লিয়োর সঙ্গে মঞ্চে থাকতে না-পেরে বিষণ্ণ র‌্যাপিনো

স্ত্রী-সন্তানেরাই আমার প্রেরণা, ব্যালন জিতে বললেন মেসি

২০০৯ থেকে শুরু। ২০১২ পর্যন্ত টানা চার বার। এ বারের (২০১৯) আগে মাঝখানে আরও এক বার। ২০১৫। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৪
Share:

গর্বিত: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে ছাপিয়ে সব চেয়ে বেশি বার ব্যালন ডি’ওর জয়। প্যারিসের অনুষ্ঠানে আপ্লুত লিয়োনেল মেসি। প্রথম দশে দ্বিতীয় হলেন ভার্জিল ফান ডাইক। —ছবি রয়টার্স।

সেই কোন কালে কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুয়েফ বলেছিলেন, ‘‘সব চেয়ে বেশি বার ব্যালন ডি’ওর জিতবে মেসিই। পাঁচ বার, ছ’বার, সাত বার...।’’ দেখা যাচ্ছে, কিংবদন্তি ডাচ তারকার ভবিষ্যদ্বাণীই সত্যি হচ্ছে। ফুটবল মহলে ঘুরছে আর এক কিংবদন্তি রোনাল্ডিনহোর ২০০৬-এ ব্যালন ডি’ওর জয়ের পরে সেই প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই পুরস্কারটা দেওয়া হয় বিশ্বসেরাকে। আমি তো বার্সেলোনাতেই সেরা নই।’’ কে না জানে, রোনাল্ডিনহো এবং মেসি একই সঙ্গে বার্সার জার্সি পরেছেন। ব্রাজিলীয় মহাতারকার তাই বয়সে অনেক ছোট সতীর্থের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে সংকোচ হয়েছিল।

Advertisement

২০০৯ থেকে শুরু। ২০১২ পর্যন্ত টানা চার বার। এ বারের (২০১৯) আগে মাঝখানে আরও এক বার। ২০১৫।

প্যারিসে সোমবার মেসির নামটা ঘোষণা হওয়ার মধ্যে বিশেষ বিস্ময় ছিল না। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, গত মরসুমে বার্সাকে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন করা মহাতারকা ট্রফিটা জিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে (পাঁচ বার এই পুরস্কার পেয়েছেন) ছাপিয়ে যাচ্ছেন। আপ্লুত মেসির প্রতিক্রিয়াতে হয়তো সেই জন্যই বিরাট কিছু বিস্ময় ছিল না, ‘‘দশ বছর আগে প্রথম ব্যালন ডি’ওর পেয়েছিলাম। তখন আমাকে চালনা করত আমার তিন ভাই। আজ ছ’নম্বর ট্রফিটা হাতে নিয়ে মনে হচ্ছে, এখন আমার প্রেরণা আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা। আন্তোনেল্লা তো একটা কথাই শুধু বলে যায়। জীবনে কখনও স্বপ্ন দেখতে ভুলবে না।’’

Advertisement

বলা হচ্ছিল, মেসির ব্যালন ডি’ওর জয়ে কাঁটা হতে পারেন লিভারপুলের ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ফান ডাইক। খুব পিছিয়ে ছিলেন না য়ুর্গেন ক্লপ, স্টিভন জেরারদের মতে, এই পুরস্কার পাওয়ার সব চেয়ে যোগ্য ফুটবলার। ভোট থেকে মেসি পেয়েছেন ৬৮৬ পয়েন্ট। ভার্জিল ৬৭৯। ডাচ ডিফেন্ডারের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হলে হেসে ফেলেন, ‘‘ট্রফির লড়াইয়ে ছিল মেসির মতো অবিশ্বাস্য এক ফুটবলার। বুঝতেই পারছেন, আমাদের কাজটা কত কঠিন।’’

অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছেন আর্জেন্টিনা-অধিনায়ক। বড় রোনাল্ডো থেকে ডেভিড বেকহ্যাম। কেউ বাদ যাননি। গ্যারি লিনেকার লিখেছেন, ‘‘ছ’বার মেসি ব্যালন ডি’ওর জিতল। অকল্পনীয় সংখ্যা! ওর ফুটবল আজও যা আনন্দ দিচ্ছে, তার তুলনা হয় না। পুরস্কারটা অন্য কারও হতে পারে না।’’

পুরস্কারের উদ্যোক্তা ফরাসি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি নিজে বলছেন, ‘‘ব্যক্তিগত এবং দলের সদস্য হিসেবে এই পুরস্কার আনন্দ দিয়েছে। যত বার মাঠে নামি, তত বার চেষ্টা করি আরও আরও ভাল খেলার। আরও ভাল খেলার ক্ষমতা যে আমার আছে, সেই বি‌শ্বাস কখনও হারাইনি। ব্যালন ডি’ওর-এর ট্রফিটা সব সময় আমার কাছে বিশেষ একটা ব্যাপার। কিন্তু এখনও আমার কাছে সব চেয়ে বড় সাফল্য দলগত কোনও ট্রফি।’’

বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার প্রতিটি সদস্য, পরিবার এবং যাঁরা তাঁকে ভোট দিয়েছেন তাঁদের সবাইকে মেসি ধন্যবাদ জানান। যোগ করেছেন, ‘‘দশ বছর আগে এই ট্রফিটা প্রথম বার পেয়েছিলাম। তখন আমার কাছে সেটা ছিল ভাবনা-চিন্তার বাইরের এক প্রাপ্তি। এখন আমার হাতে ষষ্ঠ ব্যালন ডি’ওর। এটাও অন্য রকমের মুহূর্ত।’’

ইতিমধ্যেই বলাবলি শুরু হয়েছে, মেসি যে ছন্দে খেলে যাচ্ছেন তাতে পরের বারও হয়তো তাঁকেই এই ট্রফি হাতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হবে। মেসিও বলেছেন, ‘‘অবসরের সময় নিজেকে ভাগ্যবানই ভাবব। আরও অনেক দিন খেলতে চাই। কাজটা কঠিন হলেও। তবে সময় দ্রুত চলে যায়। এই সময়টা পরিবার ও ফুটবল ঘিরেই উপভোগ করতে চাই।’’

সেরা দশে ছিলেন লিভারপুলের চার জন। দ্বিতীয় হন ভার্জিল। চতুর্থ সাদিয়ো মানে। পঞ্চম মহম্মদ সালাহ। সপ্তম লিভারপুলের ব্রাজিলীয় গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। এ’বারই প্রথম দেওয়া হল সেরা গোলরক্ষককে লেভ ইয়াসিন পুরস্কার। যা পেলেন বেকার। সব চেয়ে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারের পুরস্কার ‘কোপা ট্রফি’ পেলেন জুভেন্টাসে নবাগত মাথিস ডে লিট। অনুষ্ঠান-মঞ্চে লিয়োনেল মেসির মতো ফুটবলারের সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়াতে পেরে তিনি রোমাঞ্চিত। আর সেরা মহিলা ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েও অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে না পেরে মন খারাপ মেয়েদের ব্যালন ডি’ওর জয়ী মেগান র‌্যাপিনোর। তাঁর অসাধারণ ফুটবলের সৌজন্যেই যুক্তরাষ্ট্র জিতেছে মেয়েদের বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের মঞ্চকে র‌্যাপিনো ব্যবহার করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতা করতে। ৩৪ বছরের এই মেয়ে প্যারিসে না এসেও বার্তা পাঠিয়েছেন। জানিয়েছেন, মেসির সঙ্গে পুরস্কার নিতে না পারার দুঃখটা তাঁর চিরকাল থেকে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন