মোহনবাগানের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ আজ বিস্ময়-গোলের নায়কের 

বিশ্বকাপারদের সমীহ সঞ্জয়ের

চমকপ্রদ এবং অভিনব এই আবহে আজ শুক্রবার আই লিগে  মুখোমুখি হচ্ছে মোহনবাগান বনাম ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিশ্বকাপ তারকারা।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৮
Share:

আশা-আশঙ্কা: নাওরেমদের প্র্যাক্টিস।

মণিপুরে ধীরজ মৈরাংথেম জন্মানোর আগেই টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির হয়ে বিদেশে খেলে ফেলেছেন শিল্টন পাল।

Advertisement

কিংগসলে ওবুমেনেমে যে সময় নাইজিরিয়ার ক্লাবে চুটিয়ে খেলছেন তখন টালিগঞ্জের জিতেন্দ্র সিংহ হামাগুড়ি দিতে শিখেছে সদ্য।

আনসুমনানা ক্রোমা যে বছর ক্লাবের জার্সিতে প্রথম গোল করেন, তখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি ব্যারাকপুরের রহিম আলি।

Advertisement

চমকপ্রদ এবং অভিনব এই আবহে আজ শুক্রবার আই লিগে মুখোমুখি হচ্ছে মোহনবাগান বনাম ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিশ্বকাপ তারকারা। যেখানে অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে নানা ইতিহাসও!

প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে খেলে ধীরজ, জিতেন্দ্র, রহিমরা ইতিহাসে ঢুকে পড়েছে গত অক্টোবরে। এই শহরে না খেললেও ওই টিমের অনেকে ফুটবলারই পরিচিত মুখ টিভি-র সৌজন্যে। সেই ঐতিহাসিক টিমের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে প্রথম ভারতীয় হিসাবে জিকসন সিংহের একমাত্র বিশ্বকাপ-গোল, উঁকি দিচ্ছে নঙ্গাম্বা নাওরেমের ছয় জনকে কাটিয়ে মেসি-সুলভ গোলও। আই লিগের সবথেকে কমবয়সি ফুটবলার হিসাবে গোল করা জিতেন্দ্রও তো ইতিহাসে ঢুকে পড়েছে দু’দিন আগে।

সনি মাঠে নামলেও আজ ম্যাচে নেই।

এর বাইরেও আরও একটা ইতিহাস তৈরি হচ্ছে আজ দুপুরে মোহনবাগান মাঠে। কল্যাণী, বারাসাত, শিলিগুড়ি, সল্টলেক হয়ে আই লিগ প্রথম বার পা রাখছে ময়দানে। এবং সেটা সবুজ-মেরুন শিবিরে এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন পর্যন্ত বলে দিলেন, ‘‘ময়দানে আই লিগ ফেরার এই মূহূর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ম্যাচটা জিততেই হবে।’’

কিন্তু পালতোলা নৌকো ডোবাতে ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বা়ড়িছে সে’-র মতোই হাজির রহিম আলিরা। পর্তুগিজ কোচ লুইস নর্টন দে মাতোসের পাশে বসে নিজের ধাত্রীগৃহকেই তাই চ্যালেঞ্জ জানাল রহিম আলি। ‘‘আমি মোহনবাগানে খেলে বড় হয়েছি তো কী হয়েছে, কাল আমরা জেতার জন্য ঝাঁপাব। ভয় পাচ্ছি না কাউকে। শিলং ম্যাচের পর আমরা আলোচনাও করেছি এই ম্যাচটা নিয়ে।’’ রহিমের শরীরী ভাষার সঙ্গে মিলে যায় বিকেলে যুবভারতীতে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের অনুশীলন। দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থাকার পর একটা ঝকঝকে দল তৈরি করে ফেলেছেন মাতোস। যারা গোলার মতো শট করতে জানে, আক্রমণ বা রক্ষণে লোক বাড়িয়ে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতেও সিদ্ধহস্ত। আর সেটা জেনেই একশো সাতাশ বছরের পুরনো ক্লাবে শুরু হয়েছে গুঞ্জন ও শঙ্কা! আবার পয়েন্ট নষ্ট হবে না তো!

ডার্বি জেতার পর চারটে ম্যাচের একটায় শুধু জিতেছে সঞ্জয়-ব্রিগেড। বাকিগুলো ড্র। উল্টে পিছন থেকে টপকে সামনে চলে এসেছে ইস্টবেঙ্গল। এই অবস্থায় ষোলো-সতেরো বছর বয়সি বিশ্বকাপারদের যথেষ্ট সমীহই করছে মোহনবাগান। স্বয়ং সনি নর্দে পর্যন্ত বলে দিলেন, ‘‘খুব ভাল টিম। মাটিতে বল রেখে খেলে। পাঁচ-ছ’টা ছেলে তো ইউরোপে খেলার মতো প্রতিভাবান। পাঁচ-ছয়জনকে কাটিয়ে একটা ছেলে গোল করছে, সেটা কী কঠিন, আমি জানি।’’ চোটের জন্য হাইতি মিডিও নিজে খেলছেন না। কিন্তু বিকেলে অনুশীলনের পর টিম মিটিং করেছেন সতীর্থদের নিয়ে। সেখানে অধিনায়কের বার্তা, ‘‘বন্ধু, জয়ে ফিরতে হবে যে কোনও মূল্যেই।’’ ইন্ডিয়ান অ্যারোজের কোচ মাতোস আবার কলকাতায় প্রথমবার খেলতে এসে বেশ নস্ট্যালজিক। ‘‘জেতা-হারাটা বড় কথা নয়,পনেরো-কুড়ি হাজার দর্শকের সামনে ছেলেরা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলবে, এটাই তো বড় ব্যাপার।’’

মাতোস জানেন, ফুটবল মাঠে অভিজ্ঞতা এবং পেশাদারিত্ব কতটা প্রভাব ফেলে কিংবা টিমে বিদেশি না থাকলে কী সমস্যা হয়। এবং সেখানে মোহনবাগান কতটা এগিয়ে। কিন্তু বাস্তবটা হল, ক্রোমাদের কোচ সেই দলকেই সমীহ করছেন শিলং ম্যাচ দেখার পর। ‘‘ওদের তো হারানোর কিছু নেই। টিমটা একসঙ্গে বহু দিন খেলছে একজন বিদেশি কোচের কাছে। জেতাটা সহজ হবে না,’’ বলে দিয়েছেন সঞ্জয়।

বিদেশি কোচের টিমের বিরুদ্ধে সঞ্জয়ের ট্র্যাক রেকর্ড দুর্দান্ত। মাতোস এবং বিশ্বকাপারদের বিরুদ্ধে সেটা অক্ষত থাকে কি না সেটাই দেখার।

ছবি: সুমন বল্লভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন