিজের মৃত্যুর শংসাপত্র তুলতে পুরসভায় হাজির হন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫৬
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

জীবিত হয়েও খসড়া ভোটার তালিকায় তাঁরা ‘মৃত’! রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এ রকমই অভিযোগ করছেন একের পর এক ভোটার। কোনও কোনও ভোটার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। কেউ আবার ছুটেছেন নিজের ‘মৃত্যুর শংসাপত্র’ নিতে। কোচবিহারে বিএলও, এইআরও-কে শো কজ় করা হয়েছে।

Advertisement

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হতেই শঙ্কিত বর্ধমান পুরসভার পঞ্জাবিপাড়ার বাসিন্দা মায়া দলুই। খসড়া তালিকায় তাঁকে মৃত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার বাসিন্দা মায়ার স্বামী, পুত্র, পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনিদের নিয়ে সংসার। সংসারের খরচ চালাতে প্রতিদিন দু’বেলা পরিচারিকার কাজ করেন। অথচ সেই মায়া এখন সরকারি খাতায় ‘মৃত’।

মায়া বলেন, “আমি এনুমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছি। সেই ফর্মে কোথাও মৃত কথাটা লেখা নেই। তবুও কী ভাবে আমাকে মৃত করে দেওয়া হল, বুঝতে পারছি না। আমি শুধু চাই, আমি যে জীবিত, সেটা মেনে নিয়ে কমিশন আমার নামটা ভোটার তালিকায় তুলে দিক।’’ ৪৮ নম্বর বুথের বিএলও দেবানন্দ চৌরাশিয়া বলেন, ‘‘খুব কম সময়ের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। এটা খসড়া তালিকা। মায়া দোলুইয়ের বিষয়টি আমি আমার সুপারভাইজারকে জানিয়েছি। আশা করছি, চূড়ান্ত তালিকায় এই ভুল আর থাকবে না।’’

Advertisement

মায়া দলুই নিজের ভোটার কার্ড দেখাচ্ছেন। — নিজস্ব চিত্র।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলছি, বিজেপির কথা মতো নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। গোটা বাংলায় একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এখানে একজন জীবিত মানুষকে মৃত দেখানো হয়েছে।” পাল্টা বিজেপি জেলা মুখপাত্র শান্তরূপ দে বলেন, “এসআইআর প্রক্রিয়াকে লঘু করা ও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য তৃণমূল নানা ভাবে চক্রান্ত করছে। বিজেপির বিএলএ-দের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। বুথে বুথে বেছে বেছে কিছু নাম রাখা হচ্ছে, আবার জীবিতদের মৃত দেখিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা চলছে।”

অন্য দিকে, কালনা পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কালীনগর পাড়া এলাকার বাসিন্দা পূর্ণ সাহাও খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’। নিজের মৃত্যুর শংসাপত্র তুলতে পুরসভায় হাজির হন তিনি। বলেন, “আমি জীবিত মানুষ। তবু আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে। তাই ডেথ সার্টিফিকেট নিতে এসেছি।’’ তাঁর পরিবার জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তিনি এনামুরেশন ফর্ম পূরণ করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, ফর্ম সংগ্রহের সময় সংশ্লিষ্ট বিএলও রিসিভ কপিতে তাঁকে মৃত বলে উল্লেখ করেন। পূর্ণের স্ত্রী নীরবী সাহার দাবি, বিএলও বাড়িতে এসে ফর্ম সংগ্রহ করেননি। অন্যত্র বসেই ফর্ম নেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে ফর্মে কী লেখা হয়েছে, তা ঠিক ভাবে খেয়াল করা সম্ভব হয়নি। পরিবারের আরও দাবি, তাঁরা খুব বেশি পড়াশোনা জানেন না, ইংরেজিতে কী লেখা রয়েছে তা বুঝতে পারেননি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএলও অনিতা প্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জীবিত ওই ব্যক্তিকে তাঁর কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি সন্দীপ বসু অভিযোগ করেন, চক্রান্ত করে বৈধ ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, এর নেপথ্যে বিজেপির হাত রয়েছে। কালনার মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন জানান, “বিষয়টি জানলাম। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

অন্য দিকে, কোচবিহারে খসড়া তালিকায় ভোটারকে ‘মৃত’ দেখানোয় বিএলও-কে শোকজ করল নির্বাচন কমিশন। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের ছাট এলাজন এলাকার বাসিন্দা অশ্বিনী অধিকারী এবং শিবানী অধিকারী নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এনুমারেশন ফর্ম জমা করলেও নির্বাচন কমিশনের খসড়া তালিকায় তাঁরা ‘মৃত’। এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় গোটা এলাকায়। অভিযোগ জানানো হয় নির্বাচন কমিশনে।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের স্পেশ্যাল রোল অবজারভার পঙ্কজ যাদব কোচবিহারে এসে প্রথমে ইআরও-দের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পরে সর্বদল বৈঠক করেন। পঙ্কজ জানান, বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। অনেক জায়গায় অনেকের নাম ওঠেনি আবার অনেকের নাম মৃত হিসাবে নথুভুক্ত হয়েছে। এই বিষয়গুলি নিয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এইআরও, বিএলও-কে শো কজ় করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement