বোলারের হাত থেকে ছুটে আসা ডিউজ বলটা আচমকা মারণাস্ত্র হয়ে উঠে যাঁর প্রাণটাই বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার হাসপাতালে কেড়ে নিল, কী আশ্চর্য! সেই হতভাগ্য ক্রিকেটারই মনোজ তিওয়ারির শরীর লক্ষ করে এক বার বল ছুড়েছিলেন!
এই তো, মাস তিনেক আগেই অস্ট্রেলিয়ার মাঠেই। যখন বাংলার ব্যাটসম্যান দু’দেশের ‘এ’ দলের সিরিজে একটা ম্যাচে ব্যাট করছিলেন। আর ফিল হিউজ ফিল্ডিং করছিলেন কভার অঞ্চলে।
“কভার কিংবা একস্ট্রা কভারে ফিল্ডিং করছিল ফিলিপ। একটা ড্রাইভ মেরে ক্রিজ ছেড়ে একটু বেরিয়েছি মাত্র। রান আউটের কোনও সম্ভাবনা ছিল না। অথচ বলটা ফিল্ড করেই সজোরে আমার শরীর তাক করে ছুড়ে মেরেছিল ও,” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো এ দিন বলার সময় চলতি বছরই অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারত ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মনোজ তিওয়ারিকে কেমন যেন বিহ্বল দেখাল! “ফিলিপ হিউজের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে আসছে।” বলছিলেন মনোজ।
একটু থেমে আরও যোগ করেন তিনি, “জানেন, সে দিন সত্যি বলতে কী একটু বিরক্ত হয়েই ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী হল হঠাত্ এ রকম করলে কেন? মাঠে কোনও উত্তর দেয়নি। কিন্তু দিনের খেলার শেষে নিজেই এগিয়ে এসে টিপিক্যাল অজি কায়দায় বলেছিল, নেভার মাইন্ড ব্রো... ক্রিকেট মাঠে এ রকম হয়ে যায়!”
কিন্তু ফিলিপ হিউজের মতো মর্মান্তিক পরিণতিও ক্রিকেট মাঠে হয়! মনোজকে এ দিন যেন সেই প্রশ্নই কুরেকুরে খাচ্ছে! হিউজ-ট্র্যাজেডির পর কি মনোজ ভবিষ্যতে ম্যাচে ব্যাট করতে নামার আগে নিজের হেলমেট নিয়ে দ্বিতীয় বার ভাবনাচিন্তা করবেন? “প্রায় নিখুঁত টেকনিকের ওপেনার ফিলিপ হয়তো সে দিন সিডনিতে অন্য হেলমেট পরে ব্যাট করতে নামলেও এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো যেত না,” বলে মনোজের আরও ব্যাখ্যা, “অ্যাবটের বাউন্সারটা তো ফিলিপের হেলমেটের নীচে লেগেছিল। আসলে ওই যে! সেই মুহূর্তে ক্রিকেটদেবতা কী ভাবছিলেন তা উনিই ভাল বলতে পারবেন!”
সদ্য প্রয়াত ফিলিপ হিউজের ব্যাটিং অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে স্বচক্ষে দেখে মনোজের মনে হয়েছে, “বাঁ-হাতি ফিলিপের কপিবুক ব্যাটিং স্টাইল থাকলে কী হবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনও ধরনের স্ট্রোক খেলতে পারত। আমাদের টিমের ওই অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে তিন দেশের একটা ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট হয়েছিল। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফিলিপের একটা ডাবল হান্ড্রেড দেখে আমি নিশ্চিত বলতে পারি, অন্তত অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে দলে ও লম্বা রেসের ঘোড়া হতেই পারত।”
হিউজের ঘটনার পরে ফাস্ট বোলিংয়ের সামনে ব্যাটসম্যানের হেলমেটের কার্যকারিতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুললেও সাম্প্রতিক অতীতে ভারতীয় দলের হয়ে খেলা বাংলার মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানের অভিমত, “দিনটাই ক্রিকেটের জন্য খুব খারাপ ছিল। খুব খারাপ একটা দুর্ঘটনা না হলে এ রকম হয় না। শন অ্যাবটের বল আমিও কয়েক বার খেলেছি। সে রকম কুইক নয়। সামলাতে কখনও অসুবিধে হয়নি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান উইকেটের চরিত্রটাই এমন! শর্ট ডেলিভারির গতি হঠাত্ করে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে যে কোনও ব্যাটসম্যানকে। আর পাঁচটা দিন হলে হয়তো অ্যাবটের বল ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া ফিলিপের ব্যাটের মাঝখানে লাগত...!” মনোজের আক্ষেপ যেন যাওয়ার নয়!
তাই দেওধর ট্রফিতে পূর্বাঞ্চলকে নেতৃত্ব দিতে উড়ে যাওয়ার আগেও খুব কাছ থেকে দেখা হিউজের জন্য বিষণ্ণই বাংলার মনোজ।