হতাশ: গোল করেও জেতাতে পারলেন না জেজে। ফাইল চিত্র
আই লিগ
মোহনবাগান ১ : ১ শিলং লাজং
পাহাড়ি কাঁটা দিয়ে পাহাড় জয়ের মাস্ট্রার স্ট্রোক কাজে লাগল না সঞ্জয় সেনের। নিজেদের ভুলেই শেষ পর্যন্ত জয় অধরা থেকে গেল সনি নর্দেদের।
বলবন্ত সিংহের জায়গায় দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার জেজে লালপেখলুয়াকে নামিয়ে দিয়েছিলেন মোহনবাগান কোচ। মাঠের নামার সাত মিনিটের মধ্যেই কাজের কাজটা করেও ফেলেছিলেন মিজো ফুটবলারটি। মাঝমাঠ থেকে শেহনাজ সিংহের তোলা উঁচু লব অসামান্য দক্ষতায় রিসিভ করে গোল ছেড়ে এগিয়ে আসা শিলং গোলকিপার বিশাল কেইনের মাথার উপর দিয়ে পাঠিয়ে জেজে এগিয়ে দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু সবুজ-মেরুন শিবিরের সেই উচ্ছ্বাস অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হল না শেহনাজের জন্যই। দু’মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফেরে শিলং লাজং। ব্রাজিলিয়ান ফ্যাভিও পেনার থেকে বল কাড়তে গিয়ে শেহনাজ হাতে লাগিয়ে ফেলেন বল। আসের পেরিক দিপান্দা গোল করতে ভূল করেননি। এবং আরও এগিয়ে যান সোনার বুটের দৌড়ে। দশটি গোল করে ফেললেন ক্যামেরুনের এই স্ট্রাইকার।
পাহাড় জয় করতে না পারলেও মোহনবাগানের স্বস্তি এ বারের আই লিগে প্রথমবার সঞ্জয় সেনের টিম পৌঁছে গেল লিগ টেবলের শীর্ষে। শিলং থেকে ফোনে মোহনবাগান কোচও বলে দিলেন, ‘‘জিততে পারিনি ঠিকই কিন্তু পনেরো রাউন্ডের পর আমরা লিগ টেবলে সবার উপরে। দু’টো টিমকে (আইজল ও ইস্টবেঙ্গল) তাড়া করছিলাম পিছন থেকে। বেঙ্গালুরু এবং ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে আমরা প্রথম লক্ষ্যে পৌঁছেছি এটাই বড় ব্যাপার। আইজল ৩০ পয়েন্টে থাকলেও গোল পার্থক্যেও কিন্তু আমরা অনেক এগিয়ে।’’
ডার্বিতে সনি নর্দেরা যে প্রথম একাদশ নিয়ে নেমেছিলেন বুধবার সেই দলই নেমেছিল পালতোলা নৌকার সওয়ারি হয়ে। তা সত্ত্বেও ম্যাচের প্রথম পঁচিশ মিনিট কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন ড্যারেল ডাফিরা। শিলংয়ের দিপান্দা এবং রিদিম থাং—গোলের সহজতম সুযোগ পেয়েছিলেন ওই সময়। মোহনবাগানের কিপার দেবজিৎ মজুমদার ‘সেভজিৎ’ না হয়ে উঠলে সঞ্জয়ের টিম এক পয়েন্টও পেত না হয়তো।
ঝাঁকুনি খেয়ে সনি-ডাফিরা অবশ্য বিরতির আগেই ম্যাচটা ধরার চেষ্টা করতে থাকেন। থাংবোই সিংটোর টিমের আসল শক্তি তাদের দৌড় আর হার না মানা মনোভাব। তা দিয়েই মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী টিমকে সারাক্ষণ ছুটিয়ে গিয়েছেন তিনি। সঞ্জয় স্বীকার করলেন, ‘‘ডার্বির মতো ভাল খেলতে পারেনি টিম। ক্লান্তি কিংবা অন্য কোনও কারণে এটা হল কি না সেটা দেখতে হবে সবার সঙ্গে কথা বলে। তবে এটা বলছি আমাদেরও একটা পেনাল্টি পাওয়া উচিত ছিল। এদুয়ার্দোর শট শিলংয়ের সানার হাতে লেগেছিল সবাই দেখেছে।’’ আর শিলং কোচের মন্তব্য, ‘‘আজ ম্যাচের সেরা দুই টিমের দুই গোলকিপার। প্রথমার্ধটা আমরা ভাল খেলেছি। পুরো কৃতিত্ব ছেলেদের।’’
এটা ঘটনা যে, দেবজিৎ এবং ড্যারেল ডাফি ছাড়া মোহনবাগানের কেউই সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। সনি, আজহারউদ্দিন মল্লিক, ইউসা কাতসুমি—যাঁরা ডার্বিতে চমকে দিয়েছিলেন তাঁদের শুধু দৌড় দিয়েই রুখে দেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করে গিয়েছেন পাহাড়ের ভূমিপুত্ররা। তাতে তাঁরা সফলই বলতে হবে। গতবারের মতো এ বারও গঙ্গাপাড়ের ক্লাবের কাছ থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে নিল শিলং।
সঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘আমি জানতাম ম্যাচটা জেতা কঠিন হবে। তা সত্ত্বেও এক পয়েন্ট পেয়েছি। এত দিন শীর্ষে ওঠার চেষ্টা করতাম। উঠেছি। এখন আমাদের ওই জায়গাটা ধরে রাখতে হবে।’’ আজ বৃহস্পতিবার লুধিয়ানা যাচ্ছে মোহনবাগান। মিনার্ভা পঞ্জাবের বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচ শনিবার। ওই দিনই আবার আইজলের সঙ্গে ম্যাচ রয়েছে গোয়ার চার্চিল ব্রাদার্সের।
মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, প্রীতম কোটাল, আনাস এডাথোডিকা, এদুয়ার্দো ফেরিরা, রাজু গায়কোয়াড়, ইউসা কাতসুমি, শেহনাজ সিংহ, আজহারউদ্দিন মল্লিক (প্রবীর দাশ), সনি নর্দে, বলবন্ত সিংহ (জেজে লালপেখলুয়া), ড্যারেল ডাফি।