ত্রাতা: সেই মূহূর্ত। মুম্বই এফ সি-র বিরুদ্ধে গোল করে হার বাঁচাচ্ছেন বলবন্ত। দেখছেন সবুজ-মেরুন অধিনায়ক কাতসুমি ইউসা। বুধবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ২ : মুম্বই এফ সি ২
সরোবরের গ্যালারিতে যখন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা নাগাড়ে নানা সুরে গান গেয়ে যান, তখন মনে হয় মাদ্রিদ বা সাওপাওলোর কোনও স্টেডিয়াম।
ম্যাচ অমীমাংসিত থাকার পরও যখন আবির ওড়ে আকাশে তখন বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়, এঁদের জন্যই বাংলায় ফুটবল বেঁচে আছে।
বিদেশের অনুকরণে কলকাতার মেট্রো স্টেশনে দলে দলে মাঠে আসা তরুণ-তরুণীদের গালে-হাতে রং মেখে ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকা দেখে মনে হয় পরিবর্তন হয়তো আসছে।
কিন্তু বার্সেলোনা, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বা রিয়াল মাদ্রিদের মতো এখনকার সমর্থকরা নিজেদের বদলাতে শুরু করলেও তাঁদের টিমের খেলার ছবিটা যে বদলায় না।
হারা বা ড্র করাটা বড় কথা নয়। সব ম্যাচ সব দল জিতবে সেটাও হয় না। কিন্তু এত মিস পাস, এত গোল নষ্ট! সেট পিসের এরকম দৈন্য! গোলের সামনে সাত-আট জনকে দাঁড় করিয়ে গোল বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা—আই লিগের মতো দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুনার্মেন্টে এগুলো কিন্তু বদলায়নি। বুধবারের বিকেলে মোহনবাগান বনাম মুম্বই এফ সি ম্যাচের ক্যানভাসেও এসব হাজির।
লিগ মাঝপথ পেরিয়ে ঢলে পড়ছে শেষের দিকে। জমছে খেতাবের লড়াইও। এখনও দুই ‘স’—সঞ্জয় সেন আর সন্তোষ কাশ্যপের টিমের নানা জায়গায় বড় বড় ক্ষত। যা বোজানোর ওষুধ নেই দুই কোচের হাতেই। গোয়ার পর মুম্বইয়ের বাধাও টপকাতে পারলেন না সনি-কাতসুমি-জেজারা। শুরুতে ১-০ এগিয়ে যাওয়ার পরও মোহনবাগান পিছিয়ে পড়ল ১-২ তে। এক মিনিটের ব্যবধানে দু’গোল হজম। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে এদুয়ার্দো-আনাসদের গোল হজম। পরপর দু’ম্যাচে এরকম বিশ্রী চার গোল খাওয়া। গত আড়াই বছরের কোচিংয়ে থাকা সঞ্জয়ের টিমে কখনও হয়নি। নিজে রক্ষণে খেলতেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তাঁর টিমের ডিফেন্সের দুর্দশা নিয়ে প্রশ্ন করতেই কেমন যেন অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলেন তিনি। ‘‘এখন সমালোচনা করে লাভ নেই। গোল করেও গোল খাচ্ছি। আর যাতে না হয় তা দেখতে হবে। আমি আশাবাদী।’’ কিন্তু কোচের কথা শোনে কে? এ দিনই তো টিম বাস বেরোনোর সময় মৃদু বিক্ষোভ হল।
এগিয়ে যাওয়ার পরও সন্তোষের টিম রক্ষণাত্মক ফুটবলে না ফিরল সনিদের এ দিনও মাথা নিচু করে বাড়ি ফেরার কথা। খেতাবেরও পঞ্চত্ব প্রাপ্তি হয়ে যেত। প্রথমার্ধে তাঁর টিম এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মুম্বই কোচ কেন গোলের মুখ বন্ধ করতে রক্ষণে ছয় জনকে দাঁড় করিয়ে দিলেন কে জানে? ফলে কুঁকড়ে থাকা বলবন্ত-কাতসুমিরা তেড়েফুঁড়ে পাল্টা ঝাপটা দেওয়ার সুযোগ পেলেন। আর তারই সুফল পেল মোহনবাগান। ম্যাচ শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে বলবন্ত সিংহের সোনার হেড খেতাবের লড়াইতে রেখে দিল মোহনবাগানকে। সঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘আমরা খেতাবের লড়াইতে তো রয়েছি। পরের সাত ম্যাচের ছ’টা জিততে পারলেই খেতাব।’’ কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে খেতাব জেতা ক্রমশ কঠিন হচ্ছে সনিদের। এরপর আই লিগে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে দু’টো, ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ডার্বি, লিগ শীর্ষে থাকা আইজলের সঙ্গে তাদের মাঠে গিয়ে খেলা-- কাঁটা বিছানো পথ রয়েছে সামনে। এরকম রক্ষণ নিয়ে সঞ্জয় কী করবেন তিনিই জানেন। তার উপর চোটের জন্য পরের বেঙ্গালুরু ম্যাচে যেতে পারছেন না দেবজিৎ মজুমদার।
এ দিনের ম্যাচের কাটাছেঁড়া করতে বসলে বলা যায়, দু’টো অর্ধ ছিল দু’দলের দখলে। প্রথমার্ধে ২-১ নয়, ৪-১ এ এগিয়ে থাকতেই পারতেন ভিক্টোরিনো, থই সিংহরা। পরের অর্ধে অবশ্য উল্টো ছবি। জেজে অবিশ্বাস্য দুটো গোল নষ্ট না করলে জিততে পারতেন সনিরা। নিজের কিপারকে মেহরাজ ব্যাক পাস করায় মুম্বই পেনাল্টি বক্সে একটি ফ্রিকিক পেয়েছিলেন কাতসুমিরা। সেটাও কাজে লাগাতে পারেননি তাঁরা। মুম্বই কোচ সন্তোষ ম্যাচের পর স্বীকার করলেন, ‘‘মোহনবাগান বলেই ফিরে আসতে পেরেছে। তবে রেফারিং খুব খারাপ হয়েছে। জঘন্য।’’
কিন্তু মেঘলা আকাশ থেকেও তো মাঝেমধ্যে আলো ঠিকরে বেরোয়। সঞ্জয়ের টিমের নানা আঁধারের মধ্যেও সনি নর্দে যেন সেই আলো। প্রীতম কোটাল ও বলবন্তের, দু’টো গোলের পাসই এল সনির পা থেকে। গত দু’বছরের পরিসংখ্যান বলছে, সনি খেললেই সূর্য মেরুন হয়ে আলো ছড়ায় মোহনবাগানে। এখন দেখার এ বার কী হয়।
মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার (শিল্টন পাল), প্রীতম কোটাল, আনাস এডাথোডিকা, এদুয়ার্দো ফেরেইরা, শুভাশিস বসু, কাতসুমি ইউসা, শেহনাজ সিংহ (প্রবীর দাস), সৌভিক চক্রবর্তী (বিক্রমজিৎ সিংহ), সনি নর্দে, জেজে লালপেখলুয়া, বলবন্ত সিংহ।