Naimuddin

ফ্লাড লাইটের আলোয় ক্লাব তাঁবুতে ফিরে এল ‘মোহনবাগান ডে’

শুক্রবারের দুপুর, বিকেলে আকাশের মুখ ভার থাকলেও ঝেঁপে বৃষ্টিটা নামেনি। যেটা প্রতি ২৯ জুলাই প্রায় অলিখিত ভাবে প্রকৃতির নিয়ম। বহু দিন পর আবার মাঠে ফিরল মোহনবাগান ডে। হয়তো সে কারণেই। আজ উৎসব।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ২৩:২৬
Share:

সেজে উঠেছে ক্লাব তাঁবু।

শুক্রবারের দুপুর, বিকেলে আকাশের মুখ ভার থাকলেও ঝেঁপে বৃষ্টিটা নামেনি। যেটা প্রতি ২৯ জুলাই প্রায় অলিখিত ভাবে প্রকৃতির নিয়ম। বহু দিন পর আবার মাঠে ফিরল মোহনবাগান ডে। হয়তো সে কারণেই। আজ উৎসব। আজ মোহনবাগান ডে-তে মেতে উঠতে প্রকৃতিও পাশে দাঁড়াল। তখন মোহনবাগানের মাঠ আলো করে বসে চুনী গোস্বামী, অলোক মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত ভদ্র, শিশির ঘোষ-সহ বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্ররা।

Advertisement

যাঁরা সংবর্ধিত হলেন তাঁদের মধ্যে অবশ্য ম়ঞ্চে পাওয়া গেল একমাত্র মোহনবাগানের হয়ে ত্রিমুকুট জয়ী লক্ষ্মীরতন শুক্লকে। ঋদ্ধিমান সাহা এখন ভারতীয় দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সোনি নর্ডি ছুটি কাটাচ্ছেন বাড়িতে। সংবর্ধিত হলেন দুই পর্বতারোহী দেবরাজ দত্ত ও মলয় মুখোপাধ্যায়। অরুণ লাল না থাকায় এ দিন তাঁর নাম ঘোষণাই করা হল না। বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরে তাঁকে সংবর্ধিত করা হবে। দেখা গেল না সঞ্জয় সেন বা শঙ্করলাল চক্রবর্তীকে। বর্তমান প্লেয়ারদের মধ্যে সৌভিক ঘোষ, কিংশুক দেবনাথ, দেবজিৎ ঘোষ, অভিষেক দাসরা ঘুরে গেলেন এক ফাঁকে।

নইমুদ্দিনের হাতে মোহনবাগান-রত্ন তুলে দিচ্ছেন সচিব অঞ্জন মিত্র।

Advertisement

সকাল থেকে শুধুই ফুটবল। শেষবেলায় সবুজ-মেরুন ফানুস আর আতসবাজির রোশনাইয়ের সঙ্গে সুরে সুরে মোহনবাগানকে বেঁধে ফেললেন শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, ইমন ও বিনোদ রাঠৌর। তাঁর আগে মাঠ কাঁপিয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন মোহনবাগানি থেকে ক্রীড়া সাংবাদিক। টালিগঞ্জের চেনা মুখগুলো মাঠে পা রাখতেই চেনা উন্মাদনা মহিলা ফ্যানদের। মোহনবাগান গেট দিয়ে ঢুকতেই মহিলা ফ্যানদের হাতে ধরা দিলেন কৌশিক রায়। টাবুন মুন্সির পাশে খেললেন তাঁর ছেলেও। ভাস্কর তখন ম্যানেজারের ভূমিকায়। বলে দিলেন, ‘‘অনেক খেলেছি। এখন বয়স বেড়েছে। তাই এ বার কোচের ভূমিকায়।’’

সাংবাদিক বনাম আর্টিস্ট ফোরামের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে গোলশূন্য ড্র। তার আগেই মাঠ দাপিয়ে গিয়েছেন বাসুদেব মণ্ডল, সতীশ ভারতী, সঞ্জয় মাঝি, ষষ্ঠী দুলেরা। সমানে সমানে টক্কর। ম্যাচের ফল ২-২। মাঠে বসে জোড়া ম্যাচ উপভোগ করলেন এ বারের মোহনবাগান-রত্ন নইমুদ্দিন। মঞ্চে তাঁর হাতে এক লাখ টাকার চেক তুলে দিলেন বাগানসচিব অঞ্জন মিত্র। এই সম্মান পেয়ে উচ্ছ্বসিত নইমুদ্দিন বলে দিলেন, ‘‘দ্রোণাচার্য সম্মান যতটা আমার কাছে আনন্দের ততটাই মোহনবাগান-রত্নও।’’ সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও কন্যা। বাবাকে মোহনবাগান মঞ্চে দেখতে মুম্বই থেকে উড়ে এসেছেন মেয়ে। নইম যেতে যেতে দাবি করে গেলেন, এখনও কোচের বুট পড়ে নামলে ভারতীয় দলকে এশিয়ার সেরা করতে পারেন তিনি।

আর্টিস্ট ফোরাম বনাম সাংবাদিক একাদশের ম্যাচ চলছে মোহনবাগান মাঠে।

মোহনবাগান মাঠের ফ্লাড লাইটের আলোগুলো জ্বলে উঠতেই স্পটলাইট যেন ঘুরে গেল সবুজ-মেরুন তাঁবুতে। সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙল এই ভেবেই। এ বার প্রিয় দলের ম্যাচ দেখা যাবে ফ্লাড লাইটে ঘরের মাঠে বসে। এই ময়দানে বসে। সবুজ-মেরুন গ্যালারিতে তখন শুধুই ফুটবল ঘিরে উচ্ছ্বাস। ছোটদের খেলাটা এ বার হল না। প্রাক্তনদের ফুটবল দিয়ে শুরু হয়ে গেল ১৯১১-এর সেই এগারোকে মনে করিয়ে দেওয়ার পালা। লড়াইয়ের ভারতে ব্রিটিশদের ফুটবলে মাত দেওয়ার সেই বিখ্যাত কাহিনী। ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ১-২ গোলে হারানোর সেই মোহনবাগান। মোহনবাগানের হয়ে গোল করেছিলেন শিবদাস ভাদুড়ী ও অভিলাষ ঘোষ। মূল মঞ্চের ব্যাকড্রপে তখন মোহনবাগানের সেই সেরা ১১। সামনে মোহনবাগানের অঞ্জন মিত্র, দেবাশিস দত্ত, সৃঞ্জয় বসু, টুটু বসুর মতো কর্তাদের সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। টুকরো টুকরো স্মৃতি। অনেকটা আবেগ আর গানে গানে শেষ হল এ বারের মোহনবাগান ডে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন