ছন্দে: এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নজর মেরি কমের। ফাইল চিত্র
চার ঘণ্টায় ওজন কমিয়েছিলেন ২ কেজি!
এমনিতে শুনতে বেশ অবিশ্বাস্য ব্যাপারটা। কিন্তু সেটাই করে দেখিয়েছিলেন কিংবদন্তি ভারতীয় বক্সার মেরি কম। পোলান্ডের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে জেটল্যাগ কিছুটা ছিলই। কিন্তু ওই অবস্থাতেই সেখানে পৌঁছে তাঁর প্রথম কাজটি ছিল নিজের ওজন দু’কেজি কমিয়ে ফেলা।
বছরের তৃতীয় সোনা জিতে দেশে ফিরে সে কথাই বললেন মেরি কম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোর তিনটে-সাড়ে তিনটে নাগাদ আমরা পোলান্ডে পৌঁছেছিলাম। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ নিজের ওজন জানতে হল। আমার বিভাগ ৪৮ কেজি। ওজন করতে গিয়ে দেখলাম সেটা প্রায় পঞ্চাশে পৌঁছে গিয়েছে।’’
পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেরি সঙ্গে বললেন, ‘‘ওই অবস্থায় আমার হাতে তখন মাত্র ঘণ্টা চারেক সময় ছিল। জানতাম ওই সময়ের মধ্যে ওজন কমাতে না পারলে প্রতিযোগিতা থেকেই বাতিল হয়ে যাব। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করলাম টানা এক ঘণ্টা অন্তত স্কিপিং করে যাব। করলামও। আর এটা করেই আমি ওজন কমিয়ে প্রতিযোগিতার জন্য নিজেকে তৈরি করে ফেললাম।’’
মেরির আরও কথা, ‘‘আমরা যে বিমানে পোলান্ডে পৌঁছলাম তার বেশির ভাগ আসনই খালি ছিল। তাই বিমানযাত্রার সময়টা হাত-পা ছড়িয়ে অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পেরেছিলাম। যে কারণে জেটল্যাগ থাকলেও পোলান্ডে পৌঁছে দ্রুত নিজেকে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করে ফেলি। না হলে জানি না, ওখানে আদৌ লড়তে পারতাম কি না। সোনা তো দূরের কথা।’’
প্রসঙ্গত পোলান্ডের প্রতিযোগিতায় মেরি কম ছাড়া অন্য কোনও ভারতীয়ই সিনিয়র বিভাগে সোনা জিততে পারেননি। তিন সন্তানের মা, ৩৫ বছরেও কী ভাবে এতটা সফল হচ্ছেন জানতে চাওয়া হলে মেরির জবাব, ‘‘আসলে আমি কখনও নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হতে পারি না। সব সময় মনে হয়, আরও খাটি, নতুন নতুন কৌশল রপ্ত করি। এমনিতে আমি আসল লড়াইয়ের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখার পক্ষপাতী। সেই সঙ্গে যাঁর সঙ্গে লড়তে হবে তার শক্তি-দুর্বলতা খোঁজাটাও আমার নেশার মতো। ম্যাচের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রতিপক্ষকে অকেজো করে দেওয়াটা আমার লক্ষ্য থাকে। হতে পারে এ সবই আমার সাফল্যের রহস্য।’’ সঙ্গে মেরি জানিয়েছেন তাঁর সাফল্যের পিছনে স্বামী ও ‘বন্ধু’ অনলারের অদম্য প্রেরণার ভূমিকাও কম নয়। মেরির স্বামীও সেখানে ছিলেন। তাঁর মোদ্দা বক্তব্য, বক্সার স্ত্রী সব সময়ই অতি সক্রিয় থাকেন। সংসারের যে কোনও কাজ নিজে করতে ভালবাসেন।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য কী? কিছু দিন পরেই ছত্রিশে পা দেবেন মেরি। তবু তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আগামী নভেম্বর মাসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। মনে রাখবেন তার পরও আমি লড়ে যাব। শরীর যদি সুস্থ থাকে, তা হলে ২০২০ অলিম্পিক্স পর্যন্ত বক্সিং নিয়েই থাকব। জানি, আমার সীমাবদ্ধতা কোথায়। একই সঙ্গে জানি, কোথায় আমার শক্তি। যদি এর মধ্যে কোনও চোট না পাই, তা হলে আগামী দিনে আরও সফল হব বলেই আমার বিশ্বাস।’’ সঙ্গে হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘‘এখন যা দাঁড়িয়েছে তাতে কোথাও সোনা জিততে না পারলেই সেটাকে আমার ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপেও আমাকে তাই নতুন পরীক্ষা দিতে হবে।’’