পেনাল্টিতে গোল করে শীর্ষে নিয়ে গেলেন দলকে

সনিদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আইজল, বলছেন ওডাফা

এ যেন ‘জলসাঘর’ সিনেমার জমিদার বিশ্বম্ভর রায়! যার সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ব্যবধান অনেকটাই। কিন্তু তাঁর মেজাজটাই আসল রাজা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১৩
Share:

হতাশা: বারাসতে গোল ফস্কে ওডাফার বিরক্তি। ছবি সুদীপ্ত ভৌমিক

এ যেন ‘জলসাঘর’ সিনেমার জমিদার বিশ্বম্ভর রায়! যার সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ব্যবধান অনেকটাই। কিন্তু তাঁর মেজাজটাই আসল রাজা!

Advertisement

বারাসতের মাঠে সোমবার দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগের ম্যাচে ওডাফা ওকোলিকে খেলতে দেখে সে কথাই মনে হতে পারে। বছর চারেক আগেও তিনি ছিলেন মোহনবাগান জনতার হৃদপিণ্ড। ‘ওডাফা-ওডাফা’ চিৎকারে কেঁপে উঠত যুবভারতী কিংবা বারাসত। সেই ওডাফা ওকোলি সাদার্ন সমিতির জার্সি গায়ে খেলছেন মাত্র জনা পঞ্চাশেক দর্শকের সামনে! সাদার্ন সমিতির কর্তারা প্রায়ই শুনছেন তাঁর আক্ষেপ, ‘‘গোল পাচ্ছি না বলে রাতে ঘুম আসছে না।’’

সেই পেটানো চেহারার বদলে শরীরে জমেছে মেদ। ফিটনেসেও কমতি! তাই এক ঘণ্টার বেশি এ দিন তাঁকে মাঠে রাখার ভরসা পাননি সাদার্ন সমিতির কোচ হেমন্ত ডোরা। দিল্লি ইউনাইটেড ক্লাবের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বল ধরে বিপক্ষ স্টপারকে কভারে রেখে বক্সে ঢুকেও নিশ্চিত গোল মিস করেছিলেন। মাঠেই হতাশা দেখাতে গিয়ে দু হাত মুঠো করে গলা ফাটিয়ে নিজের নাম করে তাঁর চিৎকার, ‘‘ওডাফা-আ-আ, ওডাফা-আ-আ।’’

Advertisement

আত্মবিশ্বাসও আগের চেয়ে কমেছে। আগে যে ওডাফা বলে বলে পেনাল্টি থেকে গোল করতেন, সেই তিনিই এ দিন পেনাল্টি পেয়ে রেফারি বাঁশি বাজানোর আগে ফাঁকা গোলে বল ঠেলে বাড়িয়ে নিলেন মনোবল। দিলেন মহড়া। তার পরের মুহূর্তেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ভিকট্রি সাইন দেখান ।

আরও পড়ুন: সন্ধ্যায় পদত্যাগ করতে চলেছেন, বুঝতে দেননি সকালেও

ম্যাচ শেষে অবশ্য বোঝা যায় ওডাফা আছেন ওডাফাতেই। গোল মিসের কথা তুলতেই বলেন, ‘‘কী রকম বলটা নিয়ে গেলাম বলুন তো! আগের মতো না? ওডাফা ইজ ওডাফা।’’ পরক্ষণেই বলেন, ‘‘গোল মিস করেছি। তা মানছি। কিন্তু সঠিক জায়গাতে তো পৌঁছচ্ছি। আমি এখন পুরো ফিট। না হলে এই গরমে কৃত্রিম মাঠে খেলতে পারতাম! কামব্যাক-টা কী রকম হচ্ছে বলুন।’’

ময়দানের ‘কিংগ কোবরা’-কে মনে করিয়ে দিতে হয়, সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে তাঁর বীরপুজো পাওয়ার দিনগুলোর কথা। যা শুনেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ভারতীয় ফুটবলে অন্যতম সফল নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারের। বলেন, ‘‘পাস্ট ইজ পাস্ট। মোহনবাগান নিয়ে কোনও কথা নয়। কে বলে আমার খেলা দেখতে লোক আসেনি?’’ গ্যালারি দেখিয়ে ফের বলতে শুরু করেন, ‘‘ওই তো ওরা এসেছে। আপনিও তো চলে এসেছেন। আমি সাদার্নকে আই লিগের মূলপর্বে তুলবই। তার জন্য দু’বেলা প্র্যাকটিস করছি। সাদার্নকে এই সাফল্য দিতে পারলে দেখবেন সবাই চলে এসেছে।’’

এ বার প্রসঙ্গ পাল্টে ওডাফা ঢুকে পড়েন নিজের দলের কথা বলতে। ‘‘আজ দিল্লির টিমটাকে আমার গোলে হারিয়ে শীর্ষে চলে গেলাম। তিন ম্যাচে দু’টো জয়, একটা ড্র। আমার গোল এখনও পর্যন্ত দু’টো।’’

যে ক্লাব একদা তাঁকে রেকর্ড দু’কোটি টাকায় সই করিয়েছিল সেই ক্লাবের ট্রফি-খরা তাঁর সময় কাটেনি। তিনি মোহনবাগান থেকে বিদায় নিতেই সেই মোহনবাগানে আই লিগ, ফেড কাপ। এ বারেও তাঁর পুরনো ক্লাব আই লিগ জয়ের সম্ভাব্য দাবিদার। শনিবার আইজলকে মিজোরামে গিয়ে হারালেই ফের আই

লিগ ঢুকবে মোহনবাগানে। ওডাফার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রথমে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। ফের ছুটে যায় প্রশ্ন, শনিবার মোহনবাগান-আইজল ম্যাচ টিভিতে দেখবেন? প্রীতম কোটালদের প্রাক্তন সতীর্থ প্রথমে বললেন, ‘‘আমি আই লিগ দেখি না।’’ অনেক চাপাচাপির পর বলে গেলেন, ‘‘আইজল-ই ফেভারিট। ওরা নিজেদের সমর্থকদের সামনে খেলবে। খুব সহজ ম্যাচ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন