সনি-উড়ানে চেপে পাহাড়ের দিকে বাগান

বারাসতে বৃহস্পতিবার ম্যাচ শুরু থেকেই ছিল সনি-ময়। ম্যাচ শেষেও হাইতি স্ট্রাইকারকে এক বার ছোঁয়ার জন্য সে কী আকুতি ভক্তদের! সালগাওকরের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ের নায়ক জেজে ছিলেন মাঠে।

Advertisement

তানিয়া রায়

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০৪:১৩
Share:

বারাসতে বৃহস্পতিবারের সনি। -উৎপল সরকার

মোহনবাগান-৪ সালগাওকর-০
(কাতসুমি, সনি-২, জেজে) (দু’পর্ব মিলিয়ে ৭-২)

Advertisement

সনি-গ্রাসে গ্রহণ লাগল গোয়ার ক্লাবে।

বারাসতে বৃহস্পতিবার ম্যাচ শুরু থেকেই ছিল সনি-ময়। ম্যাচ শেষেও হাইতি স্ট্রাইকারকে এক বার ছোঁয়ার জন্য সে কী আকুতি ভক্তদের! সালগাওকরের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ের নায়ক জেজে ছিলেন মাঠে। গোল করেছেন এ দিনও। কাতসুমিও ছিলেন। জাপানি বোমাতেই তো ডারেল ডাফিদের দুর্গে প্রথম ফাটল ধরেছিল। তাতে কী? বাগান সব অর্থেই এখন সনি-ময়। ভারতীয় ক্রিকেট দলে যেমন বিরাট কোহালি।

Advertisement

সনি নর্ডি শুধু গোল করছেন না, গোল করিয়েও চলেছেন। পুরো মোহনবাগানকে সচল রাখছেন। তিনি যে বাগানের বটগাছ, যার ছায়ায় বাকি টিম আরামে রয়েছে, তা আরও এক বার প্রমাণ হল ফেড কাপের এই ফিরতি কোয়ার্টার ফাইনালে। নিটফল, সনি নামক উড়ানে চেপেই এ বার পাহাড় দখল অভিযানে চলল বাগান। ফেড কাপ সেমিফাইনালে সঞ্জয় সেনের দলের সামনে যে পাহাড়ি দল শিলং লাজং। যারা ইস্টবেঙ্গলকে শুরুতেই বিদায় করে দিয়েছে ফেড কাপ থেকে।

ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে গোয়ার ক্লাবের মনোভাব দেখে মনে হয়েছিল, বারাসতে লড়াইটা হবে ড্যারেল ডাফি বনাম সনি নর্ডির মধ্যে। সেয়ানে সেয়ানে। কিন্তু কোথায় ডাফিদের প্রতিরোধ! পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা? সনি-কাতসুমিদের একতরফা আক্রমণের ঝড়েই সদ্যসমাপ্ত আই লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ডাফি আর তাঁর টিম তো কার্যত উড়ে গেল। প্রথম আধ ঘণ্টা দেখে মনে হচ্ছিল, কলকাতা লিগের কোনও ছোট দলের বিরুদ্ধে খেলছে মোহনবাগান। যে দলগুলো সাধারণত গোল খাওয়া আটকাতে আট-নয়জন মিলে ডিফেন্স করে থাকে। সবটাই অবশ্য সদ্য চোট সারিয়ে ফেরা বাগানের হাইতি স্ট্রাইকারের সৌজন্যে। সনি-সূর্যের তেজ এতটাই বিস্তৃত ছিল বিপক্ষের উপর যে, বাগানের অন্যরাও ভাল খেললেও সব ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল। সনি যদিও ম্যাচ শেষে জয়গান গেয়ে গেলেন তাঁদের টিমগেমের। ‘‘আমি একা নই। আমাদের পুরো টিম ভাল খেলেছে। জিতেছে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। আমাদের সামনে এটাই শেষ সুযোগ এ মরসুমে ট্রফি জেতার। সেটা কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাই না।’’

নিজের প্রথম গোল করার পর যখন দু’হাত ছড়িয়ে কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে দৌড় লাগালেন সনি, তাঁর পিছনে পুরো টিম মোহনবাগান ছুটছে। দেখে মনে হচ্ছিল, সনি যেন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। কয়েক বছর আগে এ ভাবেই তো সবুজ তোতা ব্যারেটোর পিছনে ছুটত পুরো সবুজ-মেরুন টিম।

সোনালি কোঁকড়ানো চুল, ঘামে সপসপে ভেজা সবুজ-মেরুন জার্সি, পায়ে হলুদ বুট আর হাতে একই রঙের আর্ম ব্যান্ড— এ দিনের সনিকে দেখে মনে হচ্ছিল, কোনও অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে পাঁচ-দশের ছিপছিপে শরীরের ভেতর। বাগান কোচ সঞ্জয় ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বলেছিলেন, ‘‘ভাল ফুটবলের চেয়েও জেতাটা জরুরি। ভাল খেললেও কেউ মনে রাখে না, যদি না জিততে পারি।’’ সনি জোড়া গোল করে সঞ্জয়ের দলকে শুধু জেতালেনই না, অসাধারণ খেললেনও। দুর্দান্ত কিছু পাস বাড়িয়েছেন। দু’-তিনজনকে ড্রিবল করে গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। হ্যাটট্রিকও করতে পারতেন। যদি না কয়েকটা সুযোগ নষ্ট করতেন। বলছিলেন, ‘‘হ্যাটট্রিক করতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু হয়নি বলেও আফসোস নেই।’’

চোট সারিয়ে ফেরার লড়াইটা সহজ ছিল না সনির। তৃপ্ত মুখ নিয়ে বললেন, ‘‘খুব কঠিন লড়াই এটা। তবে গার্সিয়া, আমার বান্ধবী আর টিমমেটদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ওরা সবাই আমাকে উজ্জীবিত করেছে।’’ ম্যাচে সবচেয়ে বিস্ময়ের, সনির মতো ভয়ঙ্কর ফুটবলারের জন্য আলাদা কোনও স্ট্র্যাটেজি নেননি সালগাওকরের অস্থায়ী কোচ মারিও সোরেস। ফল হাতেনাতে পেয়েছেন। আফসোস করে গেলেন, ‘‘সনির কাছেই আমরা হারলাম অস্বীকার করে লাভ নেই। ওকে আটকানোর প্ল্যান ছিল আমাদের। কিন্তু সেটা কাজ করেনি।’’ সনির পারফরম্যান্সে মুগ্ধ সঞ্জয়ও। বরাবর টিমগেমে বিশ্বাসী বাগান কোচকে এ দিন বলতে শোনা গেল, ‘‘সনি আমাদের টিমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার, এটা মানতেই হবে।’’

সনি, কাতসুমির পর শেষ মুহূর্তে জেজেও গোল করেন। সব মিলিয়ে মোহনবাগানের আজ যা পারফরম্যান্স স্টার মার্কস পাচ্ছেই। কেবল এক বালতি দুধে একফোঁটা চোনা হয়ে থাকল বাগান ডিফেন্স। প্রীতম কোটালদের জন্য সালগাওকর দ্বিতীয়ার্ধে দু’-তিনটে নিশ্চিত গোলের তৈরি করে ফেলেছিল। এমনকী এমবার্গা, জ্যাকিচন্দ, গ্যাব্রিয়েলের শটগুলোর কোনওটা বারে, কোনওটা পোস্টে লেগে ফেরে। যা দেখে চিন্তিত সঞ্জয় বল গেলেন, ‘‘ডিফেন্স খারাপ খেলছে। তবে আমি চাইছি ওদেরই খেলিয়ে-খেলিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে। বসিয়ে দিলে আরও খারাপ হবে।’’

রবিবার লাজংয়ের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের প্রথম লেগ বারাসতে। যে হোম ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে রাখতে চাইছে বাগান। গত বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের এ বার খেতাবের দোরগোড়ায় পৌঁছেও ট্রফি হাতছাড়া হয়েছে। ফেড কাপেও বাগানকে চ্যাম্পিয়নের মতোই দেখাচ্ছে। দেখার, এ বারও কাপ আর ঠোঁটের মাঝে ফারাক থেকে যায় কি না!

মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, লুসিয়ানো, কিংশুক (রাজু), ধনচন্দ্র, কাতসুমি, বিক্রমজিৎ, লেনি (শৌভিক চক্রবর্তী), সনি (গ্লেন), জেজে, আজহারউদ্দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন