র্যানিয়েরি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে লেস্টার সিটির নেপথ্য নায়ক। -টুইটার
বছর তিনেক আগে এক মঙ্গলবার রাতে মিলওয়ালের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ডিভিশনের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লেস্টার সিটি। তখনও কেউ বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি কয়েক বছরের মধ্যে ছবিটা এতটা পাল্টাবে।
স্টেডিয়ামে বাজবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেই রোমহর্ষক অ্যান্থেম। ফুটবলারদের জার্সির ব্যাজে থাকবে ঐতিহাসিক কালো ফুটবলের চিহ্ন। লড়াইটা প্রিমিয়ার লিগে ওঠার হবে না। বরং হবে ইউরোপের সেরা ষোলো ক্লাবের মধ্যে জায়গা পাকা করার।
ফুটবলবিশ্বে রূপকথা শব্দটার সমার্থক হয়ে উঠেছে লেস্টার। গত বার প্রিমিয়ার লিগে। এ বার ইউরোপে।
ক্লাবের একশো বত্রিশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে নেমেছিল লেস্টার। শেষ ষোলোয় ওঠার স্বপ্ন দেখার সাহস করেছিল ‘শেয়াল’রা। মঙ্গলবার রাতে যে স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকল না। বরং বাস্তবে পরিণত হল। ক্লাব ব্রুজকে ২-১ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় উঠল লেস্টার। তাও আবার এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। এবং গ্রুপের শীর্ষেই শেষ করবে লেস্টার।
প্রথমার্ধের শুরুতে শিনজি ওকাজাকির গোলে ১-০ এগোয় লেস্টার। রিয়াদ মাহরেজের গোলে ব্যবধান বাড়ায় ‘শেয়াল’রা। বিরতির পরে জোসে ইজকুয়ের্ডোর গোলে ব্রুজ ২-১ করলেও শেষমেশ লিড ধরে রাখে লেস্টার।
ম্যাচ শেষে তখন ক্লদিও র্যানিয়েরি দু’হাত ছুড়ে সেলিব্রেট করছেন। ‘শেয়াল’দের স্টেডিয়াম জুড়ে ‘লেস্টার-লেস্টার’ শব্দব্রহ্ম্য। ভক্তরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না কিছু বছর আগের তাঁদের প্রিয় লেস্টার আজ জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপের সেরা ষোলো ক্লাবের মধ্যে। কিছু বছর আগে যাদের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মানে ছিল অলীক কোনও স্বপ্ন। যার থেকে কয়েকশো মাইল দূরে ছিল তাদের প্রিয় লেস্টার। কিন্তু ক্লদিও র্যানিয়েরির জাদুর ছড়িতে লেস্টার ভক্তরা সাহস পাচ্ছেন এই স্বপ্ন দেখার।
লেস্টার কোচ র্যানিয়েরির কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় ওঠাও যেন প্রিমিয়ার লিগ জেতার মতোই— অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। ‘‘শেষ ষোলোয় উঠে গিয়েছি আমরা, ভাবলে বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমরা ভাল খেলেছি,’’ বলছেন র্যানিয়েরি। কিন্তু ইতিহাস গড়ার উৎসবেও রয়ে যাচ্ছে বিসর্জনের বিষাদ। কারণটা প্রিমিয়ার লিগ। ইউরোপে যেখানে এখনও অপরাজিত লেস্টার, ঘরোয়া লিগের ছবিটা চিন্তার। গত শনিবার ওয়াটফোর্ডের বিরুদ্ধে ১-২ হেরে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা এখন লিগ টেবলের চোদ্দো নম্বরে। অবনমনের স্থান থেকে মাত্র দু’পয়েন্ট ক্লিয়ার। মাহরেজ ও ভার্দির মতো তারকা ফুটবলারদেরও দেখে মনে হচ্ছে গত বারের ছায়া।
দলের মধ্যেও যেন ভাঙনের সুর। কয়েকজন ফুটবলার মেনে নিতে পারছেন না ঠিক কেন র্যানিয়েরি প্রিমিয়ার লিগকে পাত্তা দিচ্ছেন না। কোচও হয়তো এটা বুঝেছেন। তাই তো শেষ ষোলোয় ওঠার উচ্ছ্বাসেও র্যানিয়েরি দলকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন, প্রিমিয়ার লিগে আরও উন্নতি করতে হবে। ‘‘এখানে গ্রুপ টপকে উঠে গিয়েছি। এ বার আমাদের প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ভাবতে হবে। আরও উন্নতি করতে হবে। আমরা অবনমনের আশঙ্কায় রয়েছি। তার থেকে বেরোতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যেমন খেলেছি সে রকমই এ বার প্রিমিয়ার লিগেও খেলতে হবে।’’
লেস্টার যেখানে পেরেছে, টটেনহ্যাম মুখ থুবড়ে পড়ল। মোনাকোর বিরুদ্ধে ২-১ হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে গেল টটেনহ্যাম।