বিমানযাত্রার ক্লান্তি ভুলে মহড়ায় সনি

সকাল ন’টায় শুরু বেঙ্গালুরু এফ সি ম্যাচের শেষ প্রস্তুতি। সঞ্জয় সেনের টিমের ফুটবলাররা তখন সবে অনুশীলনে নামতে শুরু করেছেন।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

প্রস্তুতি: মোহনবাগান মাঠে অনুশীলনে সনি নর্দে। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল ন’টায় শুরু বেঙ্গালুরু এফ সি ম্যাচের শেষ প্রস্তুতি। সঞ্জয় সেনের টিমের ফুটবলাররা তখন সবে অনুশীলনে নামতে শুরু করেছেন।

Advertisement

আর ঠিক ন’টা বাজার এক মিনিট আগে দৌড়তে দৌড়তে সবুজ-মেরুন তাঁবুতে ঢুকলেন যে সোনালি চুলের ফুটবলার, তিনি হাইতি থেকে কুড়ি ঘণ্টার বিমান যাত্রার পর শুক্রবার ভোরেই এসে পৌঁছেছেন শহরে। অবিন্যস্ত প্যান্ট-জামা। চোখে ঘুম, ক্লান্তি। তাতে কী? সব সরিয়ে রেখে মাঠে হাজির সনি নর্দে।

অনুশীলন দেখতে আসা সমর্থকদের আলোচনা বদলে যায় মুহূর্তে— হোসে ব্যারেটোও এ রকম ছিলেন! ঘণ্টাখানেক শারীরিক কসরৎ করে ফেরার পথে সনি আনন্দবাজার-কে বলছিলেন, ‘‘আইজল শেষ চার ম্যাচে কী করে তার ওপর নির্ভর করছে খেতাবের ভাগ্য। আমাদের এখন শুধু জিতে যেতে হবে। বেঙ্গালুরু ম্যাচটা জিততেই হবে। আমাকে ভাল খেলতেই হবে।’’

Advertisement

আই লিগের শেষ তিন ম্যাচে জয় নেই। লিগ টেবলে অবস্থান তিন নম্বরে। এই অবস্থায় সনি-ড্যারেল ডাফিদের শরীরী ভাষায় অদ্ভুত রকমের জেদ। অনুশীলনে যা ঠিকরে বেরোয় প্রতি সেকেন্ডে। এ দিন সকালেও প্রস্তুতি ম্যাচের সময় নিজের টিমের রক্ষণ আর মিডিওদের ফাঁকফোকর দিয়ে বল গলে যাচ্ছে দেখে চিৎকার করে উঠছিলেন মোহনবাগান কোচ। ‘‘ওখান দিয়েই বিনীত, উদান্ত-রা ঢুকবে কাল। সুনীল বল পেয়ে গোল করে দেয় এ সব জায়গা থেকেই।’’ এই মরসুমে দু’বার সুনীল ছেত্রীদের মুখোমুখি হয়েছেন সনি-রা। একবারও জিততে পারেনি মোহনবাগান। দেখে মনে হল, সঞ্জয় তাই সতর্ক।

কিন্তু আজ, শনিবার সনি বনাম সুনীলদের চমকপ্রদ লড়াইয়ের আগে কিন্তু দু’দলের কোচ দু’রকম বার্তা দিয়ে গেলেন। যা শুনে মনে হল আলবার্তো রোকা আর সঞ্জয় সেন একসঙ্গে উত্তম-সুচিত্রার ঢঙে ডুয়েট গেয়ে গেলেন ম্যাচের আগে, ‘‘আজ দু’জনার দু’টি পথ ওগো, দুটি দিকে গেছে বেঁকে।’’ মোহনবাগানের লনে দুপুরের সাংবাদিক সম্মেলনে সেটা আরও স্পষ্ট হল। বেঙ্গালুরু কোচ সরাসরিই বলে দেন, ‘‘আমরা তো আই লিগের লড়াইয়েই নেই। এ এফ সি কাপে ভাল কিছু করাই এখন লক্ষ্য আমাদের। চার দিন পর মলদ্বীপের সঙ্গে ম্যাচ। সেটা মাথায় রাখছি।’’ আর সঞ্জয় সেনের মুখ থেকে পাওয়া গেল ঠিক উল্টো বক্তব্য, ‘‘এএফসি কাপ-টাপ নয়, আই লিগ খেতাব জেতাই অগ্রাধিকার আমাদের কাছে। তার জন্য জিততে হবে।’’

তিন বছরে দু’বার আই লিগ জিতেছে ‘দ্য ব্লুজ’। সঙ্গে প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসাবে এ এফ সি-র ফাইনাল খেলা। সোনার দৌড়। বেঙ্গালুরু কোচের ইঙ্গিত, রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে শনিবার সেরা দল না-ও নামাতে পারেন। কিন্তু সবুজ-মেরুন কোচের তো সেটা করার উপায় নেই। তিনি জানেন, এই ম্যাচে হারলেই আরও পিছিয়ে পড়বেন খেতাবের যুদ্ধে। সে জন্য সঞ্জয় মরিয়া। নানা অঙ্ক ঘুরছে তাঁর মাথায়।

সনি এসে যাওয়ায় যতটা স্বস্তিতে তিনি, ঠিক ততটাই অস্বস্তিতে অনূর্ধ্ব ২২ কোটায় কাকে কোন পজিশনে ব্যবহার করবেন তা নিয়ে। যা ইঙ্গিত, শুরু থেকেই সনিকে নামিয়ে আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়াতে পারেন মোহনবাগান কোচ। বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ কোচ রোকা কিন্তু স্পষ্ট করে বলে দিলেন, ‘‘সনি সেই মানের বিদেশি যে ম্যাচের ফল পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।’’

মনে হচ্ছে আজ শনিবারের মহারণে দু’টো সমীকরণ কাজ করবে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে। এক) জাতীয় দলের হয়ে খেলা ফুটবলাররা কতটা ক্লান্ত অবস্থায় আছেন। কারণ বেঙ্গালুরুর সাত এবং মোহনবাগানের তিন ফুটবলার এত দিন ছিলেন ভারতীয় দলের সঙ্গে। দুই) কয়েক দিনের বিরতির পরে লিগ আবার শুরু হচ্ছে। কতটা ছন্দে আছে তাদের টিম সেটা দুই কোচের কেউই পরীক্ষা করার সুযোগ পাননি। কারণ জাতীয় দল ও বিদেশি ফুটবলার—অনেকেই টিমের সঙ্গে ছিলেন না মাঝের এই পর্বে।

কথা বলার সময় সেটা স্বীকারও করে নিয়েছেন দুই কোচ। বেঙ্গালুরু কোচের সুবিধা তাঁর আই লিগে হারানোর কিছু নেই। বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইতে আছে। এই ম্যাচটা হারলে ওরা ছিটকে যাবে অনেকটাই। চাপ তাই ওদের বেশি।’’ যা শুনে ডাফিদের কোচের মন্তব্য, ‘‘জিতে ফুটবলাররা প্রমাণ করুক ওরা চ্যাম্পিয়ন হতে চায়।’’

আলবের্তো রোকা বা সঞ্জয় সেন— দুই ধুরন্ধর কোচকেই তাই নিজেদের ক্যানভাসে নানা রং আঁকতে হচ্ছে। তৈরি করতে হচ্ছে নিখুঁত স্ট্র্যাটেজি। সামান্য ভুল হলেই যে সমস্ত কিছু ওলটপালট হয়ে যাবে।

শনিবার

মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি (সন্ধে ৭.০৫, টেন টু)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন