ক্রিকেট জীবনের সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মনোজ তিওয়ারি? প্রশ্নটা যদি আমাকে এই মুহূর্তে কেউ করেন, তা হলে কিছু না ভেবেই বলে দিতে পারি, হ্যঁা। দশ বছর ধরে ওকে টানা দেখে আসছি। এত আত্মবিশ্বাসী, এত দাপুটে আর এত পরিণত মনোজ তিওয়ারিকে কখনও দেখিনি।
এ বারের ঘরোয়া মরসুমে যে ফর্মে রয়েছে মনোজ, তার পর ওকে ভারতীয় দলে ডাকা নিয়ে নির্বাচকরা এত ভাবছেন কেন, বুঝতে পারছি না। এ রকম ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান বাইরে থাকা মানে তো দলেরই ক্ষতি!
এ বারের ঘরোয়া ক্রিকেট মরসুমের শুরু থেকে নিয়মিত টিভি কমেন্ট্রি করার সুবাদে মনোজের ইনিংসগুলো দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই এ কথা বলছি। পারফরম্যান্সের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও পরিণতবোধের মিশেল অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে মনোজকে। সেই জন্যই তো বলছি, ও নিজের সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
ওর শেষ তিনটে সেঞ্চুরির মধ্যে দলীপে প্রথমটা দেখা হয়নি আমার। বাকি দুটো মাঠে থেকেই দেখলাম। দুটোই অসাধারণ। আর প্রথমটা যারা দেখেছে, তাদের একজন পার্থিব পটেল আমাকে সে দিন বলছিল, ওর দেখা সেরা ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরি মনোজেরটাই। কে কত রান করছে, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ কী ভাবে রানটা করছে। এ দিক থেকে মনোজকে ফুল মার্কস দেওয়া যেতেই পারে।
রোহিত-রাহানেদের সরিয়ে মনোজ ভারতীয় দলে ঢুকে পড়বে, এটা ভাবা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। মনোজের দলে ঢোকার লড়াইটা রায়ডুর সঙ্গে। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভাল ব্যাট করেছে রায়ডু। কিন্তু যে ফর্মে রয়েছে, যে মেজাজে ব্যাট করছে মনোজ, তাতে রায়ডুকে টেক্কা দিতেই পারে ও। দু’জনেই তিন মাস আগেই অস্ট্রেলিয়ায় ভারত ‘এ’ দলের হয়ে সফর করে এসেছে। সেখানে দু’জনেই ভাল ব্যাট করেছে। মনোজের একটা ৯৩-র ইনিংস ছিল ওই সিরিজে। রায়ডু আবার একটা ৭৭-ও করেছিল।
দু’জনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়াটা হয়তো নির্বাচকদের কাছে কিছুটা কঠিন। আমি ওদের জায়গায় থাকলে মনোজকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ দুটো ম্যাচে সুযোগ দিয়ে পরখ করে নিতাম। সেটা হয়নি। কিন্তু তার পরেও ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোজ দুর্দান্ত খেলছে। বিশ্বকাপে ভারতের ১৫ জনের দলে ধোনি-সহ আট ব্যাটসম্যান থাকবে বলেই মনে হয়। তাই নির্বাচকদের সামনে আর একটা রাস্তা আছে। রায়ডু, মনোজ দু’জনকেই বিশ্বকাপের দলে রাখা। আমার তো মনে হয়, সেটাই ঠিক কাজ হবে। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজেও তা হলে দু’জনকে দেখে নেওয়া যাবে।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মনোজের ম্যাচ রিডিংটাও ভাল। ম্যাচের পর ওকে জিজ্ঞাসা করি, ৩৬ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ৩১ ওভারে পাওয়ার প্লে নিতে গেলে কেন? ও বলল, বিপক্ষের বোলারদের চমকে দিতেই এই সিদ্ধান্ত। তখনও বোলাররা পাওয়ার প্লে-র জন্য তৈরি ছিল না, পেসাররা ওয়ার্ম আপ করছিল না দেখে হঠাত্ ওদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিই।
বিপক্ষের থেকে সব সময় এক পা এগিয়ে থাকাটাই কিন্তু সাফল্য আর ব্যর্থতার মধ্যে তফাত করে দিতে পারে।
চলতি মরসুমে মনোজ
ইনিংস ১০, রান ৫৬৭, সর্বোচ্চ ১৫১, গড় ৬৩.০০, সেঞ্চুরি ৩, হাফ সেঞ্চুরি ২
• দলীপ ট্রফি ইনিংস ৪, রান ১১৪, সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০০, গড় ৩৮.০০, সেঞ্চুরি ১
• বিজয় হাজারে ইনিংস ৫, রান ৩০২, সর্বোচ্চ ১৩০, গড় ৬০.৪০, সেঞ্চুরি ১, হাফ সেঞ্চুরি ২
• দেওধর ট্রফি ইনিংস ১, রান ১৫১, সর্বোচ্চ ১৫১, গড় ১৫১.০০, সেঞ্চুরি ১