এটিকে-০ : মুম্বই-০ (সব মিলিয়ে ৩-২)

মলিনার দুঃসাহস আমার দ্বারা হতো না

হতে পারতেন ভিলেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে একগাল হাসি মুখে তিনিই নায়ক! ম্যাচ শুরুর আগে টিভি সুইচ অন করতেই জোর ঝটকা। প্রায় ইলেকট্রিক শকের মতো আমার লাগল মলিনার মঙ্গলবারের ফার্স্ট টিমটা দেখে!

Advertisement

সঞ্জয় সেন

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২২
Share:

হতে পারতেন ভিলেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে একগাল হাসি মুখে তিনিই নায়ক!

Advertisement

ম্যাচ শুরুর আগে টিভি সুইচ অন করতেই জোর ঝটকা। প্রায় ইলেকট্রিক শকের মতো আমার লাগল মলিনার মঙ্গলবারের ফার্স্ট টিমটা দেখে! মাত্র তিন দিন আগে রবীন্দ্র সরোবরে এটিকের যে দু’জন মুম্বই ডিফেন্সে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল, সেই হিউম আর দ্যুতি-ই কিনা ফিরতি ম্যাচে প্রথম দলে নেই! নেই টিমের মার্কি পস্টিগা। সে দিনের উইনিং সেমিফাইনালের টিমের প্রথম এগারোর মাত্র দু’জন এ দিন প্রথম দলে। বোরহা আর সেরেনো। বাকি ন’জনকেই বদলে দিয়েছেন কলকাতা দলের স্প্যানিশ কোচ জোসে মলিনা। সেই সময় মনে হচ্ছিল, মলিনার এই অদ্ভুত ট্যাকটিক্স না ব্যুমেরাং হয়ে যায় ওর দলের কাছে!

কিন্তু নব্বই মিনিটের পরে আরও অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও আমার ঘোর কাটছে না। মনে করার চেষ্টা করছি ভারতীয় ফুটবলে এ রকম কেউ কখনও করেছে কি না? আমার মতে মলিনা ভারতীয় ফুটবলে আগে কখনও না দেখা একটা ব্যাপার ঘটালেন সম্পূর্ণ ভাবে নিজের হোমওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে। কোনও ফাটকা খেলার মানসিকতা নিয়ে নয়।

Advertisement

ভিয়ারিয়ালের এই পুরনো কোচ লা লিগায় এমনটা করেছেন কি না আমার জানা নেই। হয়তো ফুটবল দেশটার নাম ভারত আর আইএসএলের মতো টুর্নামেন্ট বলেই করতে পারলেন। তবে দিনের শেষে মলিনার এই অভিনব অঙ্কই কিন্তু এটিকেকে ফাইনালে তুলল।

যদিও আমি নিশ্চিত রবিবার কোচির ফাইনালে আজকের টিমটা আবার বদলে দেবেন মলিনা। প্রথম টিমে ঢুকবে হিউম, দ্যুতি, পস্টিগারা। কিন্তু সেমিফাইনাল পর্যন্ত দেখার পর বলতেই হচ্ছে, এ বার আইএসএলে অ্যাডভেঞ্চার মানসিকতার জন্য যদি কোনও পুরস্কার থাকে, তা হলে সেটা এটিকে কোচের প্রাপ্য।

দশ বছর পরেও আইএসএল থ্রি-র এই সেমিফাইনাল নিয়ে আলোচনা হলে মলিনার এই ট্যাকটিক্স নিয়ে কথা হবে। সত্যি বলতে কী, আমি নিজেও এ রকম উইনিং টিমের ন’জনকে বাদ দিয়ে এ রকম চাপের ম্যাচে দল নামাতে পারতাম না।

রবীন্দ্র সরোবরে মলিনা গোলে রেখেছিলেন স্প্যানিশ কিপার ড্যানিকে। উদ্দেশ্য ছিল ফোরলানের ফ্রি-কিক রোখা। ড্যানি এরিয়াল বল ভাল ধরে বলে। লাল কার্ড দেখায় ফোরলান মুম্বইয়ে ছিল না। তাই এ দিন মলিনা যে দেবজিৎকে গোলে ফেরাবেন, জানতাম। কিন্তু তা বলে টিমের পস্টিগা-হিউম-সহ প্রথম দলের আরও আটজন বেঞ্চে? ভাগ্য সব সময় সাহসীদের সহায় হয়। আজ যেটা সাহসী মলিনার সঙ্গে ছিল। শুরুর দিকে একবার ওয়ান-টু-ওয়ানে সুনীল যে ভাবে বলটা দ্বিতীয় পোস্টে প্লেসিং না করে দেবজিতের হাতে মারল সেটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

মলিনা লেফট ব্যাকে নামিয়েছিলেন রবার্টকে। কিন্তু রবার্ট ওর পুরনো ছন্দে নেই। ফাউল বেশি করছে। শুরু থেকেই যা হতে দেখলাম। হাফটাইমের একটু আগে রবার্ট যখন জোড়া হলুদ কার্ড দেখে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন কিন্তু সত্যিই কলকাতা চাপে পড়ে গিয়েছিল। তবে ওইখান থেকেই আবার মলিনা-ম্যাজিক শুরু। এটিকে কোচ মিডফিল্ড থেকে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে নিয়ে এলেন বোরহাকে। স্টপার তিরিকে করে দিলেন লেফট ব্যাক। ৪-২-৩-১ ছক থেকে কলকাতা হয়ে গেল ৪-৪-১।

শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিটে আরও স্পষ্ট হল মলিনার কৌশল। শুনেছি স্প্যানিশ ভদ্রলোক কথা বলেন নাকি কম। কিন্তু আমার মনে হয় ওনার হোমওয়ার্কটা জবরদস্ত। মুম্বইয়ের আগের ম্যাচগুলো দেখে ঠিক বুঝে নিয়েছিলেন সনি-সুনীলরা দু’টো কাজ করবে। মিডল করিডর দিয়ে আচমকা কাউন্টার অ্যাটাক। আর দুর্দান্ত সেট পিস।

মলিনা তাই এ দিন মিডল করিডর ভর্তি করে দিয়েছিলেন তাঁর লম্বা বিদেশিদের দিয়ে। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে সেরেনো, তিরি। ডাবল পিভট পিয়ারসন, বোরহা। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার লারা। যে আক্রমণের সঙ্গে ডিফেন্সটাও করে। আর সামনে বেলেনকোসো। যাদের গড় উচ্চতা ইন্টারনেটে দেখছি ছ’ফুট। ফলে মিডল করিডরে কোনও ফাঁকা জায়গাই পাচ্ছিল না মুম্বই। এমনকী গোটা ম্যাচে ন’টা কর্নার পেলেও মুম্বই গোল পায়নি মলিনার সাহসী স্ট্র্যাটেজির জন্যই। এই অবস্থায় উইং প্লে আর থার্ডম্যান মুভমেন্টে গোলের দরজা খুলতে হয়। কিন্তু দিফেদেরিকোরা তা না করে মলিনার ফাঁদে পা দিয়ে ছিটকে গেল সেমিফাইনাল থেকে।

আর মলিনার কলকাতা ফাইনালে। অ্যাডভেঞ্চার নয়, সাহসী অঙ্কে!

আটলেটিকো দে কলকাতা: দেবজিৎ, প্রীতম, সেরেনো, তিরি, রবার্ট, বোরহা, পিয়ারসন, বিদ্যানন্দ (লালরিন্দিকা), লারা (দ্যুতি), অবিনাশ (কিগান), বেলেনকোসো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন