কোচের উপর ‘অবিচারের’ জবাব ট্রফি জিতে দিতে চান সনিরা

কোচ সঞ্জয় সেনের নজিরবিহীন শাস্তির প্রতিবাদে উত্তাল মোহনবাগান শিবির। সনি নর্ডি থেকে লুসিয়ানো, শিল্টন পাল থেকে প্রণয় হালদার— দলের প্রত্যেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন কোচের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

কোচ সঞ্জয় সেনের নজিরবিহীন শাস্তির প্রতিবাদে উত্তাল মোহনবাগান শিবির। সনি নর্ডি থেকে লুসিয়ানো, শিল্টন পাল থেকে প্রণয় হালদার— দলের প্রত্যেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন কোচের।

Advertisement

সঞ্জয় নিজে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। শাস্তি সংক্রান্ত বিষয়টি সযত্নে এড়িয়ে যেতে চাইছেন এই বলে, ‘‘অ্যাপিল করা হবে ঠিকই। তবে কী ভাবে হবে, কবে করা হবে, এ সব ক্লাব-কর্তাদের সঙ্গে শনিবার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এই নিয়ে এখন কিছু বলতে পারব না।’’ আসলে বাগান কোচ চাইছেন না, তাঁর সাসপেনশনের কোনও প্রভাব পড়ুক আই লিগে সবার আগে থাকা টিমের ফুটবলারদের উপর।

এই মুহূর্তে মোহনবাগান আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে এক নম্বরে রয়েছে। এএফসি কাপের প্রথম ম্যাচে বড় জয় পেয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মুখ খোলার শাস্তি হিসেবে সঞ্জয়কে আট ম্যাচ নির্বাসন-সহ দশ লক্ষ টাকা জরিমানা যে করা হয়েছে, সেটা মানতে পারছেন না সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। শুক্রবার প্র্যাকটিসের পর সনিকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় শান্ত স্বভাবের হাইতি স্ট্রাইকারও ক্ষোভ চেপে রাখতে পারলেন না। ‘‘আমাদের কোচের এত বড় শাস্তি হওয়ার কোনও মানে নেই। কোচ এমন কিছু বলেননি যার জন্য এত কঠিন শাস্তি পেতে হবে। কলকাতায় গতবার থেকে খেলছি। ফেডারেশনের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে দেখেছি। এ বার আমাদের কোচের সঙ্গে যেটা হল, ঠিক হল না।’’

Advertisement

বাগানের আর এক বিদেশি সিনিয়র লুসিয়ানোর গলাতেও একই সুর রেকর্ডের মতো বাজল। ‘‘আমাদের কোচ এমন বড় অপরাধ করেননি যে এত কঠিন শাস্তি পাবেন। পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ফেডারেশনের উচিত এই শাস্তি মকুব করে দেওয়া।’’ বাগান অধিনায়ক শিল্টন পাল, যিনি এই মুহূর্তে প্রথম একাদশে জায়গা পাচ্ছেন না, তিনিও সরব। সনি-লুসিয়ানোদের পথে হেঁটে শিল্টনও বলছেন, ‘‘আমরা এই মুহূর্তে আই লিগের খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছি। এই সময় ম্যাচের সময় কোচের বেঞ্চে না থাকাটা বড় ধাক্কা। কোচ মাঠের ভেতর থাকলে প্লেয়ারের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে থাকে। ফেডারেশন এত কড়া না হলেও পারত।’’

অন্য দিনের মতোই এ দিন সকালে প্র্যাকটিসে এসে প্রথমেই তাঁর ফুটবলারদের সঙ্গে টিম মিটিং সারেন সঞ্জয়। তবে সেই মিটিংয়ে ফুটবলের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। বরং সনি-শিল্টনদের বুঝিয়েসুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন বাগান কোচ। বলেন, ‘‘তোমাদের ফোকাস যেন কোনও ভাবে নষ্ট না হয়। আমার শাস্তি নিয়ে একদম মাথা ঘামাবে না। এটা আমার ব্যাপার। আমি বুঝে নেব। তোমরা মাঠে শুধু নিজেদের সেরাটা দাও। আই লিগের বাকি সব ম্যাচকে ফাইনাল ধরে এখন আমাদের এগোতে হবে।’’

একই সঙ্গে ফুটবলারদের আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, ‘‘আমি তো ম্যাচের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তোমাদের সঙ্গে থাকব। গেমপ্ল্যান করে দেব। মাঠে নেমে খেলতে হবে তোমাদের। আমি মাঠে নেমে খেলব না। তাই আমি রিজার্ভ বেঞ্চেই থাকি বা গ্যালারিতে, তোমরা ঠিক করে খেললে টিমের সাফল্য আসবেই।’’ তাতেও শিষ্যদের ‘রণংদেহী’ মানসিকতা দেখে গুরু অবশ্য কিছুটা চিন্তিত। সঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে আই লিগ। সঙ্গে এএফসির ম্যাচ রয়েছে। এ রকম অবস্থায় আমি চাই না, খেলার বাইরে অন্য বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে ফুটবলারদের ফোকাস নষ্ট হোক।’’

গোদের উপর বিষফোঁড়া, চোটের জন্য ফর্মে থাকা ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজকে বাকি আই লিগে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বাগানের। এমআরআই রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা তাঁকে এক মাস বিশ্রাম নিতে বলেছেন বলে জানালেন ব্রেন্ডনের বাবা জাজু ফার্নান্ডেজ। তবুও বাগান ফুটবলাররা আবার মরিয়া হয়ে উঠেছেন, আই লিগ জিতে কোচের হয়ে সব কিছুর জবাব দেওয়ার জন্য। সনি, লুসিয়ানোরা বলেও দিচ্ছেন, ‘‘এই ঘটনা আমাদের জেদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই চাই, লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোচকে যোগ্য সম্মান দিতে। কোচের হয়ে মাঠেই জবাব দিতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন