কলকাতা যতই খেলুক মাঠে, হারছে বাংলা

বাংলার এক জন ক্রিকেটারও নেই কলকাতার দলে। নানা মহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাংলার ছয়জন ক্রিকেটার রয়েছেন এ বারের আইপিএলে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৪:৩৮
Share:

বাংলার ক্রিকেটারদের ঠাঁই হয়নি কলকাতার দলে।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে অধিনায়ক রোহিত শর্মা-সহ রয়েছেন চার জন। চেন্নাই সুপার কিংসে রয়েছেন দু’জন। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে তিন জন। রাজস্থান রয়্যালসে একজন, বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলে দু’জন। কিংস ইলেভেন দলে তিনজন (পঞ্জাব ও হরিয়ানা মিলিয়ে), হায়দরাবাদে তিন জন। সেখানে কলকাতা নাইট রাইডার্স হল একমাত্র দল, যেখানে কোনও ভূমিপুত্র নেই।

Advertisement

বাংলার এক জন ক্রিকেটারও নেই কলকাতার দলে। নানা মহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাংলার ছয়জন ক্রিকেটার রয়েছেন এ বারের আইপিএলে। কিন্তু মনোজ তিওয়ারি (কিংস ইলেভেন পঞ্জাব), সায়ন ঘোষ ও মহম্মদ শামি (দিল্লি ডেয়ারডেভিলস), কনিষ্ক শেঠ (চেন্নাই সুপার কিংস), ঋদ্ধিমান সাহা ও শ্রীবৎস গোস্বামীদের (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ) প্রত্যেকে বাইরের শহরের হয়েই খেলে বেড়াচ্ছেন।

চন্দননগরের বাড়িতে বসে টিভিতে কেকেআর বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচ দেখেছেন চন্দ্রনাথ পোড়েল। তাঁর ছেলে ঈশান পোড়েল বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জয়ী ভারতীয় দলে বল হাতে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঈশানের ১৭ রানে চার উইকেট এবং ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সাত ওভারে ৩০ রানে দুই উইকেট খুব প্রশংসিতও হয়েছিল।

Advertisement

বিশ্বকাপ জয়ী ঈশানের সেই বন্ধুরা পৃথ্বী শ, শুভমন গিল, কমলেশ নগরকোটি, শিবম মাভিরা খেলছেন আইপিএলে। শুভমন ও মাভি শুক্রবারের ম্যাচেও খেললেন কলকাতার জার্সি গায়ে। ঈশান তখন পাড়ার ক্লাবে বসে খেলা দেখছেন। চন্দ্রনাথবাবু বলে ফেলেন, ‘‘কলকাতার দলে বাংলার কোনও ছেলে নেই। এটা খুব দুঃখজনক ঘটনা।’’ দ্রুত যোগ করেন, ‘‘অবশ্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দলের মালিকের চাওয়াটাও তো নির্ভর করে।’’ ঈশান এই বিতর্কের মধ্যে ঢুকতে চান না। সোজা বলে দেন, ‘‘শেষ মুহূর্তে চোট পেয়েছিলাম বলে সমস্যা হল। তাই এ বার আইপিএল খেলা হল না। দেখা যাক আগামী বছর কী হয়।’’

কেন কেকেআরে নেই বাংলার কেউ? বাংলায় যে ভাল মানের ক্রিকেটার তৈরি হচ্ছে না, সেই ছবি আবারও ফুটে উঠছে। জাতীয় পর্যায়েও তো একই ছবি। ভারতের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলে হাতে গোণা কয়েক জন আছেন। সিনিয়র দলে ওয়ান ডে-তে কেউ নেই। টেস্টে শুধু ঋদ্ধিমান এবং শামি। আইপিএলে মাঠ ভর্তি হয়ে যাচ্ছে ইডেনে। গ্যালারি একশোয় একশো। কিন্তু মাঠে দেখা যাচ্ছে না বাংলার এক জনকেও।

প্রাক্তন কেকেআর অধিনায়ক এবং এখন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ঘরের মাঠে নিজেদের ছেলেদের দেখতে কার না ভাল লাগে!’’ প্রাক্তন কেকেআর অলরাউন্ডার লক্ষ্মীরতন শুক্লের গলায় আবার ক্ষোভ। বললেন, ‘‘ভিভিএস লক্ষ্মণ তো এখান থেকেই ঋদ্ধিমান সাহা আর শ্রীবৎস গোস্বামীকে নিয়ে গেলেন। তা হলে কেকেআরের সঙ্গে যে সব বাঙালিরা রয়েছেন, তাঁরা কেন বলবেন না সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বা সায়ন ঘোষদের নাম?’’

যদিও শহর বনাম শহরের এই আইপিএল ঘরানার ক্রিকেটে ঘরের ছেলে খেলাতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক ক্রিকেটারই অন্য শহরের হয়ে খেলেন। যেমন দিল্লির বিরাট কোহালি অধিনায়কত্ব করেন বেঙ্গালুরুর। বা চেন্নাইয়ের দীনেশ কার্তিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন কলকাতাকে। কিন্তু কেকেআরের ক্ষেত্রে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, তারা যে সব ক্রিকেটারকে অন্য রাজ্য থেকে বেছে নিচ্ছে, সেই মানের ক্রিকেটার কি বাংলায় নেই?

প্রাক্তন স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী যেমন বলছেন, ‘‘রিঙ্কু সিংহকে যতটা প্রচারের আলোয় এ বার আনা হল, সেই প্রচার বাংলার কেউ পেতেই পারত। রিঙ্কুর মানের অনেক ক্রিকেটার বাংলাতেই রয়েছেন।’’ গোপাল বসু বলছেন, ‘‘গায়ক, নায়ক, লেখকদের মতো বাঙালি প্রতিভাবান ক্রিকেটাররাও বোধহয় হারিয়ে গিয়েছেন। তাই হয়তো দলের মালিকেরা সেই খোঁজ পাচ্ছেন না।’’ বাংলার রঞ্জি ট্রফি জয়ের সদস্য প্রণব রায়ও বলছেন, ‘‘কলকাতার দলটা তো আগেই দিল্লিওয়ালাদের দল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, ১৪০ কিমি গতিতে বল বা ক্রিজে গিয়ে দাপটের সঙ্গে ব্যাটিং করে ম্যাচ বার করার ক্রিকেটার বাংলায় কোথায়?’’

সিএবি-র যুগ্ম সচিব অভিষেক ডালমিয়া বলছেন, ‘‘বোর্ডের উচিত প্রত্যেক দলে দু’জন সেই শহরের ক্রিকেটার রাখার নিয়ম চালু করা। এ ব্যাপারে বোর্ডের কাছে প্রস্তাব রাখতে চলেছি।’’ তাঁর সেই প্রস্তাব গৃহীত হবে কি না, সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার।

আপাতত বাস্তব চিত্র মোটেও আনন্দিত হওয়ার মতো কিছু নয়। পুরো আইপিএলে বিভিন্ন দলের হয়ে খেলা বাংলার ক্রিকেটারের সংখ্যা মাত্র তিন! ঋদ্ধিমান সাহা, মনোজ তিওয়ারি এবং শ্রীবৎস গোস্বামী। তা-ও তাঁরা কেউ নিয়মিত ভাবে প্রথম একাদশে জায়গা পাননি। ডাগআউটে বসে কাটাতে হয়েছে। আইপিএলে বাংলার দুঃখের স্কোরবোর্ড পাল্টাবে কে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন