হাবিব ঘাঁটির নতুন নবাব আজহারউদ্দিন

তিনি স্বপ্ন দেখেন নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রের মতো গোল করার। স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলে সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে খেলার। তিনি— আজহারউদ্দিন মল্লিক। রবিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে মোহনবাগানের ডার্বি জয়ের নায়ক।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৩৬
Share:

নায়ক: ডার্বিতে উত্থান আজহারের। ফাইল চিত্র

তিনি স্বপ্ন দেখেন নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রের মতো গোল করার। স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলে সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে খেলার। তিনি— আজহারউদ্দিন মল্লিক। রবিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে মোহনবাগানের ডার্বি জয়ের নায়ক।

Advertisement

স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই পারিবারিক ব্যবসায় যোগ না দিয়ে বছর তিনেক আগে দাদা ওয়াসিম আলি মল্লিকের সঙ্গে আজহার নেমে পড়েছিলেন শিলিগুড়ির স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই)-র ট্রায়ালে। প্রথম দিনই নজর কেড়ে নেন নির্বাচকদের।

শিলিগুড়ি সাই-তে ২০১৩-তে সুযোগ পেলেও কয়েক মাসের মধ্যেই আজহারকে সল্টলেক ক্যাম্পাসে কার্যত ছিনিয়ে এনেছিলেন কোচ সঞ্জীব রায়! তাঁর কথায়, ‘‘আন্তঃ সাই টুর্নামেন্টে আজহারের খেলা খুব ভাল লেগেছিল। আমরা সে বছর কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনে উঠেছি। শীর্ষ কর্তাদের বোঝালাম, আজহার আর ওয়াসিমকে দলে দরকার। ওঁদের অনুমতি নিয়েই শিলিগুড়ি থেকে দু’ভাইকে কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে আসি।’’ সঞ্জীব জানালেন, প্রথম ডিভিশনে সাই-এর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন আজহার। সেই শিলিগুড়িতেই রবিবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আই লিগের ফিরতি ডার্বিতে বিশ্বমানের গোল করলেন তিনি।

Advertisement

টিভিতে প্রিয় ছাত্রের গোল দেখার পর উচ্ছ্বসিত সঞ্জীব বললেন, ‘‘অসাধারণ গোল। সবচেয়ে বড় কথা, ইভান বুকেনিয়ার মতো বড় চেহারার বিদেশি ডিফেন্ডারের বিরুদ্ধে কখনও গুটিয়ে যায়নি। ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার অনেকটা বেরিয়ে এসেছিল দেখে দুর্দান্ত ভাবে বলটা তুলে দিয়েছিল।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আই লিগের শুরুতে গোড়ালির চোটের জন্য খেলতে পারছিল না। দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটাল।’’ আজহার নিজেও মনে করেন সাই-এ যোগ দেওয়ার পরেই তাঁর জীবন বদলে গিয়েছে। কয়েক দিন আগে বলছিলেন, ‘‘গ্রামে সমীর পালের কাছে প্র্যাক্টিস করতাম। স্যার আমাদের সাই-এর ট্রায়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন।’’

বছর দু’য়েক আগে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে সাই-এর হয়েই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে অসাধারণ খেলেছিলেন আজহার ও লক্ষ্মী মাণ্ডি। কোনও মতে ম্যাচটা জিতেছিল মোহনবাগান। লক্ষ্মী মূলস্রোত থেকে হারিয়ে গেলেও আজহারের কেরিয়ার গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। গত মরসুমে তাঁকে মোহনবাগানে নিয়ে আসেন সঞ্জয় সেন। আজহার যাতে হারিয়ে না যান, তার জন্যও সতর্ক মোহনবাগান কোচ। কলকাতা থেকে মাত্র ঘণ্টা দেড়েকের দূরত্বে হুগলির মশাটে বাড়ি নতুন এই তারকার। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার অনুমতি নেই আজহারের। ইলিয়ট রোডে ক্লাবের মেস-ই তাঁর ঠিকানা। সত্তরের দশকে যেখানে থাকতেন মহম্মদ হাবিব, মহম্মদ আকবর-রা। কেন বাড়ি যাওয়ার অনুমতি নেই আজহারের? সঞ্জয় সেন এক বার বলেছিলেন, ‘‘বাড়িতে থাকলেই স্থানীয় টুর্নামেন্টে খেলার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার অনুরোধও প্রচুর আসবে। বহু প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার এ ভাবে শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি চাই না আজহারও অকালে হারিয়ে যাক।’’

মন খারাপ হয় না মেসে থাকতে? বছর উনিশের আজহার বলেছিলেন, ‘‘স্যার বলেন মেসে থাকলে প্র্যাক্টিসে সুবিধে হবে। তাই মন খারাপ হলেও আমি এখানেই থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন