আবারও শীর্ষস্থান দখলের দৌড়ে জোকার

সেন্টার কোর্টের দর্শকরা বেশির ভাগই চাইছিলেন নাদাল জিতুন। দর্শকদের আবেগ ছিল নাদালের পক্ষে। তা ছাড়া জোকোভিচ এ বার কোর্টে বেশ কয়েক বার মাথা গরম করেছেন। কোর্টে র‌্যাকেট আছড়ে ফেলেছেন। দর্শকদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছেন। তাই সেন্টার কোর্টের দর্শকদের একাংশও বোধহয় নোভাকের বিরুদ্ধে ছিল।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৪:১০
Share:

নোভাক জোকোভিচ

বহু দিন পরে এত ভাল একটা ম্যাচ দেখলাম। নোভাক জোকোভিচ বনাম রাফায়েল নাদাল। টেনিসের সর্বকালের অন্যতম দুই সেরা দু’দিন ধরে উইম্বলডন সেমিফাইনালে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার যে লড়াইটা দেখালেন, তাঁর মান এতটাই উচুঁ ছিল যে সেন্টার কোর্টের দর্শকাসন ছেড়ে এক মুহূর্তও ওঠার উপায় ছিল না!

Advertisement

কেউ কাউকে ছাড়ার পাত্র নন। চূড়ান্ত সেটে তো বেশির ভাগ গেমই তাই ৩০-৩০-তে গিয়েছে বা ডিউস মানে ৪০-৪০ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জোকোভিচ জিতলেন ৬-৪, ৩-৬, ৭-৬ (১১-৯), ৩-৬, ১০-৮।

তবে, আমি একটা ব্যাপারে উইম্বলডন আয়োজকদের উপরে হতাশ। ম্যাচটা অনেক আগে দেওয়া উচিত ছিল শুক্রবার। প্রথম সেমিফাইনাল সাড়ে ছ’ঘণ্টা চলায় জকোভিচ-নাদালের ম্যাচটা শুরু হয় প্রায় স্থানীয় সময় রাত আটটায়। তাই এমন একটা আকর্ষণীয় লড়াইও পুরোটা শেষ করা যায়নি। তৃতীয় সেটের পরে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল উইম্বলডনের নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় সময় রাত ১১টায়। উইম্বলডনে যাকে বলা হয় ‘রাত ১১টার কার্ফিউ’। তা ছাড়া উইম্বলডনে এই পঞ্চম সেটে টাইব্রেকার না থাকার নিয়মটাও পাল্টানো উচিত। যেটা যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে আছে। টাইব্রেকারের নিয়মটা থাকলে প্রথম সেমিফাইনালটা সাড়ে ছ’ঘণ্টা চলত না।

Advertisement

যাই হোক, শুক্রবার এই খেলাটা যখন থামানো হল, তখন জোকোভিচ ২-১ সেটে এগিয়ে। তাই আজ কিছুটা হলেও এগিয়ে থেকেই শুরু করেছিল বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর। কিন্তু নাদালও চ্যাম্পিয়ন। কী ভাবে বড় মঞ্চে ফিরে আসতে হয় সেটা জানেন। চতুর্থ সেটে জোকোভিচের সার্ভিস ভেঙে দ্রুত সমতা ফেরাতে তাই দেরি করেননি। চূড়ান্ত মানে পঞ্চম সেটে ম্যাচটা যে কেউ জিততে পারতেন। সেন্টার কোর্টের দর্শকরা বেশির ভাগই চাইছিলেন নাদাল জিতুন। দর্শকদের আবেগ ছিল নাদালের পক্ষে। তা ছাড়া জোকোভিচ এ বার কোর্টে বেশ কয়েক বার মাথা গরম করেছেন। কোর্টে র‌্যাকেট আছড়ে ফেলেছেন। দর্শকদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছেন। তাই সেন্টার কোর্টের দর্শকদের একাংশও বোধহয় নোভাকের বিরুদ্ধে ছিল।

আমার কিন্তু আগেই মনে হচ্ছিল জোকোভিচ এ বার আগের ছন্দে ফিরতে পারেন। ওঁর এর আগের রাউন্ডের দুটো ম্যাচ আমি দেখেছিলাম। মনে হয়েছিল, সার্ভিসের ধার এখন অনেক বেড়েছে। কোর্টে নড়াচড়া অনেক উন্নত হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরে জোকোভিচের সার্ভিসের অ্যাকশন পাল্টে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলেন না। উইম্বলডনে সার্ভিসের উপর নিয়ন্ত্রণটা ফিরে এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা মোক্ষম সময়ে ‘এস’ সার্ভিস করে বিপক্ষের কাছ থেকে পয়েন্ট কেড়ে নিতে পারছেন। যেটা যে কোনও টেনিস খেলোয়াড়ের সম্পদ। এই ম্যাচেও তো জোকোভিচ ২৩টা এস মেরেছেন। নাদালের এসের সংখ্যা সেখানে ৮। পাশাপাশি জোকোভিচের ব্যাকহ্যান্ড গ্রাউন্ড স্ট্রোক বিশ্বের সেরা। নাদালের বিরুদ্ধেও এই দুটো অস্ত্রই দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়ে জিতলেন। সুযোগ নাদালের কাছেও ছিল। তৃতীয় সেটে টাইব্রেকারে এক সময় নাদাল সেট পয়েন্টের সামনে ছিলেন। বিশ্বের এক নম্বর সেটা জিততে পারলে ম্যাচটা অন্য রকম হতে পারত।

সে যাই হোক। এ বার ফাইনালে জোকোভিচের সামনে কেভিন অ্যান্ডারসন। গোটা প্রতিযোগিতায় কেভিন যে সাহস দেখিয়েছেন তার তারিফ করতেই হবে। ফাইনালেও তিনি যদি সার্ভিসে ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন, জোকোভিচকে বিপদে ফেলে দিতে পারেন। তবে জোকোভিচও কিন্তু নাদালকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটবেন। তাই আমার তো মনে হয় জোকোভিচ তিন বছর পরে উইম্বলডনের ফাইনালেই শুধু প্রত্যাবর্তন করলেন না, চলে এলেন বিশ্বসেরার সিংহাসনে
ফেরার দৌড়েও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন