গোলের মধ্যে বাগানের তিন বিদেশি। সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে অভিষেকেই গোল লুসিয়ানো সাব্রোসার।
মোহনবাগান-৪ (কাতসুমি, গ্লেন, লুসিয়ানো, বলবন্ত)
সালগাওকর-২ (ডাফি, গুরজিন্দর)
ডেড আর অ্যালাইভ! গোদা বাংলায় মৃতরা এখনও জীবিত।
জেমস বন্ডের ‘স্কাইফল’ সিনেমার শুরু এই কথাটি দিয়ে। বারাসতে শনিবার সালগাওকরকে ৪-২ হারিয়ে দুই বাগান সমর্থক যে সে রকম কথাই বলে বসলেন! লুসিয়ানোরা গ্যালারিকে ভিকট্রি সাইন দেখিয়ে সবে ড্রেসিংরুমে গিয়েছেন। সেই জোশে কি না জানা নেই, মিক্সড জোনে এক সবুজ-মেরুন সমর্থক তাঁর সঙ্গীকে বলে বসলেন, ‘‘৬ সেপ্টেম্বর দিনটা সবার কাছে ‘ডেড’ হয়ে গেলেও আমাদের কাছে ‘অ্যালাইভ’। সামনের শনিবার এ রকমই চার গোল চাই বদলার জন্য।’’
সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পেজে সে দিন ইস্টবেঙ্গলের কাছে চার গোল খাওয়ার পর থেকেই তো বাগান সমথর্করা শুনে আসছে—বাগানে বাজছে বিপদ-ঘণ্টা ডং-ডং-ডং। প্রেস কনফারেন্সে আসা বাগান কোচ সঞ্জয় সেনের দিকে তাই ম্যাচ শেষে ছুটে গেল প্রশ্নটা। কলকাতা লিগের ডার্বিতে চার গোলে হারের ব্যাপারটা...। প্রশ্নকর্তাকে থামিয়ে দেন আই লিগ চ্যাম্পিয়ন বাগান কোচ। বলে দেন, ‘‘ওগুলো আমরা মনে রাখছি না। আর ডার্বি নিয়ে এই মুহূর্তে কিছুই ভাবছি না। সোমবার থেকে ভাবা যাবে।’’
কিন্তু সবুজ-মেরুন ড্রেসিংরুমে সেই স্মৃতি যে ফল্গুর মতোই জেগে তা তো বাগান সমর্থকরাই বলছেন। সঞ্জয় সেন-ই বা সেই বৃত্তের বাইরে যাবেন কী ভাবে? উঠে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘গত বছর আই লিগে আমরাও ওদের হারিয়েছিলাম। পিছনে তাকাতে চাই না।’’
জ্যাকিচন্দ, ডাফিদের হারিয়ে বাগান কোচ এ দিন জোগাড় করে নিলেন ডার্বি-তরিতে ওঠার পারানিও। বড়ম্যাচের আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সেরে নিলেন মোহনবাগান কোচ। যা তাঁকে এবং তাঁর ছেলেদের আগামী শনিবার বাঙালির চির ঐতিহ্যের মহারণে নামার আগে চনমনে রাখবে। সবুজ-মেরুন কোচ তাই অতীতকে মর্গে রেখে বলতেই পারেন, ‘‘আমার বরং সমস্যা কাকে রেখে কাকে বাদ দেব! আজই তো দেখলেন রাজু, জেজেদের বেঞ্চে রেখে নামতে হচ্ছে।’’
কিন্তু বড় ম্যাচের এক সপ্তাহ আগে চার গোল যদি মোহনবাগানে নতুন ‘আশা’ জাগায় তা হলে দু’গোল হজম ‘আশঙ্কা’ও বাড়িয়ে দিচ্ছে। মুম্বইয়ে বসে র্যান্টি-ডংরা কিন্তু দেখে ফেলেছেন এ দিনও বাগানের গোল হজম। প্রথম ম্যাচে ৩-১। এ দিন ৪-২। গোল দেওয়ার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোল খাওয়াও বাড়ছে। যা লুসিয়ানো আসার পরেও কমল না।
হাফটাইমে তিন গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় বাগান কোচ ছেলেদের বলেছিলেন গোল বাড়াতে। যাতে জেজে, রাজুদের দেখে নিতে পারেন। যাতে ডার্বির আগে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা যায়। এর পরেই কর্নার থেকে হেডে বলবন্তের ছবির মতো গোল। কিন্তু গোল বাড়াতে গিয়ে আবেগ যে পেশাদারিত্বকে ছাপিয়ে গেল। চার গোল দিয়ে তাই হঠাৎই আত্মতুষ্ট প্রীতম কোটালরা।
আক্রমণে উঠে গিয়ে নামতে দেরি করলেন বাগানের দুই সাইডব্যাক। মাঝমাঠেও বাড়ল ফাঁকফোকড়। গোয়ানদের আক্রমণের সময় কাতসুমিরাও মাঝমাঠে ভিতরে ঢুকে গিয়ে ট্র্যাফিক জ্যাম করতে ব্যর্থ। কখনও কখনও লুসিয়ানোকে কভারিং দিতে পারলেন না কিংশুক। এই ফাঁকেই ডাফির গোল। শেষ বেলায় গুরজিন্দরের গোলের সময়ও বাগান মিডফিল্ড ঠিক সময় ব্লকিং করতে পারেনি। গ্লেনদের চার গোল দেখে আতঙ্ক বাড়লেও শেষ বেলায় বাগান ডিফেন্সের হাল দেখে মুম্বইয়ের হোটেলে বসা ডংয়ের মিষ্টি মুখে হয়তো দুষ্টু হাসি। একে সালগাওকরের ড্রেসিংরুম চোট-আঘাতে জর্জরিত। বিদেশিরা থেকেও নেই। নেই সেত্যাসেনও। তাতেও চার গোলে এগিয়ে দু’গোল হজম করলে ডার্বির আগে আশঙ্কা অমূলক নয়।
তবে সালগাওকরের দুর্বলতার সুযোগেই এ দিন শুরুতে কাতসুমি গোল দিতেই অগাস্টিনদের ডিফেন্সের লকগেট সেই যে খুলে গেল, তা বন্ধ হল ৪৮ মিনিটে গিয়ে। ততক্ষণে চার গোল করে ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলেছে সঞ্জয়ের টিম।
বাগান শিবিরের অবশ্য দাবি, এ দিনই প্রথম খেললেন লুসিয়ানো-কিংশুক। ডার্বির আগে ভুলত্রুটি ঠিক শুধরে নেওয়া যাবে। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, তৈরি হয়ে যাবে টিম মোহনবাগান। ডং-র্যান্টিদের বিরুদ্ধে লুসিয়ানোর নিখুঁত অ্যান্টিসিপেশনই নেতৃত্ব দিয়ে খেলাবে বাগান ডিফেন্সকে।
আর সেই ডং-ডং-ডং? শুনে হাসেন এ দিনের ম্যাচ সেরা বাগানের ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার। বললেন, ‘‘আমাদের ডিফেন্সে কাউকে তাণ্ডব করতে দেব না। তার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে। চার গোল খাওয়ার সেই ম্যাচটার কথা শুনেছি। এখনও তো এক সপ্তাহ সময় রয়েছে।’’
এ দিন যেমন আরব সাগর পারের হোটেলে বসে মোহনবাগানের চার গোল দিয়ে দু’গোল খাওয়া দেখে নিলেন বিশ্বজিৎ, তেমনই রবিবার ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকবেন বাগান কোচও। বিশ্বজিৎ মুম্বই থেকে তিন পয়েন্ট তুলে ডার্বির আগে ছ’পয়েন্ট নিয়ে শহরে ফিরলে তার পরেই তো আসল খেলা।
মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, কিংশুক (রাজু), লুসিয়ানো, ধনচন্দ্র, আজহার (প্রবীর), সৌভিক, প্রণয়, কাতসুমি, বলবন্ত (জেজে), গ্লেন।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।