নেটে নেমে গেলেন নারিন, ম্যাচে নামা সেই রহস্যই

উপ্পলের রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামে এক পাক ঘুরে কে বলবে, দেশ জুড়ে আইপিএল উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। নিজামের শহরে শনিবারই প্রথম আইপিএল ম্যাচ। বিকেল চারটের ম্যাচের আগে আদৌ সব জোগাড়যন্ত্র শেষ হবে কি না, তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে আইপিএল ম্যানেজমেন্ট।

Advertisement

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৩৫
Share:

উপ্পলের রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামে এক পাক ঘুরে কে বলবে, দেশ জুড়ে আইপিএল উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। নিজামের শহরে শনিবারই প্রথম আইপিএল ম্যাচ। বিকেল চারটের ম্যাচের আগে আদৌ সব জোগাড়যন্ত্র শেষ হবে কি না, তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে আইপিএল ম্যানেজমেন্ট। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ঘরের মাঠের এ দিন যা অবস্থা দেখা গেল, দুশ্চিন্তাটা স্বাভাবিক।

Advertisement

মেন গেট দিয়ে ঢুকে একটু এগোলেই চোখে পড়বে বিশাল বিশাল কাটআউটের স্তূপ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা স্পনসরদের ব্যানার, নানা রঙের হোর্ডিং। সংগঠকদের ছুটোছুটি। হসপিট্যালিটি বক্সের তালা খুলে ধুলো ঝাড়া শুরু হল যখন, বিকেল পেরিয়ে সন্ধে। ভিআইপি গ্যালারির কার্পেট তখনও বসানো হয়নি। এ দিক-ও দিক ছড়ানো চেয়ার, কাঠের টুকরো, স্টেডিয়াম সাজানোর পাঁচমেশালি বস্তু। সব মিলিয়ে এলোমেলো, অবিন্যস্ত একটা পরিবেশ।

আর এই পরিবেশে বিকেল-বিকেল ঢুকে পড়ল যে টিমটা, তাদের অবস্থার সঙ্গে কি রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামের মিল পাওয়া যাবে?

Advertisement

যাবে। আবার যাবে না।

ঘরের মাঠে একশো আশি প্লাস তুলেও হেরে গিয়ে টিমটা কিছুটা অবিন্যস্ত হয়ে পড়েছে, ঠিক। বোলিং-ভারী টিমকে বোলিংই যদি ডুবিয়ে দেয়, সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে একটু সময় তো লাগবেই। তার মানে অবশ্য ভাবা যাবে না যে, একটা হারেই টিমটা একেবারে অগোছালো হয়ে পড়েছে।

এ দিনের নেট যার প্রমাণ। ব্যাটিং ইউনিট তুলনামূলক হালকা নেট করলে কী হবে, বোলারদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকতে দেখা গেল ওয়াসিম আক্রমকে। পীযূষ চাওলা আর কুলদীপ যাদব— এই দুইয়ের দিকে বিশেষ নজর ছিল আক্রমের। কখনও পীযূষের সঙ্গে টানা আলোচনা। আবার সূর্যকুমার যাদবকে বোল্ড করে দেওয়ায় কুলদীপের সহাস্য প্রশংসা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জাক কালিসকে দেখলে দুই মেন্টরের পার্থক্যটা আরও চোখে পড়বে। আগের ম্যাচে ব্যাটিং ফুল মার্কস পেয়ে গিয়েছে, তাই ব্যাটিং কোচ ছাত্রদের প্রায় ফ্রি পিরিয়ড দিয়ে দিচ্ছেন। বোলারদের সেখানে বাড়তি ক্লাস চলছে আক্রমের কড়া নজরদারিতে। উমেশ যাদবদের পেপটক দিচ্ছেন মাইক হর্ন।

