পাকিস্তানকে এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ হারিয়ে উঠে অবশ্যই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মেজাজ খুশ আর পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনিসের রুদ্রমূর্তি।
ঠিক উল্টো।
ওয়াকারের অধীনে পরের পর ম্যাচ ভারতের কাছে হেরে চলেছে পাকিস্তান। অথচ তাঁকে এতটুকু ভেঙে পড়া দেখাচ্ছে না। বললেন, ‘‘আমরা ক্রমশ ইমপ্রুভ করে চলেছি। বোলিংয়ে ওই জায়গাটায় পৌঁছে গিয়েছি যেখানে যেতে চাইছি। আমাদের ব্যাটিংটা শুধু ভাল করতে হবে। আরও ৩০/৪০ রান থাকলে আজই ম্যাচ বেরিয়ে যেত।’’
ধোনি বরঞ্চ নানা কিছু নিয়ে বিরক্ত। হিচককের ছবির মতো একটা রোমহর্ষক ম্যাচ জিতে উঠেও প্রশান্তির কোনও কারণ দেখছেন না। একটা বিরক্তির কারণ পিচ। বললেন, ‘‘লোকে তো টি-টোয়েন্টিতে চার-ছয় দেখতে আসে। একটা কঠিন পিচও যদি কেউ দেয় সে তো অন্তত ১৩০ রান করতে দেবে। এটা কী? ভেবেছিলাম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আমরা প্র্যাকটিস সারব। এই পিচে কী প্র্যাকটিস হবে?’’
বিরক্তি দুই, আম্পায়ারিং নিয়ে। আজকের ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়ে রেট করতে বললে ধোনি প্রথমে বললেন, ‘‘কী নমুনা আপনারা দেখেছেন। আমি আর কী বলব।’’ তার পরই বললেন, ‘‘আমাকে এখন মুখ খুলিয়ে কী চাইছেন টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ থেকে আমি বাইরে চলে যাই?’’ আম্পায়ারিং নিয়ে এ দিন তাঁর উষ্মার বড় কারণ ইনিংসের শুরুর দিকে নেহরার বলে তাঁর ধরা খুররাম মনজুরের ক্যাচ নাকচ হয়ে যাওয়া। টিভি রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে ওটা পরিষ্কার আউট। ওভার শেষে ধোনি দৃশ্যত অসন্তুষ্ট ভাবেই আম্পায়ারকে বলেন, ওটা কী করে নটআউট দিলেন?
শোনা যাচ্ছে আম্পায়ারের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন স্টাম্প মাইক্রোফোনে পুরো ধরা পড়ে ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো-কে জানানো হয়েছে। ধোনি বলছিলেন, ‘‘এটাও অদ্ভুত। অর্ধেক সময় শুনি নাকি কিছুই ধরা পড়ছে না। অথচ আমি কথা বললেই শোনা যায় ঠিক মাইক ধরে ফেলেছে। এটা কী করে সম্ভব? হয় মাইক্রোফোনে কিছুই ধরা পড়বে না। বা সব পড়বে। বেছে বেছে আমার কথাই উঠবে কেন?’’ বিরক্ত ধোনি আরও বলেন, ‘‘আম্পায়াররা এক কানে ইয়ারপিস পরেন কেন? দু’টো কানই খোলা রাখা উচিত। ওই জন্য অনেক আওয়াজ ওঁদের মিস হয়ে যায়। টিভি আম্পায়ারের সঙ্গে কনসাল্ট করার সময় পরে নিলেই তো হয়।’’
ম্যাচ প্রসঙ্গে ভারত অধিনায়কের মূল্যায়ন, এই উইকেটে থ্রি কোয়ার্টার লেংথের সামান্য আগে বল রাখলে ব্যাটসম্যান সমস্যায় পড়তে বাধ্য। কারণ কোনওটা লাফাচ্ছে। কোনওটা সিম করছে। বাঁক নিচ্ছে। তাঁরা আন্দাজ করেছিলেন ৮৩ তাড়া করা মোটেও সহজ হবে না। তবে আমেরের চার ওভার খেলে দিলে ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। বাকি পেসাররা ওই জায়গায় রাখতে পারবে না। কোহলির ইনিংসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেও তাঁকে আধুনিক ক্রিকেটের এক নম্বর বা সচিনের চেয়ে চাপের মুখে বেশি ম্যাচ জিতিয়েছেন, এ সব বলতে চান না ধোনি। বলেন, ‘‘আমি তুলনায় বিশ্বাস করি না। কোহলি এখনকার ক্রিকেটে সেরাদের একজন।’’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর আমলে চরম আধিপত্য বিস্তারের রেসিপি কী? আগে তো ঠিক উল্টো ছিল যে চাপ মানেই পাকিস্তান জিতবে?
ধোনি বললেন, ‘‘এটা বলতে পারলে খুশি হতাম যে আমার ক্যাপ্টেন্সিতেই এটা ঘটছে। আমার কৃতিত্বে। আসলে তা নয়। আশি-নব্বই দশকের পাকিস্তান টিমটা অনেক ভাল ছিল। রিভার্স সুইং অনেক ভাল করাত ওদের পেসাররা। তেমনই ব্যাটসম্যান ছিল। অলরাউন্ড সেই টিম ওদের আর নেই। আর আমরা অনেক গুছিয়েছি। আমরা এখন অনেক আক্রমণাত্মক আর গোছানো টিম। এই আমলে তাই আমাদের হারানো সহজ নয়।’’