একে কর্নেলে রক্ষে নেই, ডার্বিতে সঙ্গে আবার দোসর সনি!
কোথায় ইস্টবেঙ্গল-যুদ্ধের আগের সকালে বাগান জুড়ে থাকবে কর্নেল গ্লেন-সনি নর্ডির কাছে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের গোলের জন্য আব্দার, তার বদলে এ কী ছবি!
গ্লেন নন। নন সনিও। আই লিগ ডার্বির চব্বিশ ঘণ্টা আগে বাগানের পরিত্রাতা যেন লুসিয়ানো সাব্রোসা!
কিন্তু কেন?
আসলে লিগের প্রথম দু’ম্যাচে গ্লেন, বলবন্তরা যতই সাত গোল করে ফেলুন, পাশাপাশি পাল্টা তিনটে গোলও হজম করতে হয়েছে প্রীতম কোটালদের। তার উপর আবার সঞ্জয় সেনের ডিফেন্স লাইনের মাথায় বিলক্ষণ রয়েছে কলকাতা লিগের ডার্বিতে ডংয়ের বিষমাখানো ফ্রি কিক থেকে জোড়া গোল খাওয়ার সেই দুঃস্বপ্ন! আই লিগে র্যান্টির ফর্মে ফেরাও তো আছে। এ পর্যন্ত লাল-হলুদের তিন গোলের মধ্যে দু’টোই তো র্যান্টির।
শুক্রবার প্র্যাকটিসের পর তাই সনি, কর্নেলের কাছে যত না গোলের জন্য আবদার করছিলেন বাগান সমর্থকরা, তার চেয়েও বেশি অনুরোধ ছিল লুসিয়ানোর কাছে— ‘‘র্যান্টিরা যেন কোনও ভাবে গোল না দিতে পারে আমাদের।’’
যার উপরে মোহনবাগান রক্ষণের পুরো দায়িত্ব রয়েছে, সেই ব্রাজিলীয় স্টপার লুসিয়ানো অবশ্য গাড়িতে ওঠার আগে বাগান জনতাকে ভরসা দিয়ে গেলেন, ‘‘র্যান্টি, ডং— সামনে যে-ই থাকুক, আমরা গোল হতে দেব না।’’
তবে ডং না র্যান্টি— কাকে বেশি ভয়ঙ্কর বলছেন সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডাররা?
ভোটের ফলাফলে লাল-হলুদের মহাতারকা দক্ষিণ কোরিয়ান মিডিওকে একেবারেই পিছনে ফেলে দিচ্ছেন নাইজিরিয়ান গোলমেশিন।
প্রীতম কোটাল: র্যান্টি অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। ওর মতো সুযোগসন্ধানী আর বুদ্ধিমান স্ট্রাইকার ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে খুব কম আছে।
ধনচন্দ্র: র্যান্টির সঙ্গে আমি খেলেছি। আবার ওর বিরুদ্ধেও। ও কখন কী করে বসবে আগে থেকে কিছু বোঝা যায় না।
কিংশুক দেবনাথ: দুজনেই বড় ফুটবলার। তবে তুলনায় র্যান্টিকে এগিয়ে রাখব।
এমনকী বাগান রক্ষণের নেতা লুসিয়ানোর ভোটও র্যান্টির দিকে। বলব না বলব না করে শেষমেশ তিনি বলে ফেললেন, ‘‘ডং সম্পর্কে সে ভাবে জানি না। তবে র্যান্টি বড় স্ট্রাইকার। আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।’’
গোয়া থেকে কলকাতা— বিভিন্ন ক্লাবে খেলার সূত্রে অনেকবার র্যান্টিকে আটকানোর দায়িত্ব পেয়েছেন দীর্ঘদেহী ব্রাজিলীয় স্টপার। স্বভাবতই সেই ডুয়েলে কখনও সফল হয়েছেন লুসিয়ানো, আবার কখনও বাজিমাত করেছেন র্যান্টি। তবে ডার্বিতে এই প্রথম দু’জনে মুখোমুখি। সে জন্য এ বার কি বাড়তি চাপ টের পাচ্ছেন? অনেক জোরজার করার পর লুসিয়ানো জবাবে শুধু বললেন, ‘‘ম্যাচের পরই না হয় এই প্রশ্নের উত্তর দেব। তবে জেনে রাখুন, কাল আমরা জেতার জন্যই নামছি।’’
যদিও ডার্বির আগে শেষ অনুশীলনে এ দিন বাগান কোচকে আলাদা করে তাঁর ডিফেন্স লাইনের উপর জোর দিতে দেখা গিয়েছে। কী ভাবে ডং-র্যান্টি আক্রমণে ওঠেন বা গোলের মুখ খুলতে পারেন, সেটা বেশ কিছু দিন ধরেই প্রীতম-ধনচন্দ্রদের বুঝিয়ে চলেছেন সঞ্জয়। কখনও বোর্ডে ছবি এঁকে, আবার কখনও মাঠে নেমে খাতায়-কলমে। লুসিয়ানো-শৌভিক-কাতসুমিদের বারবার বলে দেওয়া হয়েছে, কোনও ভাবেই যেন পেনাল্টি বক্সের কাছাকাছি লাল-হলুদ জার্সিদের ফাউল না করা হয়। ডং যেন ফ্রি-কিক থেকে গোলের সুযোগ না পান। এ দিন সকালে সেই সব দাওয়াই-ই যেন আরও এক বার চূড়ান্ত ঝালিয়ে নিল সঞ্জয়ের ডিফেন্স।
পরে ক্লাব তাঁবুতে বসে বাগান কোচ বললেন, ‘‘র্যান্টি, ডং এমন ফুটবলার, কখন কী করবে, বোঝা সম্ভব নয়। আমার ফুটবলারদের সেটা মাথায় রেখে সে ভাবেই সতর্ক করেছি।’’
সব মিলিয়ে অবশ্য পুরো মোহনবাগান টিমই ডার্বির আগের দিন চনমনে। প্র্যাকটিসে ফুটবলারদের শরীরী ভাষা যেন বলে দিচ্ছিল, দএক ঢিলে দুই পাখি মারার জন্য সবুজ-মেরুন বদ্ধপরিকর— এক) শনিবাসরীয় ডার্বি জিতে কলকাতা লিগে বিশ্রী হারের বদলা নেওয়া, দুই) ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট পেয়ে আই লিগ টেবলে নিজেদের এক নম্বর জায়গা আরও মজবুত করা। সনি নর্ডি যেমন বলে গেলেন, ‘‘আমরা কেন আই লিগ চ্যাম্পিয়ন টিম সেটাও তো প্রমাণ দিতে হবে।’’
প্রথম ডার্বি খেলছেন কর্নেল গ্লেন। সাধারণত সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেন তিনি। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে এলেই দৌড়ে পালিয়ে যান। এ হেন ত্রিনিদাদ টোবাগো বিশ্বকাপারও কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডার্বির উত্তেজনায় নিজের শপথ রাখতে পারলেন না। মুখের কুলুপ সরিয়ে বলেই ফেললেন, ‘‘ডার্বি খেলতে মুখিয়ে রয়েছি।’’
এটাই তো ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের মহিমা। চিরকালের ডার্বি।