প্র: আপনার বারবার অনুশীলনের সময় বদল। একসঙ্গে অনুশীলন করে খেয়ে-দেয়ে তাঁবু থেকে সবাই একটা বাসে করে শিলিগুড়ির বিমান ধরতে যাওয়া। ডার্বির আগে তো খুব চাপে আছেন মনে হচ্ছে ?
খালিদ জামিল: চাপ তো আছেই। ইস্টবেঙ্গল কোচের সিট সব সময়ই ‘হট সিট’। সব ম্যাচেই চাপ। আইজলে বা মুম্বইতে এই প্রত্যাশার চাপ ছিল না। কিন্তু বিশ্বাস করুন এটা আমি উপভোগ করছি।
প্র: উপভোগ? কী বলছেন, পিকে-অমল দত্তর মতো পোড় খাওয়া কোচেরাও তো বলতেন এই ম্যাচের আগে রাতের ঘুম চলে যায়।
খালিদ: না, সেরকম কিছু অন্তত এখনও হয়নি আমার। ভাগ্যকে বাজি রেখে এখানে কোচিং করতে এসেছি। একটা পজিটিভ রেজাল্ট চাইছি। ওরা (মোহনবাগান) কি বলছে? জিতবে? আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো কামো-ক্রোমা যা খেলছে, তাতে আমাদের রক্ষণ ভাঙতে পারবে? ওদের স্ট্রাইকিং ফোর্সটা কিন্তু খুব ভাল।
প্র: সেটা তো বলবেন আপনি? আপনার নিজের কী মনে হয়?
খালিদ: ভুল ত্রুটি একটু-আধটু হচ্ছে আমাদের ডিফেন্সে। ঠিক করতে হবে। আমাদের সবথেকে বড় অসুবিধা হল, ম্যাচের আগে গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকাটা। ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন, এটা মাথায় রাখলেই সমস্যা হয়ে যায়। এটা তাড়াতে হবে। পজিটিভ রেজাল্ট চাই এটা সবার মাথায়
ঢোকাতে চাইছি।
প্র: ডার্বির আগে পাঁচ গোলে জয়। উইলিস প্লাজার হ্যাটট্রিক। এটা তো আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট।
খালিদ: রেজাল্ট আচ্ছে হ্যায়। আমি কিন্তু টালিগঞ্জ ম্যাচ বা অন্য ম্যাচের থেকে আলাদা করে দেখছি না ডার্বিকে। শুধু বলছি পজিটিভ রেজাল্ট চাই। সব ম্যাচের আগে যা বলি।
প্র: কলকাতার কোচেদের বিচার হয় ট্রফির সঙ্গে ডার্বির জয় দিয়েও। না দিতে পারলেই গালাগালি।
খালিদ: ওসব নিয়ে ভাবছি না। সবই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি। পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। চোট পেয়ে ফুটবলার-জীবন শেষ হয়ে গিয়েছিল খুব অল্প সময়ে। বড় ট্রফি জিতিনি। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন টিমে থেকেও চোটের জন্য খেলতে পারিনি মহীন্দ্রা ইউনাইটেডে। সেই দুঃখটা রয়ে গিয়েছে। কোচিং-জীবনে সেটা পূরণ করতে চাই। কলকাতা লিগটা সে জন্য জেতা দরকার। তবে আমি মনে করি ফুটবলারদের জন্যই ট্রফি পান কোচেরা। ওরা ভালভাবে থাকলেই কোচের সাফল্য আসে।
প্র: সে জন্যই আল আমনাকে নিজের গাড়িটা দিয়ে দিলেন?
খালিদ: ওটা কিছুই নয়। ক্লাব আমাকে গাড়িটা দিয়েছিল। আমনার গাড়িটার স্টিয়ারিং ওকে সমস্যায় ফেলেছিল। তাই আমার গাড়িটা
দিয়ে দিয়েছি।
প্র: ড্রেসিংরুমের রসায়ন ঠিক রাখার এসবই তো টোটকা?
খালিদ: (গম্ভীর) জানি না।
প্র: কিন্তু সবাই তো বলে আপনি ছোট নইমুদ্দিন? একটু গোড়া মানসিকতার। কঠোর, ফুটবলারদের নানা ভাবে শৃঙ্খলায় বাঁধেন।
খালিদ: নইম স্যারের সঙ্গে আমাকে মেলাচ্ছেন! ভাল তো। আমি তো ওঁর কাছে শৃঙ্খলা আর হার্ড ওয়ার্ক শিখেছি। তাতে দোষের কী?
প্র: কলকাতা লিগ জিতলেই তো ইতিহাসে। টানা আট বার!
খালিদ: ইতিহাসে আমার কোনও আগ্রহ নেই। পজিটিভ রেজাল্ট চাই।
প্র: কলকাতা লিগ জেতার পর তা হলে আই লিগ?
খালিদ: আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবি। পাড়ার লিগ না জিততে পারলে দেশের লিগ জিতব কী করে? আগে ওটা জিতি।
প্র: কুয়েতে আপনার জন্ম। বেড়ে ওঠা। সেখান থেকেই না কি মিশেল প্লাতিনিকে আইডল করেছেন।
খালিদ: কুয়েতে ছোটবেলায় প্রথম প্লাতিনিকে দেখেছিলাম। তাই প্লাতিনিকে মনে ধরেছিল। সেটা রয়ে গিয়েছে।
প্র: আপনার দেশীয় আদর্শ কোচ কে?
খালিদ: অনেকেই। আমি শুধু ছোট নইম নই, ছোট সুখবিন্দর সিংহ, ছোট ডেভিড বুথ, ছোট কোভারম্যান্স। সবার থেকে কিছু না কিছু শিখেছি।
প্র: আর বিদেশি?
খালিদ: সবাই। ফার্গুসন, মোরিনহো, কন্তে সবাই।
প্র: আপনার যে বায়োপিক অজয় দেবগন করছেন সেটার কী হল?
খালিদ: বলতে পারব না। আইজলে থাকার সময় শুনেছিলাম হচ্ছে। তবে হলে কলকাতার পর্বটা থাকবে। যদি কলকাতা লিগ জিতি সেটাও। এখানকার ফুটবল দর্শক-সমর্থকই অন্যরকম।
প্র: এত কম বয়সে দেশের সবথেকে দামি কোচ। শোনা যাচ্ছে চুক্তি কোটি টাকার উপর?
খালিদ: কেউ তো কখনও চাকরির প্রস্তাব দেয়নি। তাই কোচিং করাচ্ছি। চুক্তি নিয়ে কিছু বলব না।
প্র: স্ত্রী, দুই ছেলে রেহান এবং আমানকে মাঠে এনেছেন?
খালিদ: না, না, না। ওসব আমি করি না। সে ইচ্ছেও নেই।