ঘুরে দাঁড়াতে প্রাণপাত। বাগান প্র্যাকটিসে সনি, কাতসুমি।
আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এই মুহূর্তে মোহনবাগানের বড় বাধা কোন টিম?
একটুও না ভেবে সঞ্জয় সেন বলে দিলেন, ‘‘ভারত এফসি, স্পোর্টিং ক্লুব আর রয়্যাল ওয়াহিংডোই আমাদের সবচেয়ে বড় গাঁট। এই তিনটে টিমের বিরুদ্ধে এখনও আমরা খেলিনি।’’ কিন্তু রয়্যাল ওয়াহিংডো বাদে অন্য দু’টো টিম কার্যত লিগ তালিকায় শেষের দিকে। পারফরম্যান্স এখন পর্যন্ত আহামরি নয়। তবু ভারত এফসি এবং স্পোর্টিংকে ভয় পাওয়ার কারণ কী?
সঞ্জয়ের ব্যাখ্যা থেকে চারটে কারণ বেরিয়ে এল—
১) শেষ সারিতে থাকা টিমগুলোই সবচেয়ে বেশি চাপে ফেলে উপরের দিকের টিমগুলোকে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়।
২) ভারত এফসি ফেডারেশনের ফ্র্যাঞ্চাইজি টিম বলে ওদের অবনমন হবে না। রহিম নবি, গৌরমাঙ্গী সিংহ, অরিন্দম ভট্টাচার্যদের মতো ফুটবলার টিমে আছেন, যাঁরা মরসুমের শুরুতে ক্লাব পাননি। এঁরা প্রত্যেকে কলকাতা ময়দানে বড় টিমে খেলেছেন। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কিছু করার তাগিদটা তাই আরও বেশি।
৩) স্পোর্টিং চাইবে অবনমনের আওতা থেকে বেরোতে। বাগান-খারিজ ওডাফাও পুরনো ক্লাবের বিরুদ্ধে বড় ফ্যাক্টর।
৪) ওয়াহিংডো যে রকম ছন্দে রয়েছে, তাতে যে কোনও টিমেরই বড় গাঁট। বাগানের প্রাক্তন কোচ সন্তোষ কাশ্যপের টিমেরও লক্ষ্য আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া।
বাগানের বর্তমান কোচকে আবার ভারত এফসি কোচ স্টুয়ার্ড ওয়াটকিস ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলছেন, ‘‘হারতে নয়, অঘটন ঘটাতে এসেছি এখানে।’’ তুলনায় সঞ্জয় অনেক সংযত। মুখে সব টিমকে সমীহ করছেন। নিজেদের ব্যাকফুটে রেখে, প্রতিপক্ষকে এগিয়ে রাখছেন। হয়তো এটাই তাঁর মাইন্ড গেম।
ভারত এফসির শক্তিশালী রক্ষণ ভাঙতে আজ সঞ্জয় উইং প্লেকেই অস্ত্র করতে চান। সাধারণত ওয়াটকিসের টিম মাঝমাঠেই বিপক্ষের সব আক্রমণ আটকে দিতে চায়। দশ জনে ডিফেন্স করে। সেখান থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করা লক্ষ্য। ইস্টবেঙ্গল-ভারত এফসি ম্যাচের সিডি খুঁটিয়ে দেখে এই তথ্যগুলো নোটবুকে লিখে রেখেছেন বোয়াদের কোচ। আর কাতসুমি-সনি নর্ডিকে দু’দিকের উইংয়ে ব্যবহার করে গোলের মুখ খুলতে চাইছেন। প্র্যাকটিসের পর সনিও বলে গেলেন, ‘‘কাতসুমি, আমি, বোয়া আর বলবন্ত মিলে ওদের ডিফেন্স ভাঙব। ওদের খেলা ভাল করে দেখেছি। মূলত ডিফেন্সিভ ফুটবল খেললেও ওদের গোলের মুখ খোলা অসম্ভব নয়।’’
সনির হাঁটুর চোট পুরো সারেনি। এ দিন প্র্যাকটিসের সময় দেখা গেল, তিনি বেশি লাফালাফি করলেই সতর্ক করছেন সঞ্জয়। আই লিগের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সনিকে নিয়ে বাড়তি ঝুঁকি নিতে রাজি নন। বোয়াও মূল টিমের সঙ্গে প্র্যাকটিস না করে কেবল দৌড়লেন। পরে বললেন, ‘‘পরপর ম্যাচ। ক্লান্তি এড়াতেই হাল্কা প্র্যাকটিস করলাম।’’ ভারত এফসির বিরুদ্ধে প্রথম দলে ফিরতে পারেন প্রীতম কোটাল। লালকমলের জায়গায় ডেনসনের খেলার সম্ভাবনা বেশি। কার্ড সমস্যা মিটিয়ে ফিরতে পারেন বিক্রমজিতও।
মাঝমাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি নয় বাগানের একাংশ। তবে টিমের উপর বাড়তি চাপ দিতে রাজি নন মোহন কোচ। দুই প্রধান কর্তা দেবাশিস দত্ত এবং সৃঞ্জয় বসু এ দিন ক্লাবে ফুটবলারদের বলেও দিয়েছেন, ‘‘ড্র বা হার নিয়ে না ভেবে নিজেদের খেলাটা খেলা। চাপ নিও না।’’
এ দিকে লাজং ম্যাচে খারাপ রেফারিং হওয়ার পর ফেডারেশনকে চিঠি দিচ্ছে মোহনবাগান। ডেম্পো ম্যাচেও একই রেফারির জন্য তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়েছিল বলে দাবি সবুজ-মেরুন কর্তাদের। পাশাপাশি যুবভারতীর সংস্কারের কাজ আই লিগের পর শুরু করার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিচ্ছেন তাঁরা। যুবভারতীর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল এপ্রিলের শেষে। বাগান আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে থাকায় ২০ মে (ওয়াহিংডো), ২৩ মে-র (স্পোর্টিং ক্লুব) ম্যাচ দু’টো তারা যাতে যুবভারতীতেই খেলতে পারে, তাই এই উদ্যোগ ক্লাব কর্তাদের।
শনিবারে আই লিগ
মোহনবাগান : ভারত এফসি (যুবভারতী, ৪-৩০)
ইস্টবেঙ্গল : পুণে এফসি (পুণে, ৭-০০)