শুধু গত মরসুমেই নয়, সম্ভবত স্প্যানিশ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ত্রয়ী! বার্সেলোনার জার্সিতে মোট ১২২ গোল করে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ ত্রিফলা গত বার বিপক্ষের প্রতিটা ডিফেন্ডারের রাতের ঘুম কার্যত উড়িয়ে দিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণে বসেছিলেন এঁদের কম্বিনেশনের বিশ্বসেরা হয়ে ওঠার রসায়ন কী জানতে। অবশেষে রহস্য ফাঁস করে নেইমার বলে দিচ্ছেন, কোনও তিন মহাতারকার মধ্যে কোনও ‘ইগো’ সমস্যা ছিল না বলেই মাঠে তার ফল পেয়েছে তাঁদের টিম।
‘‘অনেকেই বলেছিলেন মেসি আর সুয়ারেজের সঙ্গে আমার জুটি ভাল হবে না। ভেবেছিলেন আমরা ঝগড়া করব। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছি আমরা,’’ এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন ব্রাজিলের ওয়ান্ডার কিড।
নেইমার বার্সায় সই করার পরে জোয়ান ক্রুয়েফের মতো কিংবদন্তিও বলেছিলেন, মেসিকে বিক্রি করে দিক ক্লাব। কারণ এলএম টেন এবং ওয়ান্ডারকিড এক ক্লাবে থাকলে দলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার উত্তরে নেইমার বলছেন, ‘‘মেসি আমাকে অনেক সাহায্য করেছে বার্সেলোনায় মানিয়ে নিতে।’’
দলবদলের বাজারে গুজব উঠেছিল নেইমারকে নাকি সই করাতে চাইছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। ব্রাজিলীয় মহাতারকা নিজেও স্বীকার করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে নাকি ম্যান ইউয়ের কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। তবে এখন পুরো ইউ-টার্ন নিয়ে নেইমার জানাচ্ছেন, তাঁর ফুটবল ভবিষ্যত্ রয়েছে কাতালান ক্লাবের গর্ভেই। ‘‘আমি বার্সেলোনায় আরও ইতিহাস তৈরি করতে চাই। এই ক্লাবের হয়ে আরও ট্রফি জিততে চাই। আমি স্পেনে এসে নিজের খেলা আর লাইফস্টাইল দুটোই পাল্টেছি।’’
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাসপেন্ড থাকার জন্য ব্রাজিলের প্রাক-বিশ্বকাপ ম্যাচ এই মুহূর্তে খেলতে পারছেন না সেই দেশের বতর্মান দলের সবচেয়ে বড় তারকা। নিজেকে ফিট রাখতে ডায়েট চার্টও বদলে ফেলেছেন নেইমার। গত মরসুমে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে ঐতিহাসিক ত্রিমুকুট জেতার পরে এই মরসুমটা বার্সেলোনার সবচেয়ে বেশি কঠিন হতে চলেছে সেই কথা মানছেন টিমের ব্রাজিলীয় মহাতারকা। ‘‘ত্রিমুকুট জিতে আমাদের মরসুমটা দারুণ কেটেছিল। কিন্তু এ বার লড়াই আরও কঠিন হবে।’’
নেইমারের মতো মেসিও এখন বিশ্রামে রয়েছেন। চোট সারাতে ব্যস্ত ফুটবলের রাজপুত্র আবার ক্লাব এবং জাতীয় দলে তাঁর সতীর্থ জাভিয়ার মাসচেরানোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আর্জেন্তেনীয় মিডিও মাসচেরানোর লেখা এক বইয়ে মেসি ভূমিকায় বলেছেন, ‘‘গত ব্রাজিল বিশ্বকাপে আমার হাতে আর্মব্যান্ড থাকলেও মাসচেরানোই সব সময় প্রতিটা ভুল ধরিয়ে দিত। প্রতিটা পরিস্থিতি ও সামলাতে পারে। খুব ভাল লিডার।’’ তাঁর এত দিনের বার্সা ও আর্জেন্তিনা সতীর্থ মাসচেরানো নাকি শান্ত থাকলে যেমন বন্ধুসুলভ, রেগে গেলে ততটাই উগ্র। ‘‘মাসচেরানোর আসলে নিজের দিন থাকে। কোনও কোনও দিন ও নিজে থেকে এসে কথা বলতে চায়। ঠাট্টা করে। আবার খারাপ দিনও যায়। তখন ওর সঙ্গে কথা না বলাই ভাল। সেই সময় আমরা ওকে দেখি কিন্তু কথা বলি না।’’
মাসচেরানোর মেজাজ ছাড়াও বার্সায় এখন আর এক সমস্যার নাম জেরার পিকে। স্পেনের জার্সিতে যিনি সমর্থকদের থেকেই টিটকিরি শুনছেন। তবে সেটা রিয়াল-বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরেই— সেটাও ধারণা অনেক বিশেষজ্ঞর। অর্ধেক কটাক্ষ নাকি আসছে রিয়াল সমর্থকদের কাছ থেকেই। নিজের প্রাক্তন সতীর্থের পাশে দাঁড়িয়ে জাভি হার্নান্দেজ বলছেন স্পেন সমর্থকদের এই খারাপ আচরণ বন্ধ হোক। ‘‘সময় এসে গিয়েছে যখন সমর্থকদের উচিত টিটকিরি কম দিয়ে সমর্থন জানানোর। পিকে তো স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করছে। তবু ওকে রিয়াল সমর্থকরা কটাক্ষ করছেন কারণ ও ন্যু কাম্পে কিছু কথা বলে দিয়েছিল। কিন্তু পিকে বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডারের মধ্যে এক জন। ওর প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত।’’