মহড়া: মোহনবাগান বধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সুনীল। শুক্রবার বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
কোচ আলবের্তো রোকা-র সঙ্গে সকলের আগে কাঁধে বলের ব্যাগ নিয়ে মাঠে নামলেন তিনি। একাধিক সাপোর্ট স্টাফ থাকা সত্ত্বেও অনুশীলনের জন্য নিজেই বল সাজিয়ে রাখলেন মাঠের বিভিন্ন অংশে। তিনি, সুনীল ছেত্রী। একই সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফসি-র অধিনায়ক এবং মেন্টর!
চলতি আই লিগে বেঙ্গালুরুর আই লিগ জয়ের সম্ভাবনা শেষ। অধিকাংশ ফুটবলারের পাখির চোখ এই মুহূর্তে এএফসি কাপ। সোমবার কলকাতা থেকেই মলদ্বীপ উড়ে যাবে তাঁরা। তাই আজ, শনিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কোচ নিজেও বাড়তি ঝুঁকি নিতে নারাজ। ব্যতিক্রম সুনীল।
শুক্রবার বিকেলে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে ওয়ার্ম আপ শেষ করে হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা, সি কে বিনীত-রা বিশ্রাম নিচ্ছেন। সুনীল কিন্তু একা একাই পেনাল্টি প্র্যাক্টিস করে গেলেন। তার পর অনুশীলন শুরু হওয়ার পর সতীর্থরা কেউ ভুল করলেই শুধরে দিচ্ছিলেন সুনীল। বেঙ্গালুরুর ফুটবলাররা বলেন, ‘‘তারকাসুলভ মানসিকতা একবারেই নেই সুনীলের। মাঠে এবং মাঠের বাইরে প্রত্যেকের সঙ্গেই বন্ধুর মতো মেশে। ম্যাচের আগে ড্রেসিংরুমে আমাদের দারুণ ভাবে উজ্জীবিত করে।’’ কী বলেন সুনীল? ‘‘টিম মিটিংয়ে ক্যাপ্টেন আমাদের বলে, মনে করবে প্রত্যেকটা ম্যাচই ফাইনাল। নব্বই মিনিট মাঠে তুমিই সেরা’’, বলছিলেন সুনীলের সতীর্থরা।
চলতি বছরের অক্টোবরেই প্রাক্তন মোহনবাগান অধিনায়ক সুব্রত ভট্টাচার্যের মেয়ে সোনম-কে বিয়ে করার পরিকল্পনা সুনীলের। তার আগে হবু স্ত্রীর শহরে সনি নর্দে-র বিরুদ্ধে দ্বৈরথে জয়ের তাগিদই কি তাঁকে আরও তাতিয়ে দিয়েছে? সুনীল বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে সনি-র কোনও লড়াই নেই। ম্যাচটা বেঙ্গালুরু খেলবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। দল হিসেবে যারা ভাল খেলবে তারাই জিতবে। আমার বা সনি-র ওপর কিন্তু ম্যাচের ভাগ্য নির্ভর করছে না।’’
সপ্তাহ দু’য়েক আগে এএফসি কাপে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সুনীলের বিশ্বমানের গোলই কিন্তু বদলে দিয়েছিলেন ম্যাচের রং। এ দিন সুনীল বললেন, ‘‘আমি অতীত নিয়ে ভাবি না। সনি, জেজে, ডাফি ও বলবন্ত-রা থাকায় মোহনবাগানের আক্রমণভাগ প্রচণ্ড শক্তিশালী। ম্যাচটা একেবারেই সহজ হবে না। আমাদের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করতে হবে।’’
তেত্রিশের দোরগোড়ায় পৌঁছেও দুরন্ত পারফরম্যান্সের রহস্যটা কী? সুনীলের জবাব, ‘‘আমি রেকর্ডের কথা মাথায় রেখে মাঠে নামি না। তাই চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারি।’’
লিয়েন্ডার পেজের মতো সুনীলও মনে করেন বয়স শুধুই একটা সংখ্যা। ভারতীয় স্ট্রাইকার বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমার লক্ষ্য ২০১৯-এ এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। তবে নিজেকে যত দিন উদ্বুদ্ধ করতে পারব, খেলা চালিয়ে যাব।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে সুনীল অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য আরও দশ বছর অন্তত ক্লাব ফুটবল খেলা।