নায়ক: গোলের পরে উল্লাস দিপান্দা ডিকার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ১ জর্জ টেলিগ্রাফ ০
ছুটির দিনে সোনারপুর আর দমদমের দুই বাঙালি গোলরক্ষকের দ্বৈরথ ছিল দর্শকঠাসা মোহনবাগান মাঠে।
প্রথমার্ধে শূন্যের বলে জর্জ টেলিগ্রাফ গোলরক্ষক সোনারপুরের লাল্টু মণ্ডলকে কাবু করতে পারছিলেন না সবুজ-মেরুন শিবিরের হেনরি কিসেক্কারা। লাল্টু এ বার সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা দলে ছিলেন। অতীতে মোহনবাগানে এক মরসুম কাটালেও সুযোগ পাননি খেলার। বাবা সুবীর মণ্ডল পেশায় রিক্সাচালক। এ দিন মোহনবাগান বিরুদ্ধে খেলতে আসার আগে বাবাকে বলে এসেছিলেন, গোল খাবেন না। কিন্তু সে কথা রাখতে না পারায় খেলা শেষে লাল্টুর চোখে জল। ছলছলে চোখে দেখছিলেন, ম্যাচ সেরা মোহনবাগান গোলরক্ষক শঙ্কর রায়ের পুরস্কার নেওয়ার দৃশ্য।
নাগেরবাজারের শঙ্করের মুখে তখন হাসি। দিপান্দা ডিকা গোল করলেও শেষ দিকে জর্জের চন্দ্রশেখর ও স্টিফেনের হেড পর পর দুরন্ত রিফ্লেক্সে বাঁচিয়ে তিনিই নিশ্চিত করেছেন সবুজ-মেরুনের তিন পয়েন্ট প্রাপ্তি। গত বছর এই কলকাতা লিগেই মহমেডানের জার্সি গায়ে তিনি রুখে দিয়েছিলেন মোহনবাগানকে। জার্সি বদলে প্রথম দিন মোহনবাগানের হয়ে খেলতে নেমে জয়ী শঙ্কর বলছিলেন, ‘‘মা লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে আমাকে বড় করেছেন। এই সাফল্য মা এবং শিল্টনদা (পাল)-কে উৎসর্গ করলাম।’’ জর্জ টেলিগ্রাফ কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য তখন কপাল চাপড়াচ্ছেন, ‘‘শঙ্করই আজ আমাদের পয়েন্ট কেড়ে নিল।’’
নয়ের দশকে ইস্টবেঙ্গল, মহমেডানে খেলেছেন আলমবাজারের রঞ্জন। এ দিন তিনি বুদ্ধি করে, দু’টো কাজ করেছিলেন। এক, মোহনবাগানের দুই উইং ব্যাক অরিজিৎ বাগুই এবং অভিষেক আম্বেকরকে আক্রমণে যেতে দেননি। দুই, ইচেজোনা, অসীম দে আর মোহন সরকারকে নিয়ে ডিকা ও হেনরিকে ফেলে দিয়েছিলেন ‘ডাবল কভারিং’-এর ফাঁদে। যে দিক থেকে বল আসছিল সে দিকের খেলোয়াড়কে ধরছিলেন ইচে। মোহনবাগানের অন্য ফরোয়ার্ডকে ধরছিলেন অসীম। আর তাঁকে কভারে রাখছিলেন মোহন। ‘লুজ বল’ ধরে আক্রমণ ভাগে বল জোগানোর কাজটা ছিল মোহনের।
অরিজিতদের প্রান্ত ধরে আক্রমণ বন্ধ। আগের ম্যাচে রেনবোর বিরুদ্ধে সেরা আজহারউদ্দিন প্রথম দলে নেই। ফলে শিল্টন ডি’সিলভারা রক্ষণ থেকে লম্বা বল ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন দুই বিদেশি স্ট্রাইকার হেনরি ও ডিকার উদ্দেশে। এতে সুবিধা হচ্ছিল ছ’ফুটের বেশি উচ্চতার ইচের। কখনও কখনও এগিয়ে এসে সেই বল ফেরাচ্ছিলেন গোলকিপার লাল্টুও।
মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বিশ্ব ফুটবলের প্রচলিত তিন ব্যাকে খেলাচ্ছেন এ বার। ৩-২-৩-২ ছকে তাঁর এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসার। নতুন কিছু করার চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু বিপক্ষ কোচ তাঁর এই ছক ঘেঁটে দিয়েছিলেন মাঝমাঠে ভিড় বাড়িয়ে। বাধ্য হয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মেহতাবকে নামান শঙ্করলাল। তার কিছু পরে তীর্থঙ্করকে নামিেয় ফিরে যান চার ব্যাকে। ৭২ মিনিটে ডান দিক থেকে সেই তীর্থঙ্করের বাঁ পায়ে ইনসুইঙ্গার জর্জের দুই স্টপারের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে আসতেই হেডে গোল সুযোগসন্ধানী ডিকার। রবিবারই এক মাস পূর্ণ হয়েছে দেশে থাকা তাঁর সদ্যোজাত কন্যাসন্তান ‘ফ্রান্স’-এর। তাই গোলের পরে মুখে বুড়ো আঙুল ঢুকিয়ে উৎসবে মাতলেন ডিকা। জর্জ শিবিরের অবশ্য দাবি, ডিকার গোল অফসাইডে।
এই মুহূর্তে দেশের সেরা আক্রমণ ভাগ মোহনবাগানের। এ দিন জিতলেও, টানা তিন ম্যাচ প্রথমার্ধে গোল পেল না মোহনবাগান। দুই বিদেশি স্ট্রাইকারের মধ্যে বোঝাপড়াও ঠিক হচ্ছে না। রক্ষণেও নেতৃত্ব দিয়ে খেলার লোকের অভাব। পরের পিয়ারলেস ম্যাচের আগে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে শঙ্করলালকে। তিনি বলছেন, ‘‘ইউতা কিনোয়াকি এলে সমস্যা কমবে।’’ যদিও ক্লাবের ফুটবল সচিবের দাবি, ইউতা কলকাতা লিগে খেলবেন না।
মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, গুরজিন্দর কুমার (আজহারউদ্দিন মল্লিক), লালছাওয়ান কিমা, কিংসলে ওবুমনেমে, শিল্টন ডি’সিলভা (মেহতাব হোসেন), সৌরভ দাস, অরিজিৎ বাগুই, পিন্টু মাহাতা (তীর্থঙ্কর সরকার), অভিষেক আম্বেকর, হেনরি কিসেক্কা, দিপান্দা ডিকা।
জর্জ টেলিগ্রাফ: লাল্টু মণ্ডল, নবি হোসেন খান, অসীম কুমার দে, ইচেজোনা, মোহন সরকার, চিন্তা চন্দ্রশেখর রাও, রাজীব সাউ (শুভ কুমার), নাকামুরা রেয়ো (শেখ রাজা আলি), তেলহি থোপি (রাজীব ঘড়ুই), সুব্রত বিশ্বাস, স্টিফেন হ্যারি।