উপেক্ষা কোচের, ডায়ানার ক্ষমতা অপব্যবহার নিয়ে তোপ মিতালির

মিতালির চিঠিতে কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স সদস্য ডায়ানা এডুলিজকে নিয়ে মন্তব্য রয়েছে যে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডায়ানা তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৫০
Share:

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়া নিয়ে অবশেষে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল। পাল্টা তোপ দাগলেন মিতালি রাজ। সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি তিনি। তবে ভারতীয় বোর্ডকে লেখা একটি চিঠি ফাঁস হয়ে গিয়ে মিতালি-বিতর্কের আগুনে ঘি পড়েছে। নতুন কোচ রমেশ পওয়ার তাঁকে অপমান করেছেন, এমন বিস্ফোরক অভিযোগ রয়েছে সেই চিঠিতে। পওয়ারকে আজ, বুধবার ডেকে পাঠাতে পারে বোর্ড। শোনা যাচ্ছে, ক্রিকেট অপারেশনস ম্যানেজার সাবা করিমের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। মিতালির অভিযোগ খতিয়ে দেখা এবং কোচের বক্তব্য শোনা।

Advertisement

মিতালির চিঠিতে কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স সদস্য ডায়ানা এডুলিজকে নিয়ে মন্তব্য রয়েছে যে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডায়ানা তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন। পর-পর দু’টি হাফ সেঞ্চুরি করার পরেও তাঁকে বাদ দেওয়ার পিছনে শুধুই ক্রিকেটীয় কারণ থাকতে পারে না বলেও মত মিতালির। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকা কিছু ব্যক্তি আমাকে শেষ করতে চায়।’’ মনে করা হচ্ছে, তাঁর এই উক্তি ডায়ানাকে নিয়েই।

সিওএ-র অন্যতম সদস্য মেয়েদের প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক ডায়ানা এডুলজি সোমবারেই পাশে দাঁড়িয়েছেন বর্তমান টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের। বলেছিলেন, প্রথম একাদশ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটাই ঠিক। ভারতীয় দল এক দিন বাজে খেলেছে বলে হেরেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: এটাই সম্ভবত এই ক্রিকেটারদের শেষ অস্ট্রেলিয়া সফর

দেশে ফিরে মিতালি নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন বোর্ডের কাছে। চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) রাহুল জোহরি ও জেনারেল ম্যানেজার (ক্রিকেট অপারেশন্‌স) সাবা করিমকে পাঠানো ই-মেলে তিনি লিখেছেন, ‘‘২০ বছরের ক্রিকেটজীবনে এই প্রথম এত হতাশ হই। এত ভেঙে পড়ি। নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল। মনে হয় ক্ষমতায় থাকা সেই মানুষগুলো আমাকে শেষ করতে চায়। ওদের কাছে বোধ হয় দেশের প্রতি আমার অবদানের কোনও মূল্যই নেই।’’

ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীতের বিরুদ্ধে যে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই, তা জানিয়ে এই ই-মেলে মিতালি লিখেছেন, ‘‘টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হরমনপ্রীতের বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে আমাকে বাদ দেওয়া নিয়ে কোচকে যে ভাবে সমর্থন করেছে ও, তা অভাবনীয় এবং বেদনাদায়ক। দেশের জন্য বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম। আর সেই সুবর্ণ সুযোগটা নষ্ট হওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছি।’’

আরও পড়ুন: ‘আমার দেখা অস্ট্রেলিয়ার দলগুলোর মধ্যে এটাই দুর্বলতম’

এখন ভারতীয় মহিলা দলের কোচ ও প্রাক্তন স্পিনার রমেশ পওয়ারের বিরুদ্ধেই সব চেয়ে বেশি করে অভিযোগ মিতালির। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে দলের অন্য কারও কোনও সমস্যা ছিল না। সমস্যাটা মূলত কোচের। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে পা রাখার পর থেকেই যাঁর সঙ্গে আমার গোলমাল শুরু হয়।’’ একাধিকবার তাঁর সঙ্গে পওয়ার দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ মিতালির। তিনি লিখেছেন, ‘‘শ্রীলঙ্কা সফর থেকে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ সিরিজ ও ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেও বরাবর আমিই ওপেন করেছি। সম্প্রতি মিডল অর্ডারে না খেললেও এবং প্র্যাকটিস না থাকা সত্ত্বেও শুধু দলের স্বার্থে মিডল অর্ডারে খেলতে রাজি হই।’’

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত পাওয়ার প্লে-তে ৩৮-৩ হয়ে যায়। কিন্তু পরের ম্যাচেও (পাকিস্তান) একই ওপেনিং জুটিকে (তানিয়া ভাটিয়া ও স্মৃতি মন্ধানা) নিয়ে খেলার কথা হওয়ায় অবাক হয়ে যান বলে জানান মিতালি। ই-মেলে তিনি লেখেন, ‘‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমার রেকর্ড যথেষ্ট ভাল। ওদের বিরুদ্ধে আমাদের জেতাটা খুব দরকার ছিল। তাই নির্বাচকদের ব্যাপারটা খুলে বলি। ওঁদের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান ম্যাচে আমি ওপেন করি।’’ সেই ম্যাচে মিতালি ৫৬ রান করেন। ভারত জেতে সাত উইকেটে। কিন্তু ভাল খেললেও এর পরেই তাঁর প্রতি কোচের ব্যবহার আরও খারাপ হয়ে যায় বলে জানান মিতালি।

তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার আশেপাশেও যেন থাকতে চাইতেন না কোচ। নেটে অন্যদের ব্যাটিং জরিপ করলেও আমি ব্যাট করতে এলেই সেখান থেকে সরে যেতেন। আমি ওঁকে কোনও কিছু বলতে গেলে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ফোন ঘাঁটতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। ফোনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলে যেতেন। এগুলো খুবই অসম্মানজনক। সবাই বুঝতে পেরেছে যে, আমাকে অপমান করা হচ্ছে। কিন্তু আমি কখনও মেজাজ হারাইনি।’’ ডায়ানা এডুলজিকে নিয়ে মিতালি ইমেলে লিখেছেন, ‘‘কখনও ভাবিনি, সিওএ-র পদটাই উনি আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগাবেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমাকে কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, সে সবই ওঁকে আমি বলেছিলাম। তার পরেও উনি যে ভাবে সেমিফাইনালে আমাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, তা দেখে আমি মর্মাহত।’’

সিওএ-র মধ্যে রাহুল জোহরির বিরুদ্ধে ‘মিটু’ বিতর্ক নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। চেয়ারম্যান বিনোদ রাই চেয়েছিলেন, জোহরিকে নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিক। ডায়ানা দাবি করেছিলেন, জোহরিকে হঠানো হোক। এ বার মিতালি-বিতর্ক নিয়ে বিভাজন আরও স্পষ্ট হওয়ার মুখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন