নতুন ঐতিহ্যের সূচনা মিলিয়ে দিল প্রাক্তন ও বর্তমানকে

পাঁচ জনের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজতে বসলে চট করে উত্তরটা পাওয়া কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। যদি না ইডেন টেস্টের যাবতীয় নির্ঘণ্ট আপনার হাতে থাকে। কারণ আর কিছুই নয়, দেবীপক্ষের টেস্ট মিলিয়ে দিচ্ছে যুযুধান দু’দেশের পাঁচ মহাতারকাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

মধ্যমণি কপিল দেব। তাঁর হাতেই প্রথম বার বাজল ‘ইডেন বেল’। ছবি: উৎপল সরকার।

কপিল দেব।

Advertisement

স্টিভন ফ্লেমিং।

বীরেন্দ্র সহবাগ।

Advertisement

বিরাট কোহালি।

অনিল কুম্বলে।

পাঁচ জনের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজতে বসলে চট করে উত্তরটা পাওয়া কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। যদি না ইডেন টেস্টের যাবতীয় নির্ঘণ্ট আপনার হাতে থাকে।

কারণ আর কিছুই নয়, দেবীপক্ষের টেস্ট মিলিয়ে দিচ্ছে যুযুধান দু’দেশের পাঁচ মহাতারকাকে। ইডেনে নতুন ঐতিহ্য স্থাপনের সাক্ষী শুধু নয়, কান্ডারি হয়ে থাকতে চলেছেন এই পাঁচ। মহালয়ার দিন সেই ভূমিকায় ছিলেন কপিল দেব। শনিবার থেকে টেস্টের বাকি চার দিন একে একে থাকবেন বাকি চার। পাকাপাকি ভাবে জুড়ে যাবেন ইডেন ইতিহাসের সঙ্গে।

সৌজন্যে, ইডেন বেল।

শুক্রবার মুক্তি পাওয়া বায়োপিক ‘এম এস ধোনি’র বক্স অফিস ভাগ্য কতটা ঝকঝকে, চূড়ান্ত জানতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আরও কয়েকটা দিন। কিন্তু একই দিনে ‘মুক্তি’ পাওয়া ইডেন বেল যে প্রথম শো-তেই সুপারহিট, সেটা এখনই লিখে ফেলা যায়। সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে কপিল দেব যখন ঘণ্টা বাজিয়ে দিনের খেলা শুরুর জানান দিচ্ছেন, ততক্ষণে ইডেনের হাওয়ায় উৎসবের গন্ধ। ঢাক বাজছে। একটু আগে জনগণমনের অনুরণন ইডেন গ্যালারিতে। এ সবের মধ্যে কপিল ঘণ্টা বাজাচ্ছেন আর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত বন্দি হচ্ছে মোবাইলে, ক্যামেরায় আর সর্বোপরি দর্শকের মননে।

না হলে গোটা দিন কেন সিএবি প্রেসিডেন্টের দিকে অভিনন্দনের হাত এগিয়ে আসবে? দেশের অন্য কোনও ক্রিকেটমাঠের অভিভাবক যা ভেবে উঠতে পারেননি, কেন সৌরভের সেই অভিনব চিন্তার প্রশংসা হবে বারবার? শুধু সিএবি কর্তা বা সাধারণ দর্শক নন। ঐতিহ্য স্থাপনের এই পদক্ষেপে এতটাই অভিভূত কপিলও যে, শুধু ইডেন বেল উদ্বোধন করতেই শহরে উড়ে এসেছিলেন তিনি। সিরিজে তাঁর ধারাভাষ্য দেওয়ার কথা ছিল। সেটা পরে বাতিল হয়ে গেলেও কলকাতায় এসেছিলেন কপিল। ইডেন-ঘণ্টার উদ্বোধন করবেন বলে। ইডেনে বিশেষ টক শো-এ অংশ নেবেন বলে।

ইডেন-ঘণ্টা যদি নতুন ইতিহাসের সূচক হয়, তা হলে প্রথম দিনের এই টক শো মিলিয়ে দিল ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন এবং বর্তমানকে। ক্লাবহাউস লাগোয়া ব্লকের সামনে নীল-সাদা চাঁদোয়ার তলায় আমদানি করল একরাশ নস্ট্যালজিয়া। যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে কপিল দেবদের বিশ্বজয় দেখেছিলেন, তাঁদের জন্য। যে প্রজন্মের ক্রিকেট-হাতেখড়ি হয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-বীরেন্দ্র সহবাগ-অনিল কুম্বলের যুগে, তাঁদের জন্যেও।

কপিলকে নিয়েই টক শো’য় মাতলেন কুম্বলে, সৌরভ, সহবাগ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

সৌরভ হাসতে হাসতে বলছিলেন, কুম্বলে বল করা মানে টিমের সবাইকে আউটের অ্যাপিল করতে হবেই হবে। কপিল বলছিলেন, দক্ষিণী নম্রতা মাঠের বাইরে রেখে খেলতে নামতেন বিরাট কোহালিদের কোচ। তাঁর বলে বাউন্ডারি ফসকালে কুম্বলে যে কতটা ক্ষুব্ধ হতেন, অনুমান করার দরকার পড়ত না। পুরো ক্ষোভটা ভেসে উঠত তাঁর মুখাবয়বে। সব শুনে কুম্বলের জবাব, ‘‘আমি বিরাটকে বলে দিয়েছি, ভাই তোমরা ভুলভাল কিছু করলেও আমি ড্রেসিংরুম থেকে তোমাদের উপর রাগ দেখাব না। এই টিমের বস্ তুমিই!’’

একটু পরে সহবাগকে জিজ্ঞেস করা হল, তাঁদের টিমে সবচেয়ে অগোছাল কে ছিলেন? পাশে বসা সৌরভের দিকে ইশারা করে সহবাগ বলতে শুরু করেছিলেন, সফর শেষে কী ভাবে তিনি বা যুবরাজ ‘ডিউটি’ পেতেন সৌরভের সুটকেস গুছিয়ে দেওয়ার। কথা শেষ করতে না করতে সিএবি প্রেসিডেন্ট সজোরে অস্বীকার করে উঠলেন, ‘‘এটা তো এই টেস্ট ম্যাচের সবচেয়ে বড় মিথ্যে!’’

তার আগে সৌরভ বলে দিয়েছেন, টেস্ট জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত ঐতিহাসিক ইডেন ২০০১। ‘‘ওই টেস্টটায় কুম্বলে ছিল না। শ্রীনাথ ছিল না। তার পরেও ওই অস্ট্রেলিয়া টিমকে হারানো— জাস্ট অবিশ্বাস্য।’’ কুম্বলে আর সহবাগ তুলে এনেছেন ভারতীয় টেস্ট ইতিহাসের নানান মণিমাণিক্য। হেডিংলে থেকে ব্রিসবেন, সিডনি থেকে মুলতান।

কয়েক যুগ পরে যদি ফের এ রকম ক্রিকেট আড্ডা বসে, তা হলে হয়তো সেখানে উঠে আসবে ইডেনের চলতি টেস্ট ম্যাচটাও। ক্রিকেটীয় কারণে কি না, সেটা বলার সময় আসেনি। কিন্তু ইতিমধ্যেই আবহের বিচারে টেস্টটা ব্যতিক্রমী চেহারা নিয়েছে। প্রথম দিন খেলা শুরুর আগে ইডেনের গ্যালারিতে দর্শক-খরা দেখা যায়, সেখানে দুপুর গড়াতে না গড়াতে দর্শকসংখ্যা ছাপিয়ে গেল ষোলো হাজার।

ইডেনের ক্রিকেট-পাগলামির বিচারে সংখ্যাটা কিছুই নয়। কিন্তু দেবীপক্ষের শহরে ক্রিকেট-পুণ্যার্থীর এমন সমাগমকে ব্যতিক্রমী ছাড়া কী বলা যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন