শনিবার চণ্ডীগড়ে ডেভিস কাপ টাইয়ে লিয়েন্ডার পেজ ও রোহন বোপান্না দারুণ পারফরম্যান্স দেখাল ঠিকই। কিন্তু ওদের এই ফর্ম দেখে কেউ যদি ভাবেন অলিম্পিক্সেও ওরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে, দুঃখিত, তাঁদের সঙ্গে একমত হতে পারছি না।
অলিম্পিক্স অনেক কঠিন জায়গা আর সেই জায়গায় সাফল্য পেতে গেলে নিজেদের মধ্যে যে বোঝাপড়া আর পারফরম্যান্স থাকা দরকার, তা ওদের আছে বলে মনে হয় না আমার।
হ্যাঁ, শনিবার ওদের স্ট্রেট সেটে জয়ের পরেও এই কথা বলছি।
কারণ, এই ম্যাচে ওদের কাছে কোনও চ্যালেঞ্জই ছিল না। যতই হোক, রোহন ও লিয়েন্ডারের র্যাঙ্কিং আর কোরিয়ার ছেলেদের র্যাঙ্কিংয়ে অনেক তফাৎ। প্রচুর ফারাক দু’পক্ষের অভিজ্ঞতাতেও। কোরিয়ার সেরা তিন প্লেয়ারই যেখানে এই টাই খেলতে আসেনি, সেখানে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা হবে কোথা থেকে? তাই লিয়েন্ডারদের এই পারফরম্যান্স থেকে অলিম্পিক্স নিয়ে কোনও ধারণা করাটা কঠিন।
আবার বলছি, অলিম্পিক্স অনেক কঠিন জায়গা। ওখানে লিয়েন্ডার ও রোহনকে অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। সেই লড়াইয়ের জন্য ওরা কতটা তৈরি, এটাই আসল প্রশ্ন। আমি যতদূর জানি অলিম্পিক্সে রজার ফেডেরার-স্ট্যানিসলাস ওয়ারিঙ্কা জুটি থাকবে। ব্রায়ান ব্রাদার্স ডাবলসে বরাবরই বিপজ্জনক। ওরাও থাকবে। রাফায়েল নাদালও শুনেছি অলিম্পিক্সে নামবে এবং ডাবলসেও খেলবে। তার উপর অলিম্পিক্সে টেনিসটা এ বার ক্লে কোর্টে হবে বলে শুনেছি। সেই কারণেই রিওতে ভারতীয়দের চ্যালেঞ্জটা বেশ কঠিন হবে। একমাত্র যদি ওদের ড্র-টা সহজ হয়, তা হলেই ওরা সেমিফাইনালে উঠলেও উঠতে পারে। আর সেমিফাইনালে উঠলেই তো টেনিসে পদক নিশ্চিত। তবে কষ্ট করেও এর বেশি কিছু আশা করতে পারছি না আমি।
বহুবার একসঙ্গে কোর্টে নেমেছে ওরা দু’জন। ২০১৪-য় বেঙ্গালুরুতে ডেভিস কাপে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দুই সেটে হারার পরেও কী অসাধারণ ভাবে ডাবলসটা জিতেছিল, সবার মনে আছে নিশ্চয়ই । কিন্তু তখন পরিস্থিতি এক রকম ছিল আর এখন সম্পুর্ণ অন্য রকম। সেই সম্পর্ক বা বোঝাপড়া আর ওদের মধ্যে নেই। ডাবলসে এই বোঝাপড়াটা দরকার হয় ভাল প্ল্যানিংয়ের জন্য। তার পরে কোর্টে সেটা ঠিকঠাক কাজে লাগানোর জন্যও। যা থাকায় এক সময় দুনিয়ায় এক নম্বর হয়ে উঠেছিল লিয়েন্ডার ও মহেশ। এই ‘অন কোর্ট কেমিস্ট্রি’ থাকতে গেলে যতটা সময় এক সঙ্গে খেলাটা চালিয়ে যাওয়া দরকার, সেই সুযোগ লিয়েন্ডাররা পাচ্ছে না।
অলিম্পিক্সের আগে সার্কিটে কোনও টুর্নামেন্টে ওরা একসঙ্গে নামছে বলে অন্তত আমার কাছে খবর নেই। রিওয় গিয়ে যে ক’দিন একসঙ্গে প্র্যাকটিস করবে, সেই ক’দিনই একসঙ্গে কোর্টে নামবে। কিন্তু প্র্যাকটিস করা আর ম্যাচে নামার মধ্যে অনেক ফারাক। সেই ফারাকটা মোছার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
সবচেয়ে বড় কথা এই দু’জনের সাম্প্রতিক ডাবলস পারফরম্যান্সও এমন কিছু ভাল নয়। লিয়েন্ডার এ’বছর তাও দুটো ফাইনালের মধ্যে একটাতে জিতেছে। রোহন সেটাও পারেনি। মাত্র দু’টো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে দু’টোতেই হেরেছে। লিয়েন্ডার চাপের মুখে বরাবর ভাল খেলে, এটা ঠিকই। কিন্তু অলিম্পিক্সের মতো আসরে সঠিক পার্টনার না পেলে কোনও লাভ নেই।
তাই শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমি লিয়েন্ডারদের তেমন কোনও আশা দেখতে পাচ্ছি না রিওয়।