ইতিহাসের দিনে ঐতিহাসিক ভুল

ফিনিশার ধোনি কি এখন অতীত

ম্যাচটা শেষ হওয়ার পর চোখ বন্ধ করে শেষ বলটা ভিস্যুয়ালাইজ করার চেষ্টা করছিলাম। আর যত বার করছি, তত বার মনে হচ্ছে ধোনি এটা কী করল?

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২২
Share:

প্রাক্তন আইপিএল সতীর্থের জয়োল্লাস দেখতে হল ধোনিকে। ছবি: এপি।

ম্যাচটা শেষ হওয়ার পর চোখ বন্ধ করে শেষ বলটা ভিস্যুয়ালাইজ করার চেষ্টা করছিলাম। আর যত বার করছি, তত বার মনে হচ্ছে ধোনি এটা কী করল?

Advertisement

টিমের ক্যাপ্টেন তুমি। গোটা বিশ্ব তোমাকে সেরা ফিনিশার বলে চেনে। ১ বলে মাত্র ২ রান দরকার। সেখানে তুমি বড় হিট নেবে না? কোনও বাড়তি এফর্টই দেবে না? আশ্চর্যের হল, ডোয়েন ব্র্যাভোর শেষ ওভারের প্রথম বলটাই মার্লন স্যামুয়েলসের হাতে তুলল ধোনি। স্যামুয়েলস ফেলল। শেষ বলটা আবার ওই স্যামুয়েলসের হাতেই কি না তুলে চলে গেল!

দেখুন, শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারেরও মোক্ষম সময়ে ভুল এক-আধ বার হতে পারে। কিন্তু ধোনির ব্যাপারটা দেখে আমার মনে হচ্ছে, ও আর নিজেকে আগের মতো অ্যাপ্লাই করতে পারছে না। গত এক-দেড় বছরে ওকে দেখছি, পারছে না ম্যাচ ফিনিশ করে আসতে। আগে ধোনির উপর এ সব ম্যাচ সিচুয়েশনে চোখ বন্ধ করে লগ্নি করা যেত। মানতে কষ্ট হলেও বলব, এখন আর অতটা যায় না। বিশ্বের সেরা ফিনিশার— ট্যাগটাই যেন ওর গা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে! এই ধোনিকে কেউ চায় না দেখতে। কেউ চেনে না।

Advertisement

পঁচিশ বলে ৪৩ করলেও রোহিত কে এল রাহুলদের স্ট্রাইক রেট যেখানে দুশোর উপর, নবাগত ক্যারিবিয়ান এভিন লুইসেরও তাই। সেখানে ওর ১৭২। শেষটাও করতে পারল না ঠিকমতো। অতীতের সেই ধোনিকে আর পাচ্ছি কোথায়?


ম্যাচ শুরুর আগে ভারতের যে টিম লিস্ট ধরানো হয় মিডিয়াকে। দিনের শেষে প্রশ্ন উঠে গেল, খুব তাড়াতাড়ি কি এই তালিকা সত্যি হতে যাচ্ছে?

নইলে এখন এ ভাবে ওকে মাথা নিচু করে ফিরে আসতে বারবার দেখব কেন? আমি তো বলব, শনিবারের পর ধোনির আরও একজন প্রতিদ্বন্দ্বী চলে এল। এত দিন বলাবলি চলছিল, সীমিত ওভারেও কেন বিরাটের হাতে ক্যাপ্টেন্সি তুলে দেওয়া হচ্ছে না। এ বার যদি কেএল রাহুলের অসাধারণ সেঞ্চুরির পর ওকে ক্রিকেটার ধোনির পরিবর্ত হিসেবে ভবিষ্যতে কেউ দেখতে শুরু করে, খুব অবাক হওয়ার থাকবে কি? রাহুল কিন্তু ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি কিপটা খারাপ করে না।

ধোনির একটা ভুলের জন্য রাহুলের এমন অসাধারণ সেঞ্চুরিটা স্রেফ জলে গেল। ফ্লোরিডার ব্যাটিং উইকেটে একজন ভাল ব্যাটসম্যানের থেকে তো আমরা এমন ব্যাটিংই আশা করি। রাহুলের ওয়াগন হুইলটা দেখছিলাম। গোটা মাঠ জুড়ে শট খেলেছে। থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে ছয় মেরে সেঞ্চুরি করেছে। কভার, মিড অফ, মিড উইকেটও বাদ যায়নি। সবচেয়ে বড় কথা, গোটা ইনিংসে একবারও ইমপ্রোভাইজেশনের জন্য যায়নি রাহুল। যা খেলেছে, সব নিখুঁত ক্রিকেটীয় শট। বিরাট কোহালি যা খেলে। আসলে আইপিএলে বিরাটের টিমে খেলে বলে বিরাটকে অনুকরণ করতে শুরু করে দিয়েছে রাহুল। ওর খেলা দেখেই বোঝা যায়। এটা ধরে রাখতে পারলে, ভারতেরই লাভ। বুঝে পেলাম না, কেন ধোনি শনিবার রাহুলকে ওপেন করতে পাঠাল না? আমি বলব, রাহুল ওপেন করলে ম্যাচ অনেক আগে জিতে যেত ভারত।

অবশ্য ছ’বলে আট রান টি-টোয়েন্টিতে উঠবে না, সেটাও বা ভাবা সম্ভব কী ভাবে? ফ্লোরিডায় শনিবার টি-টোয়েন্টির ইতিহাসের দিন ছিল। এমন দিনকে আরও স্মরণীয় করে রাখল লুইসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। দু’ইনিংস মিলিয়ে প্রায় পাঁচশোর কাছাকাছি রান, রেকর্ডের পর রেকর্ড। ভারত জিতলে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় হত। ধোনির স্লাইসটা সব শেষ করে দিল। চেন্নাই সুপার কিংগসে এত দিন ধরে ধোনি দেখেছে ব্র্যাভোকে। আইপিএলে এত ডেথ ওভার ব্র্যাভোকে দিয়ে বার করেছে ধোনি। ও জানবে না, এ রকম মরণ-বাঁচন সময়ে ব্র্যাভো স্লোয়ার দেবে? সেটাও ছেড়ে দিলাম। ব্র্যাভো এ দিন শেষ ওভারের প্রথম বলটাও স্লোয়ার দিয়েছিল। ধোনির ব্যাটের কানায় লেগে স্যামুয়েলসের হাতে চলেও গিয়েছিল। এর পরেও সতর্ক হবে না ধোনি? দু’রান দরকার মাত্র, স্লাইস করলে থার্ডম্যানে যেতে পারে জেনেও সেটা খেলবে!

বললাম না, ফিনিশার ধোনি এখন অতীত। এ ছাড়া কোনও ব্যাখ্যা নেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৫-৬ (লুইস ১০০, চার্লস ৭৯)। ভারত ২৪৪-৪ (রাহুল ১১০ ন.আ., রোহিত ৬২, ধোনি ৪৩)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন