সকাল থেকেই চোখ ছিল টিভি-তে। ছাত্রের প্রতিশোধ নেওয়ার ম্যাচ বলে কথা যে! রবিবার চোদ্দো নম্বর বিশ্ব খেতাব জেতার পরেই অ্যাডিলেড থেকে পঙ্কজ আডবাণীর প্রথম ফোন আসে তাঁর মোবাইলে, ‘‘স্যার বলেছিলাম না এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। ছাড়িনি।’’
তিনি মনোজ কোঠারি। পঙ্কজের প্রাক্তন কোচ হলেও, সম্পর্কের বাঁধন এখনও অটুট। আর শিষ্যের সাফল্যে এতটাই অভিভূত গুরু যে, এ দিন বিকেলে ঘোষণাও করে দিলেন, ‘‘পঙ্কজের রেকর্ড আর কেউ ভাঙতে পারবে না। এত কম বয়সে ও যে উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছে, স্পর্শ করা দূরে থাক, ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবে না কেউ।’’
মনোজ কোঠারি নিজেও বিশ্বজয়ী। তবে পঙ্কজের খেতাবের সঙ্গে তাঁর জেতা খেতাব যে এক নয়, সেটাও সরল মনে স্বীকার করে নিলেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘আমাদের সময় তিন-চার জন সেরা প্লেয়ার ছিল। কিন্তু এখন সেই নম্বরটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ষোলো-সতেরোজনের মতো। এত ভিড়ে ধারাবাহিক ভাবে নিজের সেরাটা খেলে যাওয়া, মুখের কথা নয়। ওর প্লাস পয়েন্ট হল একাগ্রতা। ভাবতে পারেন, এ দিন শেষ স্ট্রোকে যখন প্রায় ১০০০ পয়েন্ট এগিয়ে পিটার গিলক্রিস্টের থেকে, তখনও চারশো পয়েন্ট স্কোর করল!’’
বিলিয়ার্ডস ও স্নুকারের জনপ্রিয়তা ভারতে বেশ কম। তবু পঙ্কজের দৌড় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে বলেই ধারণা মনোজের। তাঁর কথায়, ‘‘এই খেতাব অলিম্পিক্সের সমতুল্য। আমার বিশ্বাস, দু’তিন বছরের মধ্যে বিলিয়ার্ডস ও স্নুকারের মতো গেম-ই নতুন দিশা দেখাতে পারে ভারতীয় খেলাধুলোকে।’’ একটু থেমে তিনি আরও যোগ করলেন, ‘‘আইএসএল যেমন ফুটবলে বিপ্লব নিয়ে এসেছে, তেমনই আমার আশা, বিলিয়ার্ডস বা স্নুকারেও এক দিন বিপ্লব ঘটবে। আর সেটা প্রথম কলকাতায় হবে।’’ তবে মনোজ কোঠারির দুঃখ, পঙ্কজের মতো প্রতিভা বিশ্বের দরবারে দেশের নাম উজ্জ্বল করলেও, প্রাপ্য স্বীকৃতি পান না তাঁরা। এমনকী এশিয়ান গেমস কিংবা অলিম্পিক্সেও কোনও স্বীকৃতি নেই বিলিয়ার্ডস-স্নুকারের। ‘‘পঙ্কজ দেশের সম্পদ। বিভিন্ন ফর্ম্যাটে চোদ্দোটা খেতাব ওর সাফল্যের মার্কশিট। ভারতে কার এই কৃতিত্ব আছে, দেখান তো? তবু বাইরে থেকে কোনও সাহায্য পায় না। যা করতে হয়, যেটুকু করতে হয়, নিজের ক্ষমতার জোরেই। আমার মতে, অন্তত অলিম্পিক্স কিংবা এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বিলিয়ার্ডস-স্নুকারকে। তাতে পঙ্কজরা উৎসাহিত তো হবেই, নতুন প্রজন্মের মধ্যেও খেলাটা ছড়াবে। দেশের নামও উজ্জ্বল হবে তাতে।’’