শুক্রবারের কেকেআরকে ধরতে গেলে যদিও এটা দু’নম্বরে থাকবে। এক নম্বর কে এবং কেন, যে জানে না সে বোধহয় আইপিএলের নামটাও শোনেনি। এক নম্বরে অবশ্যই সুনীল নারিন। আইসিসির ছাড়পত্র পেয়ে সদ্য ‘মুক্ত’ সুনীল নারিন। পিতার অন্ত্যেষ্টি করে নাইট সংসারে ফেরা সুনীল নারিন। নাইট অস্ত্রাগারের পারমাণবিক বোমা সুনীল নারিন।

কেকেআর অধিনায়কের সাংবাদিক সম্মেলন হোক। কেকেআর মহাকর্তার প্রশ্নোত্তর পর্বে হোক। টিমের বর্তমান আগ্রহের এক ও একমাত্র বিষযবস্তু যে কে, মিনিট পিছু দু’বার বোঝা যাচ্ছে! গম্ভীর মোটামুটি ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন। নারিন টিমের সঙ্গে তো? শনিবার আছেন? খেললে কাকে বসাবেন? আচ্ছা, ইডেনে নারিন খেললে মুম্বই ম্যাচটা জেতা যেত নিশ্চয়ই?

আসলে ক্যারিবিয়ান রহস্য স্পিনারকে ঘিরে মিডিয়াকুলে এমন রহস্য-পরিবৃত পরিবেশ যে, সাংবাদিকদের প্রত্যেককে দেখলে ফেলুদা বা ব্যোমকেশ বক্সী মনে হবে! নারিন কোথায়, কেন নামছে না, আবার চেন্নাই গেল নাকি— তদন্তের যেন শেষ নেই। মুম্বই ম্যাচে না নামায় আবার গুজব ছড়িয়ে যায় যে, নারিন চেন্নাই চলে গিয়েছিলেন দেশ থেকে ফিরে। সেখানে ভরসা পাননি, তাই নাকি কেকেআর তাঁকে নামায়নি। শনিবারও যে নামছেন, কেকেআর ক্যাপ্টেন খুল্লমখুল্লা বললেন না। নারিন-প্রসঙ্গের প্রবাহে একটু থমকে গম্ভীর বললেন, নারিন আছেন। টিমের সঙ্গেই আছেন। শনিবার খেলবেন কি না, শনিবার সকালে ঠিক হবে।

কিন্তু শুক্রবারের নেট যদি নির্ণায়ক হয়, তা হলে হায়দরাবাদ ম্যাচে দেখা যেতে পারে ক্যারিবিয়ানকে। গম্ভীর-উথাপ্পা-রাসেলদের কিছু পরে নেটে ঢুকলেন নারিন। আর নেটে যতটা সময় থাকলেন, নাগাড়ে বল করে গেলেন। অসহ্য গরমেও একটুও বিশ্রাম না নিয়ে। কে জানে একবার মাঠে নামলে তাঁকে নিয়ে কাটাছেঁড়া চলবে গোটা ক্রিকেটবিশ্বে, জানেন বলেই বোধহয় এ ভাবে নিজেকে নিংড়ে দেওয়া।

সন্ধের দিকে কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোরকে ধরা গেল। প্রত্যাবর্তনের নারিন নিয়ে যিনি ভাল রকম আশ্বস্ত। নানা ব্যস্ততার ফাঁকে মুম্বই থেকে ফোনে বেঙ্কি মাইসোর বললেন, ‘‘নারিনকে দেখে আমাদের তো মনে হচ্ছে ও দারুণ ফর্মে আছে।’’ চেন্নাই যাওয়ার গুজব—সেটাও উড়িয়ে দিলেন এক ফুৎকারে। বললেন, নারিনের অ্যাকশনের শেষ পরীক্ষা হয়েছে ২৮ মার্চ। এবং সব দেখেশুনে আইসিসি তাঁকে ‘‘একশো শতাংশ’’ ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে।

বক্তব্যে স্বস্তি যেমন স্পষ্ট, তেমনই পরিষ্কার প্রচ্ছন্ন হুমকি। ঠিকই আছে। স্বস্তি, তেজ, ভরসা, হুঙ্কার, স্বপ্ন— সবের মোহনায় দাঁড়িয়ে তো ওই একজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন