বার্সা-প্রেমের জোয়ারে ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা চিরশত্রুতাও কি উধাও হয়ে গেল?
কেবল কোপা আমেরিকায় নয়, ফুটবলবিশ্বে এই প্রশ্ন বোধহয় উঠল বলে!
কোপায় নেইমার-দ্যুতিতে ব্রাজিল প্রথম ম্যাচে জেতার চব্বিশ ঘণ্টা আগেই আর্জেন্তিনার জার্সিতে নিস্তেজ দেখিয়েছে মেসিকে। এর পর স্বাভাবিক ঘটনা কট্টর ব্রাজিল আর আর্জেন্তিনার সমর্থকদের মতোই দু’দেশের ড্রেসিংরুম থেকেও গোটাকয়েক গোলাগুলি ছুটবে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দু’দেশের ফুটবল টিমের কেউ ফোড়ন কাটবে, পাল্টা উড়ে আসবে অন্য টিম থেকে।
তার বদলে দুঙ্গার ব্রাজিল দলের মুখ নেইমার বলছেন, মেসি-ই এ বার ব্যালন ডি’অর পাওয়ার যোগ্যতম ফুটবলার।
মেসি! যিনি কিনা চলতি কোপা আমেরিকায় আর্জেন্তিনার মুখ। ব্রাজিলের চিরশত্রু আর্জেন্তিনার।
কিন্তু নেইমার-মেসি যে আবার বার্সেলোনা-পরিবারের সদস্যও! ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে ত্রিমুকুটজয়ী বার্সার সফল যুগলবন্দি। যে ক্লাব-যুগলবন্দির তোড়ে ভেসে য়াওয়ার জোগাড় দেশজ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার। যা আরও একবার বুঝিয়ে দিচ্ছে— ক্লাব বনাম দেশ বিতর্কে আধুনিক ফুটবলগ্রহে ক্লাব দেশের আগে। কোপা আমেরিকার গনগনে আবহেও যেখানে মেসি-বন্দনায় মুখর নেইমার। আর্জেন্তিনা-ব্রাজিলের চিরশত্রুতাকে চুলোয় দিয়ে। বার্সা-সখ্যতাই সেখানে জয়ী। পরাজিত ঐতিহাসিক দেশজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা!
পেরুকে নিজে একটা গোল দিয়ে, অন্যটা সতীর্থকে সাজিয়ে দিয়ে ব্রাজিলকে জিতিয়ে উঠেই গতকাল মিক্স়ড জোনে নেইমারের মুখে অপ্রত্যাশিত মেসি-প্রসঙ্গ। ‘‘বিশ্বাস করি মেসি ইদানীং ওর সেরা ফুটবলটা খেলছে। যেটা ওকে ব্যালন ডি’অর জেতার ব্যাপারে আমার মতে প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। মেসি এ মরসুমে যা-যা সব করেছে তার পরে ও-ই ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের ট্রফি পাওয়ার যোগ্য। বিশ্বের সেরা ফুটবলার ও-ই। তাই ট্রফির গায়ে এখনই বিজয়ীর নাম লিখে দেওয়া যেতে পারে,’’ বার্সার হয়ে এ মরসুমে ৫৭ ম্যাচে ৫৮ গোল করা এলএম টেন সম্পর্কে এমনই মন্তব্য ক্লাবে তাঁর ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা সতীর্থ নেইমারের। তিনি নিজে ব্যালন ডি’অরের তালিকায় কোথায় থাকলে খুশি হবেন? নেইমারের জবাব, ‘‘চূড়ান্ত তিনের ভেতর থাকতে পারলেই খুশি হব।’’
এমন অভিনব আবহে কোপা আমেরিকায় কাল মেসির আর্জেন্তিনার পরের ম্যাচ সুয়ারেজ- বিহীন উরুগুয়ের বিরুদ্ধে। বার্সায় মেসির আর এক মহাতারকা সতীর্থ সুয়ারেজ। বিশ্বকাপে কামড়-কাণ্ডে যিনি ফিফার সাসপেনশনে কোপার বাইরে। গত কোপায় উরুগুয়ের কাছেই কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে যায় আর্জেন্তিনা। সুয়ারেজ যে টুর্নামেন্টের সেরা প্লেয়ার। মেসির এ বার বদলা নেওয়ার ম্যাচ উরুগুয়ের সঙ্গে। কিন্তু সেটা সফল হলেও একশো শতাংশ হবে কি? সুয়ারেজই তো থাকছেন না!
তবু দেশের জার্সিতে প্রথম কোনও সিনিয়র টুর্নামেন্ট জিততে এ বার মরিয়া মেসি উরুগুয়ে যুদ্ধের আগে বলেছেন, ‘‘আগের ম্যাচে আমরা জিততে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি। আমাদের এখন আগের সব বারের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। এখন উরুগুয়ের বিরুদ্ধে শুধু জেতার কথাই ভাবা উচিত আমাদের। ভামোস আর্জেন্তিনা!’’
মেসির ‘কাম-অন’ ডাকে আগেরো-তেভেজ-মাসচেরানোরা এখন কতটা সাড়া দেন সেটাই দেখার। মেসির দেশ কিন্তু প্রথম ম্যাচে আটকে গিয়ে কোপার গ্রুপ অব ডেথ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার সরণিতে যথেষ্ট বিপজ্জনক জায়গায়!