বিঘ্ন: দর্শকদের রং মশালের ধোঁয়ায় বন্ধ ম্যাচ। বিস্মিত ফুটবলারেরা। রবিবার মোহনবাগান মাঠে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ৩ • টালিগঞ্জ ০
বছর আষ্টেক আগের কথা। অশান্ত জঙ্গলমহলের চন্দ্রি গ্রাম থেকে একটি ছেলে মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব-১৪ দলে ট্রায়াল দিতে কলকাতায় চলে এসেছিল। প্রথম দিনই তার খেলা মুগ্ধ করেছিল নির্বাচকদের। কিন্তু প্রতিশ্রুতিমান মিডফিল্ডারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিস্মিত হন অনূর্ধ্ব-১৪ মোহনবাগানের কোচ অমিয় ঘোষ। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘ট্রায়াল তো এখন কয়েক দিন চলবে। কলকাতায় তুমি থাকবে কোথায়?’’ বছর তেরোর মিডফিল্ডারের জবাব ছিল, ‘‘চিন্তা করবেন না স্যর। হাওড়া স্টেশনে রাত কাটিয়ে সকালে ঠিক সময় মতোই মাঠে চলে আসব!’’
স্টেশনে অবশ্য রাত কাটাতে হয়নি। নিজের বাড়িতেই ছেলেটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন অমিয়বাবু। টানা তিন বছর রেখেছিলেন নিজের কাছে। সেই প্রতিশ্রুতিমান মিডফিল্ডারই এখন মোহনবাগানকে নয় বছর পরে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তিনি— পিন্টু মাহাতো। রবিবাসরীয় বিকেলে টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে দিপান্দা ডিকা, আজহারউদ্দিন মল্লিকের মতো তারকাদের ছাপিয়ে তিনিই নায়ক হয়ে উঠলেন। ম্যাচের পরে উচ্ছ্বসিত অমিয়বাবু বলছিলেন, ‘‘পিন্টু যদি নিজেকে ঠিক রাখতে পারে অনেক দূর যাবে। ও শুধু প্রতিশ্রুতিমান নয়, প্রচণ্ড লড়াকু। সহজে হাল ছাড়ে না।’’
পিন্টুর সৌজন্যেই ফের পাঁচ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করল মোহনবাগান। চব্বিশ ঘণ্টা আগে এরিয়ানকে হারিয়ে চার ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষে উঠে এসেছিল ইস্টবেঙ্গল। এ দিন তাই জিততেই হত মোহনবাগানকে। পিন্টুর নেতৃত্বে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিলেন ডিকারা। ম্যাচের ১০ মিনিটে পিন্টুকে ফাউল করেন টালিগঞ্জের এক ডিফেন্ডার। কিন্তু ডিকার পেনাল্টি বাঁচিয়ে দেন টালিগঞ্জ গোলকিপার শুভম রায়। সেই ডিকাই অবশ্য ২৯ মিনিটে অরিজিৎ বাগুইয়ের সেন্টারে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে প্রায়শ্চিত্ত করলেন। ৩৫ মিনিটে অরিজিতের কর্নার থেকেই হেডে গোল করেন আজহার। ৮৬ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে নেমে গোল করেন উইলিয়াম ফেলা। সবুজ-মেরুন জার্সিতে অভিষেক ম্যাচেই গোল করলেন তিনি। কিন্তু সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা মুগ্ধ পিন্টুর খেলায়।
নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-এর ভক্ত পিন্টু অবশ্য দর্শকদের উচ্ছ্বাসের মধ্যেও আশ্চর্যজনক ভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখলেন। মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডার্বির। ম্যাচ সম্প্রচারকারী চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোহনবাগানের নতুন নায়ক বলছিলেন, ‘‘ম্যাচের সেরার পুরস্কার বাবা ও মাকে উৎসর্গ করছি। তবে এখন উচ্ছ্বাসে গা ভাসালে চলবে না। এই ছন্দ ধরে রাখতে পারলে ডার্বিতে ভাল ফল করব।’’
মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী কিন্তু এখনই ডার্বি নিয়ে ভাবতে চান না। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘আমাদের পরের ম্যাচ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিরুদ্ধে। আপাতত সেটা নিয়ে ভাবছি।’’ তবে তিনি কিছুটা উদ্বিগ্ন কার্ড সমস্যায় পরের ম্যাচে কিংসলে ওবুমনেমে ও অরিজিৎকে পাওয়া যাবে না বলে।
চিন্তিত সবুজ-মেরুন কর্তারাও। তবে তা দলের খেলার জন্য নয়। মোহনবাগান মাঠের বদলে যাওয়া পরিবেশ নিয়ে। এ দিনও ম্যাচ চলাকালীন সদস্য গ্যালারিতে মদ্যপান করার অভিযোগে দুই সমর্থককে আটক করে পুলিশ। দুই, ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট চারেক আগে সমর্থকদের রং মশালের ধোঁয়ায় মাঠ ঢেকে যায়। রেফারি প্রায় মিনিট দু’য়েক খেলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন! তিন, মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্রের অভিযোগ, নির্বাচন পরিচালনার জন্য হাইকোর্ট যে তিন জন প্রাক্তন বিচারপতির কমিটি গড়েছে, তাদের আপত্তিতে ফুটবলারদের বেতন আটকে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আজ ফুটবলারদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা দিতে পারিনি।’’
উৎসবের মাঝেও অস্বস্তি!
মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, অরিজিৎ বাগুই (অ্যামে রানাডে), কিংসলে ওবুমনেমে, লাল কিমা, অভিষেক আম্বেকর, ব্রিটো পি এম (উইলিয়াম ফেলা), শিল্টন ডি’সিলভা (ড্যারেন কালদেইরা), সৌরভ দাস, পিন্টু মাহাতো, আজহারউদ্দিন মল্লিক ও দিপান্দা ডিকা।
টালিগঞ্জ অগ্রগামী: শুভম রায়, ফুলচাঁদ হেমব্রম (গোবিন্দ সিংহ), মহম্মদ সওকত, রিচার্ড আগুই, করণ থাপা, লাগো বেই, ডেভিড নাংতে, ড্যানিয়েল বিদেমি, অ্যান্টনি সোরেন (রাকেশ মাসি) গৌতম কুজুর (আনন্দ সিংহ) ও অসীম বিশ্বাস।