নিজেদের সিদ্ধান্তে গৌরববোধ করছেন মোহনবাগান সচিব

ডং-মেহতাবরা যখন কল্যাণী স্টেডিয়াম থেকে ডার্বির তিন পয়েন্ট নিয়ে বেরিয়ে আসছে, মোহনবাগান তাঁবু তখন শুনশান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

প্রহসনের কল্যাণী। ডার্বি নাটকে যবনিকা পড়ল। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ডং-মেহতাবরা যখন কল্যাণী স্টেডিয়াম থেকে ডার্বির তিন পয়েন্ট নিয়ে বেরিয়ে আসছে, মোহনবাগান তাঁবু তখন শুনশান।

Advertisement

কর্তারা ডার্বি থেকে নাম তুলে নেওয়ার পরই বুধবার অনুশীলন স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তাই এ দিন মাঠে নামেননি ডাফি-বিদেমিরা। প্রতি দিন বিকেলে বাগান তাঁবু এবং তার লনে যে জমাট ভিড়টা থাকে, সেটাও অনেকটা হাল্কা। হয়তো হতাশারই জের। জনা তিন-চার কর্মসমিতির সদস্য আর কিছু সমর্থক যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের মুখেও অমাবস্যা। কর্তাদের ডার্বিতে দল না নামানোর সিদ্ধান্তের জেরে কোনও বিক্ষোভ অবশ্য এ দিন হয়নি। তবে গেটে ঢোকার মুখে ডানদিকে লাগানো ছিল আইএফএ-র বিরুদ্ধে একটি পোস্টার। ব্যস এটুকুই।

ডার্বি না হলে কী হবে, মাঠের বাইরে অবশ্য আইএফএ বনাম মোহনবাগানের চাপানউতোর চলছে। কল্যাণীতে বিকেলে ডার্বির ‘অপমৃত্যু’র পর মুখ খুলেছেন আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়। ‘‘অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ। এ সব আর বরদাস্ত করা হবে না। আমি সভা ডেকে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করব। নিয়মের বাইরে বেরোতে পারছি না বলে অনেক সমস্যা হচ্ছে।’’ বলার পাশাপাশি রাজ্য ফুটবল সংস্থার সচিবের সংযোজন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল তো পাঁচ তারিখ ডার্বি খেলতে চেয়েছিল। আমি মানিনি। এমন কী ওরা ডার্বির পর মহমেডান ম্যাচ খেলতে চাইনি। সে কথাও শুনিনি। আমি যদি কোনও একটা দলের কথায় ডার্বি পিছিয়ে বা এগিয়ে দিতাম, তা হলে আইএফএ-র অস্তিত্বই সংকটে পড়ত।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘একটা সময়ে কঠোর তো হতেই হবে।’’ আজ বৃহস্পতিবার রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্ট পাওয়ার পরই শুক্রবার হয়তো লিগ সাব কমিটির সভা ডাকবে আইএফএ। সেখানে ইস্টবেঙ্গলকে তিন পয়েন্ট ও তিন গোল দেওয়ার পাশাপাশি, মোহনবাগানের পয়েন্ট কাটা হতে পারে। কারণ বাগান কর্তারা ম্যাচ খেলবেন না বলে কোনও চিঠি আইএফএ-কে পাঠায়নি।

Advertisement

ডার্বির সকালে বাগান যে শেষ চিঠিটি পাঠিয়েছে তাতে লেখা হয়েছে, ম্যাচ একদিন পিছিয়ে ৮ তারিখ করা হলে তারা ডার্বি খেলবে। বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র এ দিন চোখ রেখেছিলেন কল্যাণীর মাঠে। ইস্টবেঙ্গলের ওয়াকওভার পাওয়া দেখে তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘কলকাতা লিগ ক্রমশ তার গুরুত্ব হারাচ্ছে। তবু ডার্বি একদিন পিছোলে আমরা খেলতাম। এখন আমরা আই লিগ জয়ের দিকে মন দেব।’’ আগের দিনের মতোই বাগান সচিবের অবশ্য ডার্বি না খেলার জন্য কোনও আফসোস নেই। বলছিলেন, ‘‘ছেলেগুলো এত ভাল খেলছিল, ওরা ম্যাচটা খেলতে পারল না বলে দুঃখ লাগছে। তবে আমরা যে প্রতিবাদটা করেছি সেটা আমাদের কাছে গৌরবের।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘বন্যা বা বনধ্‌ হলেও তো অন্য দিন ম্যাচ হত। তখন তো আইএফএ তারিখ বদলাত। এ বার বদলালে কী মহাভারত অশুদ্ধ হত।’’

বাগান সচিবের কথা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি উৎপলবাবু। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘আমি তো ওদের শিলিগুড়িতে খেলতে বলেছিলাম, সেটাও রাজি হল না। কল্যাণীতে ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্তও তো দুই ক্লাবের সঙ্গে কথা বলেই নেওয়া হয়েছিল। সেটা জানা সত্ত্বেও কেন মোহনবাগান কল্যাণীতে গিয়ে প্র্যাকটিস করল না? এখন যে অজুহাত খাড়া করছে, তার ভিত্তি নেই।’’

বাগান ডার্বি বয়কট করায় আইএফএ সচিব যেমন ক্ষুব্ধ, পাশাপাশি বাগান প্রেসিডেন্ট টুটু বসুর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত কথোপকথন সাংবাদিক সম্মেলন করে সবুজ-মেরুন কর্তারা প্রকাশ্যে আনায় তিনি বিরক্ত। বলছিলেন, ‘‘আমার সঙ্গে বাগান প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক ত্রিশ বছরের। সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত কোনও কথা আলোচনা হতেই পারে। তবে প্রকাশ্যে সেই আলোচনার কথা আনা অত্যন্ত কুরুচিকর।’’

ভেস্তে যাওয়া ডার্বি নিয়ে কথার লড়াই চলবে। হয়তো চিঠিচাপাটিও চলবে। কিন্তু বাগানের তাঁবুর অন্ধকার কি তাতে কাটবে?

অনিশ্চিত ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচ

যে ম্যাচটা ড্র করলেই ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে, সেই ম্যাচটা নিয়ে হঠাৎ করেই ধোঁয়াশা তৈরি হল। ইদের জন্য জেলায় জেলায় পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। তাই শনিবার ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচের দিন কল্যাণী স্টেডিয়ামে খেলা করাতে রাজি হচ্ছে না পুলিশ। তবে যদি ইদ রবিবারের বদলে সোমবার হয়, তা হলে অবশ্য এই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত জানেন না শনিবারের ম্যাচের ভাগ্য কী হতে পারে! তিনি বুধবার বলেছেন, ‘‘১১ সেপ্টেম্বরই ম্যাচটা করার চেষ্টা করছি। পুলিশকে অনুরোধ করব ম্যাচটি করিয়ে দেওয়ার জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন