প্রশ্ন: সমালোচনার মুখে মোরিনহোর স্ট্র্যাটেজি। ফাইল চিত্র
ম্যাঞ্চেস্টার সিটি অপ্রতিরোধ্য। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি মানেই সুন্দর ফুটবল!
গোটা বিশ্বে সব চেয়ে বেশি সমর্থক ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডেরই। ৭০ কোটি! সংখ্যাটা কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো। অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তার নেপথ্যে ছিল সুন্দর ফুটবল। কিন্তু ২০১৩-তে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে স্যার আলেক্স ফার্গুসন-যুগ শেষ হওয়ার পর থেকেই আশ্চর্যজনক ভাবে বদলে গিয়েছে ছবিটা। ম্যান ইউনাইটেডের সমর্থকের সংখ্যা হয়তো আরও বেড়েছে। কিন্তু ফুটবল আর
সুন্দর নেই।
পার্থে থাকলেও রবিবার আমার মন পড়ে ছিল ইংল্যান্ডে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জোড়া ডার্বিতে। গভীর রাতে দুই ম্যাঞ্চেস্টারের লড়াই দেখতে বসে মনে হচ্ছিল, ফার্গুসন যেন আবার ফিরে এসেছেন ফুটবলের মূলস্রোতে। তবে এ বার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-তে। সেই ৯০ মিনিটের মুগ্ধ করে দেওয়া ফুটবল। যা দেখার জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটা যায়। উল্টো দিকে ঠিক ততটাই হতাশাজনক ম্যান ইউনাইটেডের ফুটবল।
ফার্গুসনের সোনালি অধ্যায় আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমার পরিবারের সকলেই ওয়েস্ট হ্যামের সমর্থক। শুধু মাত্র ফার্গুসনের আকর্ষণে ম্যান ইউনাইটেডের কোনও ম্যাচ মিস করতাম না। সম্ভবত ২০০৮-০৯ মরসুম। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যান ইউনাইটেড বনাম হাল সিটি ম্যাচ। ম্যান ইউ-এর হয়ে তখন খেলছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, ওয়েন রুনি, রায়ান গিগ্স, রিও ফার্ডিনান্ড, প্যাত্রিস এভা-র মতো একঝাঁক তারকা। আমি ম্যাচটা দেখতে লন্ডন থেকে ম্যাঞ্চেস্টারে গিয়েছিলাম। গ্যালারিতে আমার মতো অনেকেই ছিল যারা ফার্গুসনের ভক্ত। ৪-৩ গোলে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতেছিল রোনাল্ডোরা। আমার কাছে ম্যাচটা স্মরণীয় এই কারণেই, হাল সিটি ৮২ মিনিটে ৩-৪ করে দেওয়া সত্ত্বেও স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তনের চেষ্টা করেননি ফার্গুসন। শেষ আট মিনিটও একই রকম ভাবে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে গিয়েছিল ওরা।
ফার্গুসনের অভিধানে একটাই শব্দ ছিল— জয়। তাতে একটা-দু’টো গোল খেলেও কোনও ব্যাপার নয়। আক্রমণের ঝড় তুলে বিপক্ষকে নাজেহাল করে দাও। গুয়ার্দিওলা-ও সেই দর্শনে বিশ্বাসী। দু’জনেই দল নামায় জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। মোরিনহো যুগে সেই ঝাঁঝটাই উধাও। পর্তুগিজ ম্যানেজারের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে— আগে হার বাঁচাও।
আরও পড়ুন: ম্যাঞ্চেস্টার মানে এখন ইউনাইটেড নয়, সিটি
রবিবারের ম্যান সিটি ডার্বির পরেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে, আধুনিক ফুটবলে ম্যান সিটিই ইংল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা দল কি না। আমি সেটাই মনে করি। তার কারণ, গুয়ার্দিওলা-র দলের অবিশ্বাস্য ফুটবল। এই মরসুমে মাত্র ১৭ ম্যাচে ৫২ গোল করেছে ম্যান সিটি। এই উচ্চতায় কিন্তু এক দিনে পৌঁছয়নি ওরা। ইংল্যান্ডে প্রথম বছর পেপ উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি। ইপিএল শেষ করেছিল চতুর্থ স্থানে থেকে। কোচিং কেরিয়ারে প্রথম বার কোনও ট্রফি না জিতে মরসুম শেষ করেছিল। এ বারের ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো। তার কারণ, দুর্দান্ত ভাবে দলটা গড়েছে গুয়ার্দিওলা। বেঞ্জামিন মেন্দি ও দানিলো লুইস সিলভা-কে সই করিয়েছে। দু’জনেই ডিফেন্ডার। কিন্তু ম্যান সিটির আক্রমণ তৈরি করার দায়িত্ব মেন্দি ও দানিলো-কেই দিয়েছে গুয়ার্দিওলা। অন্য দলগুলো এই স্ট্রাটেজিতেই বিভ্রান্ত। দ্বিতীয়ত কেভিন দ্য ব্রুইনের অবিশ্বাস্য উত্থান। গুয়ার্দিওলা-ই বদলে দিয়েছে বেলজিয়াম মিডফিল্ডারকে। একটা সময় ম্যান ইউনাইটেডে খেলত ডেভিড বেকহ্যাম, এরিক কঁতোনা, রুদ ফান নিস্টেলরুই, ওয়েন রুনি-এর মতো তারকারা। সেখানে এখন প্রধান স্ট্রাইকার রোমোলু লুকাকু! পার্থক্যটা তো এখানেই তৈরি হয়েছে।
তাই ফুটবলবিশ্বে ম্যাঞ্চেস্টার মানে এখন সিটি। ইউনাইটেড নয়।