সনি নর্ডি। মাঠে ফিরেই গোল। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
মোহনবাগান-২ : কলম্বো এফসি-১
(সনি, ডাফি) (ইয়াপো)
ভবিষ্যদ্বাণীটা কয়েক দিন আগেই নাকি করেছিলেন মোহনবাগানের শ্রীলঙ্কান প্রাক্তনী সম্পথ পেরিরা।
কলম্বো সফররত বাগানের কোনও এক কর্তাকে প্রথম ম্যাচে হারের পর তিনি নাকি বলে দেন, ‘‘একেই পিছিয়ে গিয়েছি। কলকাতায় বাগান টিমে আবার সনি ঢুকে যাবে! জিতে ফেরা শক্ত।’’
মঙ্গলবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে সনির গোলটার সময় প্রেসবক্স থেকে এক ঝলক দেখা গেল বাগান কোচ সঞ্জয় সেনকে। হাইতিয়ানের গোল দেখে বাগান কোচের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত নিজের থেকেই কিছুটা উঠে গিয়েছিল। সঞ্জয় যদিও পরক্ষণেই তা নামিয়ে নিলেন। বাগান কোচ উচ্ছ্বাস গোপন করতে পারেন। কিন্তু এ দিনের ম্যাচের পর তাঁর শরীরী ভাষা এটা বুঝিয়ে দিচ্ছে বড় ম্যাচের জন্য তাঁর ‘পাশুপাত’ সনি নর্ডি পুরোপুরি ফর্মে।
বাগানের তারকা ফরোয়ার্ড এ দিন গোল করলেন, করালেন। আর বাড়ি যাওয়ার সময় ডার্বির আবহ জমিয়ে দিলেন লাল-হলুদে তাঁর দেশোয়ালী প্রতিপক্ষ ওয়েডসনকে নিয়ে মন্তব্য করে। ‘‘ভারতে এসে আই লিগ, ফেড কাপ জিতেছি। ওয়েডসন সদ্য এসেছে। ভাল প্লেয়ার। ওকে সময় দিতে হবে।’’ মাঠ ফেরত বাগান সমর্থকদের কেউ কেউ এ কথায় জোশ পেয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে লিখতে শুরু করে দেন, ‘‘ওয়েডসন, তুমি তো ভাই ভারতে নতুন, আগে আমার মতো ট্রফি জিতে দেখাও।’’—এটাই নাকি সনি বলতে চেয়েছেন। সনি নিজে যদিও সমর্থকদের এই ব্যাখ্যা কানে যাওয়ার পর কিছুটা বিরক্ত।
বাগানের হয়ে এ দিন মরসুমের চতুর্থ ম্যাচটি খেলতে নেমেছিলেন সনি। এর আগে পুণেতে ডিএসকে-র বিরুদ্ধে নির্মল ছেত্রীর কাছে আটকে যাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে টুকরোটাকরা সমালোচনা শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁর সমালোচকদের কেউ কেউ। কিন্তু এ দিন এক ঘণ্টা মাঠে থেকে সনি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি রয়েছেন স্বমহিমাতেই। ঝলমলে মুখে বাড়ি ফেরার সময় নিজেও বললেন সে কথা। ‘‘গত দু’ম্যাচ খেলতে পারিনি। নিজেও এই ম্যাচে গোল চেয়েছিলাম। ডার্বির আগে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’’ বাগানের প্রাণভোমরা এখনও ডার্বিতে গোল পাননি। সে কথা বিলক্ষণ জানেন বলেই পরক্ষণে বলে ফেলেন, ‘‘ভারতে এসেছি ট্রফি জিততে, শুধু ডার্বিতে গোল করতে নয়।’’
বাগানের দু’টি গোলেই সনির অবদান। প্রথম গোল নিজের। ডাফির পাস থেকে। পরেরটা আবার উল্টো। সনির পাস থেকে ডাফির গোল। কলম্বোর লেফট ব্যাক চামিরাকে পিছনে ফেলে স্কোরিং জোনে যে বল তিনি বাড়িয়েছিলেন ডাফিকে, সেখান থেকে গোল না করতে পারাটাই অবশ্য অন্যায়।
বাগান কোচ ২-০ এগিয়ে যাওয়ার পরেই তুলে নেন তাঁর দুই গোলদাতাকে। হয়তো ডার্বির আগে টিমের দুই তারকাকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। সনির পরিবর্ত হিসেবে নামা বলবন্ত সিংহ পেনাল্টি নষ্ট না করলে ব্যবধান আরও বাড়ত। অ্যাওয়ে ম্যাচ ২-১ জেতায় এবং এ দিনের জয়ের ফলে দুই পর্ব মিলিয়ে ৪-২ জিতে এএফসি কাপের পরের পর্বে নিজেদের জায়গা পাকা করে নিল সঞ্জয় সেনের দল। বাগানের পরের প্রতিপক্ষ মলদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়া। যাদের বিরুদ্ধে সনিদের ম্যাচ ২১ ফেব্রুয়ারি মলদ্বীপে। আর ২৮ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্র সরোবরে।
ম্যাচের আগে কলম্বো কোচ কিছুটা চনমনে মেজাজে ছিলেন। কারণ ভিসা সমস্যা কাটিয়ে এ দিন মাঠে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর তিন বিদেশিই। বাগান কোচ তাও এই ম্যাচ নিয়ে বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে চাননি। তাই আইএসএলে দিল্লির হয়ে রাইট ব্যাকে খেলা সৌভিক চক্রবর্তীকে তিনি নামিয়ে দিয়েছিলেন প্রীতম কোটালের জায়গায়।
এ দিন জিতে ডার্বির মহড়া সসম্মানে পাস করে গেলেও ওয়েডসনদের মুখে হাসিও রেখে গেলেন সনিরা। এ দিনও কিন্তু বাগানের দুই স্টপারের মাঝে বেশ কয়েকবার ফাঁকফোকর তৈরি হল। একই অবস্থা সাইডব্যাকদের সঙ্গে স্টপারদের। ডিফেন্ডাররাও নিজেদের মধ্যে কভারিংয়ে গণ্ডগোল করলেন। মাঝমাঠে ডায়াগোনাল কভারিং, স্ন্যাচিং শেষের দিকে অদৃশ্য। যে সুযোগে কলম্বোর টিমের হয়ে শেষ বেলায় ব্যবধান কমালেন তাঁদের আইভরিয়ান মিডিও সেকা ইয়াপো। এই সময় প্রণয়রা মাঝমাঠে কিছু মিসপাসও করলেন। কলম্বো কোচও ম্যাচের শেষে বলে গেলেন বাগান-রক্ষণের দুর্দশার কথা।
ডার্বির আগে যা ট্রেভর মর্গ্যানের টিমের মুখে নিশ্চয়ই হাসি ফুটিয়েছে।
মোহনবাগান: শিল্টন, সৌভিক চক্রবর্তী, বিক্রমজিৎ সিংহ, আনাস, সৌভিক ঘোষ, কাতসুমি (আজহারউদ্দিন), প্রণয়, বিক্রমজিৎ, সনি (বলবন্ত), জেজে, ডাফি (রেইনার)।