আই লিগ

খেতাবের দৌড়ে আরও পিছোলেন সনিরা, ম্যাচ হেরে ইস্তফা মোহনবাগান কোচের

এক বছর আগে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আই লিগের ম্যাচ হেরে মোহনবাগান কোচের পদ থেকে সরেছিলেন সঞ্জয় সেন।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৮
Share:

হতাশ: গোল করেও দলকে জেতাতে ব্যর্থ সনি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মোহনবাগান ১ • রিয়াল কাশ্মীর ২

Advertisement

যত ঝামেলা জানুয়ারিতেই!

এক বছর আগে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আই লিগের ম্যাচ হেরে মোহনবাগান কোচের পদ থেকে সরেছিলেন সঞ্জয় সেন। বছর পার হতে না হতেই রবিবার রিয়াল কাশ্মীরের কাছে ম্যাচ হেরে নাটকীয় ভাবে পদত্যাগ করলেন বর্তমান মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী।

Advertisement

সবুজ-মেরুন শিবিরের কোচ রবিবার যখন রিয়াল কাশ্মীরের কাছে ১-২ হেরে সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন, তখন চোখেমুখে হতাশা। কাঁধ ঝুলে গিয়েছে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতেই বলে দেন, ‘‘কিছুতেই এই দলটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমি দাঁড় করাতে পারছি না। টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছি আর কোচ হিসেবে থাকতে চাই না। তবে বুধবার দলের ম্যাচ রয়েছে। কর্তাদের জানিয়েছি, নতুন কোচ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত কাজ করে যাব।’’

তবে মোহনবাগান কর্তারা কোচের ইস্তফা প্রদানের ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই তা গ্রহণ করে নেন। রাতেই ক্লাবের সহ-সচিব বললেন, ‘‘শঙ্করলালের উপর হয়তো চাপ বেড়ে যাচ্ছিল। দ্রুত নতুন কোচের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে।’’

এ বারের আই লিগে ৬টি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলেছে শঙ্করলালের দল। জয় মাত্র একটিতে। ১১ ম্যাচে যে ১৪ গোল খেয়েছে মোহনবাগান তার ১১টিই যুবভারতীতে। তা হলে ঘরের মাঠে খেলতে নামলে মোহনবাগানের হচ্ছে না কী? পদত্যাগী মোহনবাগান কোচের অসহায় উত্তর, ‘‘অনেক অদলবদল এবং চেষ্টা করেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এই দলের ভাল গুণ নিশ্চয়ই রয়েছে। সেটা আমি হয়তো এখন ধরতে পারছি না। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের মতো দলে পারফরম্যান্স না থাকলে তো সরে দাঁড়াতেই হয়।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘প্রথম স্থানে থাকা চেন্নাই সিটি এফসি-ও তো ১৩ গোল খেয়েছে। কিন্তু করেছে ২৫ গোল। সেখানে আমরা করেছি ১৪ গোল।’’ এ দিন জিতে আই লিগে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল রিয়াল কাশ্মীর। ১১ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ২১। সমসংখ্যক ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে মোহনবাগান। আই লিগ ক্রমশ দূরে সরছে তাদের থেকে।

গত সেপ্টেম্বরেও ডিকা-হেনরি যুগলবন্দি কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ কয়েক মরসুম পরে মোহনবাগানকে কলকাতা লিগ দিয়ে দর্শকদের নয়নের মণি হয়েছিলেন শঙ্করলাল। এ দিন তিনিই মোহনবাগান ছাড়লেন সমর্থকদের চোখের বালি হয়ে। উঠল ‘গো ব্যাক শঙ্করলাল’ ধ্বনিও। মাত্র তিন মাসের মধ্যে কী এমন ঘটল যে এই বঙ্গসন্তান কোচের প্রতি মোহভঙ্গ হল সবুজ-মেরুন জনতার?

রিয়াল কাশ্মীর কোচ ডেভিড রবার্টসন ইস্টবেঙ্গলের মতো মোহনবাগানের বিরুদ্ধেও মাঝমাঠে পাঁচজনকে রেখে প্রতি-আক্রমণে গোলের রাস্তা খুলতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে সফল একদা স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের শিষ্য। ৩৩ মিনিটে যখন তাঁর পুত্র মেসন রবার্টসন প্রথম গোল করছেন তখন কোথায় মোহনবাগানের দুই স্টপার কিংসলে ও কিমকিমা? মেসনের দ্বিতীয় গোলের সময়ও কিমকিমা ধরতে পারেননি তাঁকে। চোট সারিয়ে এ দিন নেমে ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত গোলে সমতা ফিরিয়েছিলেন সনি নর্দে। মোহনবাগান কোচ সেই সনির গতি ও পাস কাজে লাগিয়ে দুই প্রান্ত ধরে আক্রমণে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার বদলে মাঝখান দিয়ে লম্বা বল তুলে খেলার রাস্তায় হাঁটেন। যা আটকে দিচ্ছিলেন বিপক্ষের দীর্ঘদেহী ফুটবলাররা।

আই লিগের প্রথম থেকেই কিমা-কিংসলের বোঝাপড়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। মোহনবাগান কোচ তা সারাতে ব্যর্থ। দল হিসেবে মোহনবাগান দানা বাঁধেনি কখনও। মেহতাব হোসেনদের মতো বর্ষীয়ানদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাননি। হয়তো তারই মাসুল গুণতে হল তাঁকে।

পরবর্তী কোচ কে? এ দিন খেলা দেখতে গিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। আলোচনায় তিনি ছাড়াও আরও কয়েকটি নাম ভাসছে। যদিও এখনও কিছুই চূড়ান্ত নয়।

মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অরিজিৎ বাগুই, লালছাওয়ান কিমা, কিংসলে ওবুমনেমে, অভিষেক আম্বেকর, ইউতা কিনোয়াকি, লালরামজ়ওভা খিয়াংতে (শেখ ফৈয়জ), ওমর এলহুসেইনি (দিপান্দা ডিকা), সৌরভ দাস, সনি নর্দে, হেনরি কিসেক্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন