ঘুমন্ত অ্যাডিলেডে কাপ কাঁসর-ঘণ্টার দেখা নাই রে

ডন ব্র্যাডম্যান গোটা অস্ট্রেলীয় মহাদেশে অবসরজীবন কাটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত শহর হিসেবে অ্যাডিলেডকেই যে বেছে নিয়েছিলেন, তার কারণ এর শান্তিপ্রিয় মেজাজ। সোম থেকে বৃহস্পতি এমনই ঘুমন্ত থাকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই নগর যে, মাল্টিপ্লেক্সে নাইট শো-র ব্যবস্থা দূরে থাক, ইভনিংও নিশ্চয়ই কেউ চালায় না। অ্যাডিলেড বিমানবন্দরে প্লেন নামা বা ওঠাও রাত দশটার বাইরে কিছুতেই নয়। মেলবোর্নের পর দ্বিতীয় শহর যেখানে ট্রাম চলে। কিন্তু তার যা গতি আমাদের ২৪ বা ২৬ নম্বর ট্রামের স্পিড তার চেয়ে বেশি। একেবারে বৃদ্ধাশ্রম অবশ্য নয়।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৫
Share:

নিঝুম অ্যাডিলেড ওভাল। ছবি টুইট করলেন ম্যাথু হেডেন।

ডন ব্র্যাডম্যান গোটা অস্ট্রেলীয় মহাদেশে অবসরজীবন কাটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত শহর হিসেবে অ্যাডিলেডকেই যে বেছে নিয়েছিলেন, তার কারণ এর শান্তিপ্রিয় মেজাজ। সোম থেকে বৃহস্পতি এমনই ঘুমন্ত থাকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই নগর যে, মাল্টিপ্লেক্সে নাইট শো-র ব্যবস্থা দূরে থাক, ইভনিংও নিশ্চয়ই কেউ চালায় না। অ্যাডিলেড বিমানবন্দরে প্লেন নামা বা ওঠাও রাত দশটার বাইরে কিছুতেই নয়। মেলবোর্নের পর দ্বিতীয় শহর যেখানে ট্রাম চলে। কিন্তু তার যা গতি আমাদের ২৪ বা ২৬ নম্বর ট্রামের স্পিড তার চেয়ে বেশি। একেবারে বৃদ্ধাশ্রম অবশ্য নয়। বরং তরুণদের ফেস্টিভ্যাল-টেস্টিভ্যাল হয়। রক গ্রুপ এসে পারফর্ম করে। কিন্তু সে সব উইকএন্ডে।

Advertisement

সোমবার বিকেলে ব্র্যাডম্যানের শহরে নেমে মনে হল বিশ্বকাপ নিয়েও অ্যাডিলেড বুঝি উইকএন্ডেই জাগবে। আপাতত সাপ্তাহিক অভ্যেস মেনে সেই ঘুমন্ত।

আর ঠিক ছয় দিন বাদে এখানে বিশ্বকাপের সবচেয়ে জমজমাট ম্যাচ। গোটা ভারত টিভির সামনে কী ভাবে বসবে এখন থেকে ঠিক করে ফেলেছে। অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে স্টার স্পোর্টস কমেন্ট্রি করাচ্ছে! অ্যাডিলেডে শনি-রবি থাকার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। রিওর বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালের মতো ছয় বাই ছয় হোটেল ঘরগুলো আড়াইশো অস্ট্রেলিয়ান ডলার করে চাইছে। গোটা বিশ্ব থেকে ভারত-পাকিস্তানিরা আসছেন ম্যাচ দেখতে। আর খোদ অনুষ্ঠান কেন্দ্রে কিনা কাঁসর-ঘণ্টার আওয়াজ নেই!

Advertisement

শুনলাম অ্যাডিলেড বিমানবন্দরের একটা কোণে নাকি ‘স্বাগত ওয়ার্ল্ড কাপ অতিথিরা’ বলে লেখা হয়েছে। কিন্তু সেটা নিশ্চয়ই ধোনির টিমের বোলিংয়ের মতোই এমন মলিন আর নিষ্প্রাণ যে, চোখে পড়েনি। এয়ারপোর্ট থেকে মাইলখানেক যাওয়ার পর কয়েকটা পরপর ব্যানার নজরে এল। কলাপাতার সাইজের চেয়েও ছোট। আর এমন দারিদ্রের সঙ্গে পেশ করা যে, কলকাতায় জাপানি তেলের বিজ্ঞাপনও তুলনায় সম্ভ্রান্ত মনে হবে!

কাপধ্বনি শুরু হওয়ার একশো কুড়ি ঘণ্টা আগেও আইসিসির প্রচার আর প্রোমোশনের এমন অবস্থা কেন? গোটা অস্ট্রেলিয়া জুড়েই কি একই হাল, না স্রেফ ব্র্যাডম্যানের অতিপ্রিয় শহরে? নাকি অস্ট্রেলিয়াতে আবার সেই কাপ-হাওয়াই ওঠেনি যা বাইশ বছর আগে এ দেশে গমগম করে বইত?

উত্তরগুলো পাওয়ার জন্য মনে হচ্ছে আরও ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু একটা প্রশ্নের জবাব ভারতীয় ক্রিকেট মহলে কেউ দিতে পারছেন না। তা হল, সোমবার ভোরে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের লাউঞ্জে যাঁকে অকস্মাত্‌ আবিষ্কার করা গেল এবং যিনি একই ফ্লাইটে অ্যাডিলেড নামলেন সেই এমএ সতীশ কী করে টিম ইন্ডিয়ায় প্রত্যাবর্তন করলেন?

সতীশ ছিলেন টিমের লজিস্টিকস ম্যানেজার। গত বছর ঢাকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁকে টিম থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় শ্রীনির বোর্ড। ইন্ডিয়া সিমেন্টসের কোনও কর্মচারী ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকতে পারবেন না, এই ছিল সর্বোচ্চ আদালতের রায়। এক পাকিস্তান ম্যাচের আগে সতীশ চলে গিয়েছিলেন। আর একটায় ফেরত এলেন কী করে? বললেন, পুরো বিশ্বকাপটাই থাকবেন। তা হলে কি কোর্ট তাঁকে ছাড় দিল? দিলে সেটার কথা কেউ জানে না কেন? নাকি আদালতকে অবজ্ঞা করেই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হল?

আরও বড় কৌতূহল, সতীশ তো ইশান্তের বদলি হিসেবে বল করবেন না। নিছকই লজিস্টিকস ম্যানেজার। তা হলে তাঁকে নিয়ে এত মরিয়া মনোভাব কেন? কেউ কেউ বললেন, ওকে আনা হল ধোনির হাত শক্ত করতে। নইলে শাস্ত্রীর প্রশ্রয়ে কোহলি বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে যাচ্ছিল। আবার কারও কারও মতে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে শাস্ত্রী লড়ে যাচ্ছেন ধোনি-কোহলিকে কাছাকাছি আনতে।

কোনটা সত্যি অ্যাডিলেডের সমুদ্র জানে! এটা সত্যি যে, আজ স্থানীয় ফক্স স্পোর্টসে ফেভারিটদের নিয়ে একটা আলোচনা দেখছিলাম। জেফ টমসন, মার্ক ওয়, ওয়াসিম আক্রম, অ্যালান বর্ডার, মিচেল জনসন, স্টিভ স্মিথ, ড্যারেন লেম্যান।

লেম্যান বললেন, এমসিজি ফাইনালের কথা এখন ভাবছি না। আগে তো শনিবার ইংল্যান্ডকে হারাই। সবাই বলল, এত বিনয় করবেন না। মার্ক আর ওয়াসিম টুর্নামেন্ট সেরা হিসেবে আগাম বাছলেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। বর্ডার বললেন, এবি ডেভিলিয়ার্সের ওপর তিনি অসম্ভব আশা রাখছেন। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের কথা উঠল। সঙ্গকারার কথা উঠল যে, জীবনের শেষ বিশ্বকাপকে তিনি অবধারিত রাঙিয়ে দিতে চাইবেন। থমো বললেন, “আমাদের সময়ের তুলনায় বলগুলো এখন অনেক নরম। তবু সেটা দিয়েই মিচেল বিপক্ষকে ভাঙবে। যেমন ও ভেঙে থাকে।”

কারা টুর্নামেন্ট জিতবে? অতিথিরা বললেন, ফাইনাল অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা। খুব কাছাকাছি থাকবে নিউজিল্যান্ড। কেউ কেউ বললেন, পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

স্কাইপে যিনি বারবার সদ্যোজাত কন্যার ছবি দেখছেন আর বাবা হওয়ার আনন্দে টিমমেটদের পরশু শ্যাম্পেন খাওয়ালেন সেই ধোনি কি ক্রিকেট স্পেশালটা টিভিতে দেখছিলেন?

দেখলে তাঁর মনে হত, আমরা কিনা গতবারের চ্যাম্পিয়ন। অথচ কেউ আমাদের নিয়ে একটা কথাও বলছে না। অ্যাডিলেডে যেমন কাপের কাঁসর-ঘণ্টা নেই, তেমনই ভারতের এই দলকে নিয়েও নেই! দু’টোই ঘুমন্ত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন