ফ্লাশিং মেডোজে প্রথম বার ছাদ ঢাকা স্টেডিয়ামে লড়াই। ছবি টুইটার।
নিউইয়র্কের বুধ-সন্ধ্যায় তখন রাফা নাদালের একটা সাধারণ দ্বিতীয় রাউন্ড ম্যাচ চলছিল। আর ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবারের সেই ভোরেই নাদালকে ঘিরে থাকা আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে বাস্তব হয়ে উঠল এক অসাধারণ স্বপ্ন!
এক বছর আগে হলেও যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের সেন্টার কোর্টে এ রকম সময় বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা ঝরতে দেখলে একসঙ্গে অনেকগুলো খুব পরিচিত ঘটনা ঘটে যেত। মরসুমের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংগঠকেরা দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দিতেন আবহাওয়ার আরও আপডেটের খোঁজে, চোখ রাখতেন রেডার-স্ক্রিনে। পরিকল্পনা শুরু করতেন ম্যাচটা ঠিক কতক্ষণ বন্ধ থাকলে বৃষ্টি থামার পরে এ দিনই শেষ করা সম্ভব, নাকি পরের দিন টানতে হবে! দুই প্লেয়ার ততক্ষণে লকাররুমে ফেরার পথে পা বাড়াতেন। দর্শকেরা ভাবা শুরু করে দিতেন, তাঁদের কাল সকালের কাজের শিডিউল কতটা পাল্টাতে হবে! কারণ, আজ নাদালের ম্যাচ শেষ হতে গভীর রাতও গড়িয়ে যাবে।
কিন্তু গত রাতে এ সবের একটাও হয়নি। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের মাথায় যে এ বছর পনেরো কোটি ডলারের ছাদ লেগে গিয়েছে! যা বুধবার রাত ১০:৪০-এ প্রথম সরকারি ভাবে পরীক্ষিত হয়ে গেল সেখানে। যখন নাদাল বনাম ইতালির আন্দ্রেয়াস সেপ্পি ম্যাচের চেয়ার আম্পায়ারের সামনে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর ব্রায়ান ইয়ারলি স্টেডিয়ামের সাউন্ড সিস্টেমে ঘোষণা করলেন, ‘‘আমরা কোর্টের ছাদ ঢাকতে চলেছি। পরের সাড়ে পাঁচ মিনিটে এটা ইন্ডোর স্টেডিয়াম হয়ে যাবে!’’
যে-ই বলা, গোটা গ্যালারিতে যে হাততালির ঝড় উঠল, নাদালের গোটা ম্যাচে সে রকম শব্দব্রহ্ম তৈরি হল না। যতই কিনা নাদাল যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ইতিহাসে প্রথম ছাদ ঢাকা ম্যাচ জেতার (৬-০, ৭-৫, ৬-১) চিরকালীন রেকর্ডের মালিক হয়ে থাকুন। তবে মেঘে ঢাকা নিউইয়র্কের রাতের আকাশ আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের দর্শকদের সম্পূর্ণ চোখের আড়াল করে কোর্টের ছাদ পুরোপুরি ঢাকা পড়ার পর নাদাল যখন দ্বিতীয় সেটের সপ্তম গেমে সার্ভিস শুরু করেন, তখনও গ্যালারিতে তুমুল হাততালি। মজার ব্যাপার, যার সঙ্গে টেনিস খেলাটার কোনও সম্পর্ক নেই!
আরও মজার, প্রথম ম্যাচ খেলার মতো ছাদ ঢাকা আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে প্রথম প্র্যাকটিস করার নজিরও গড়েন নাদাল। গত সপ্তাহে এক দিন। দু’টো নজিরবিহীন মুহূর্তেই প্রথম শট মারার সুযোগ পেয়ে গেলেন স্প্যানিশ মহাতারকা। যাকে টেনিসমহলে বলা হচ্ছে, রাফার ‘ডাবল রুফ শট’! পরে স্বয়ং নাদাল থেকে শুরু করে মার্কিন টেনিস সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর গর্ডন স্মিথ বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক ছাদ নিখুঁত কাজ করেছে।’’
কর্তা যখন বলছেন, ‘‘আমরা সত্যি বলতে ভাবিইনি যে এত তাড়াতাড়ি এই দিনটা আসবে! বুধবার শহরে বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল মাত্র ১০-২০ শতাংশ। কিন্তু যখন দেখলাম ব্যাপারটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, আমরা ট্রিগারটা টিপে দিলাম,’’ তখন নাদালের মন্তব্য, ‘‘ওই সময়টায় আমি বুঝতে পারছিলাম না, দর্শকদের উৎসবের প্রতিক্রিয়া ঠিক কী ভাবে দেব! আমার মনে হয় না, স্টেডিয়ামের একজনও তখন বিয়ার কিনতে এমনকী বাথরুমে যেতেও নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠেছিলেন বলে! সবাই ছাদ ঢাকাটা দেখছিলেন। আমি নিজেও।’’ তবে নাদালের মনে হচ্ছে, কালকের ম্যাচে ছাদ ঢাকার আগে তাঁর ২৩ হাজার ভক্তের চিৎকার আর ঢাকা ছাদের নীচে সেই আওয়াজে পার্থক্য আছে। ‘‘আমি সব সময় নিউইয়র্কের মানুষের এনার্জি, চিৎকারকে ভালবাসি। এখানকার দর্শকদের সঙ্গে ভীষণ নৈকট্য অনুভব করি। কারণ আমি টেনিসটা ভীষণ আবেগ নিয়ে খেলি আর মার্কিন দর্শকেরা খুব আবেগী। তবে এই ম্যাচে মনে হল, ছাদ ঢাকার পরে দর্শকদের আওয়াজ সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশ বেশি, আরও তীব্র,’’ বলেছেন চোদ্দো গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী। আর আঢাকা এবং ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলার পার্থক্য? নাদাল বলছেন, ‘‘খুব একটা কিছু নয়। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে এমনি সময় কোনও হাওয়া থাকে না। ফলে ছাদ ঢাকা পড়ার পরেও শটে তেমন তারতম্য ঘটে না। তা ছাড়া স্টেডিয়ামটা এত উঁচু, ছাদ এত উপরে যে মনেই হয় না যে ওটা ঢাকা, না ঢাকা নয়। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা। অন্য কেউ খেললে তার অন্য রকম কিছু মনে হতেই পারে!’’