দলকে জেতানোর পরে কেক মাখলেন ডিকা। নিজস্ব চিত্র
আই লিগের খেতাবি দৌড়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন মোহনবাগানের। নেপথ্যে দিপান্দা ডিকা-আক্রম মোঘরাবি যুগলবন্দি।
যুবভারতীতে ছয় দিন আগে সবুজ-মেরুন শিবিরে আঁধার নামিয়েছিল গোকুলম এফসি। কেরলের সেই দলই আবার কোঝিকোড়ে চব্বিশ ঘণ্টা আগে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে বদলে দিয়েছে পরিস্থিতি। রবিবার মণিপুরের ইম্ফলে খুয়ান লামপাক স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জিতে আক্রমরা শুধু দুরন্ত প্রত্যাবর্তনই ঘটাননি, নেরোকা-র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথেও কাঁটা ছড়িয়ে দিলেন।
ম্যাচের শুরুতেই অবশ্য বিপর্যয় নেমে আসে সবুজ-মেরুন শিবিরে। ১৬ মিনিটে গোল করে নেরোকা-কে এগিয়ে দেন সুভাষ সিংহ। জন্মদিনে পেনাল্টি থেকে গোল করে ২১ মিনিটে মোহনবাগানকে ম্যাচে ফেরান ডিকা। তিন মিনিটের মধ্যে ফের ধাক্কা। এ বার ফেলিক্স চিডি গোল করে এগিয়ে দেন নেরোকা-কে। ৩০ মিনিটে ফের ডিকা গোল করে সমতা ফেরান। আর প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন আক্রম মোঘরাভি। ২৯ মিনিটে পাঁচ গোলের এই থ্রিলার আই লিগের অঙ্কটাই বদলে দিল।
শনিবার গোকুলমের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার পরে ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল অতিরক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে ডুবেছিলেন। নেরোকার বিরুদ্ধে মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী কিন্তু সেই ভুল করেননি। দ্বিতীয়ার্ধেও তাঁর অস্ত্র ছিল আক্রমণাত্মক ফুটবল। ফলশ্রুতি, চলতি আই লিগে পাহাড় থেকে সাত পয়েন্ট অর্জন করল মোহনবাগান। শিলংয়ে লাজং এফসি-র পরে এ বার নেরোকা-র বিরুদ্ধে জয়। শুধু আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে ড্র করেছিলেন ডিকা-রা। গত তিন বছরে সঞ্জয় সেনের কোচিংয়ে কিন্তু পাহাড় থেকে বারবার ধাক্কা খেয়েই ফিরেছে মোহনবাগান। ম্যাচের পরে ইম্ফল থেকে ফোনে শঙ্করলাল বললেন, ‘‘অবিশ্বাস্য খেলেছে ছেলেরা। নেরোকা-র ঘরের মাঠে দু’বার পিছিয়ে গিয়েও দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ছেলেরা। আই লিগে সেরা ম্যাচ খেলল ওরা।’’
আই লিগে খেতাবি দৌড়ে ফিরে এলেও মোহনবাগানের ভবিষ্যৎ অবশ্য নির্ভর করছে মিনার্ভা এফসি ও ইস্টবেঙ্গলের উপর। কী ভাবে? এই মুহূর্তে ১৫ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে চার নম্বরে মোহনবাগান। বাকি আরও তিনটি ম্যাচ। সব ম্যাচ জিতলে মোহনবাগানের পয়েন্ট হবে ৩৩। মিনার্ভা ১৪ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের দ্বিতীয় স্থানে। শেষ চারটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে হারলে মিনার্ভা শেষ করবে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে। তা হলেও মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না। কারণ, হারতে হবে ইস্টবেঙ্গলকেও। ১৫ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবলে তিন নম্বরে মহম্মদ আল আমনা-র। শেষ তিনটি ম্যাচ জিতলে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবে ইস্টবেঙ্গলই। মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হতে পারে যদি ডুডু ওমাগবেমি-রা অন্তত একটা ম্যাচ হারেন। তবে সেটা নেরোকা-র বিরুদ্ধে হারলে হবে না। কারণ, নেরোকা তখন ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে টপকে যাবে মোহনবাগানকে।
সবুজ-মেরুন কোচ অবশ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন না। ম্যাচের পরে ইম্ফল থেকে ফোনে বললেন, ‘‘অলৌকিক কিছু না ঘটলে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব নয়। গোকুলমের বিরুদ্ধে হারের পরেই বুঝে গিয়েছিলাম, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা শেষ।’’
মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অরিজিৎ বাগুই, এজে কিংগসলে, কিংশুক দেবনাথ, রিকি লাল্লাওমাওমা, নিখিল কদম (রেনিয়ার ফার্নান্দেজ), ইউতা কিনোয়াকি, ক্যামেরন ওয়াটসন, আজহারউদ্দিন মল্লিক (শেখ ফৈয়জ), আক্রম মোঘরাবি ও দিপান্দা ডিকা (রানা ঘরামি)।